২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মন্ত্রিসভার পর এবার চমক থাকছে সংসদেও

- ফাইল ছবি

মন্ত্রিসভার চমকের পর এবার জাতীয় সংসদেও চমক আসছে। টানা তৃতীয়বারের মতো সরকারে এসে মন্ত্রিসভায় গঠনে চমক দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে দলের অনেক সিনিয়র প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ঠাই হয়নি। তাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নবীন, তরুণ এবং নতুনদের জায়গা করে দিয়েছেন।

মন্ত্রিসভার চমকের এই রেশ জাতীয় সংসদেও পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীই আবারো থাকছেন। এমন আভাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই দিয়েছেন। তবে ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপ-নেতা, চিফ হুইপ, হুইপ পদে কে আসছেন এ নিয়ে ভাবনার শেষ নেই শাসকদল আওয়ামী লীগে। এমনকি সংসদীয় কমিটিগুলোর সভাপতি পদে কারা থাকছেন এই বিষয়টিও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

যাদের মন্ত্রিসভায় ঠাই হয়নি এমন নেতারা খড়কুটো আঁকড়ে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন শেষ বেলায় ‘যা পাই তাতেই সন্তুষ্ট’ এমন মনোভাব তাদের পেয়ে বসেছে বলে গুঞ্জন চলছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, মন্ত্রিসভা গঠনে যেমন চমক দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপ-নেতা, চিফ হুইপ, হুইপ পদে নিয়োগ দিয়েও তিনি চমক দেখাতে পারেন সংসদে। দশম জাতীয় সংসদের উপনেতা হচ্ছেন না আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এ পদে আসছে নতুন মুখ। দলের তিন প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর মধ্য থেকে যে কাউকে সংসদ উপনেতা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া দশম জাতীয় সংসদে বেশ সফল ছিলেন। তবুও এ পদে আসতে পারেন নতুন কেউ এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তবে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার জায়গায় সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু অথবা অধ্যাপক আলী আশরাফকেও দেখা যেতে পারে।

তবে এবার ডেপুটি স্পীকারের পদে একাধিক হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিরাধী দল জাতীয় পার্টি থেকেও একজন ডেপুটি স্পীকার নেয়া হতে পারে। কারণ এ ধরণের একটি ধারণা আগেও আলোচনায় এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদও তার দল থেকে একজন ডেপুটি স্পীকার নেয়ার দাবিও তুলেছেন।

এছাড়া পরিবর্তন আসবে সরকারদলীয় চিফ হুইপের পদেও। দশম সংসদে চিফ হুইপ ছিলেন আ স ম ফিরোজ। একাদশ জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় চিফ হুইপ হতে পারেন মাদারীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আতিউর রহমান আতিক, গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে আলোচনায় লিটন চৌধুরীর নাম অনেকটা এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

সংসদের প্রথম বৈঠকের আগেই চিফ হুইপ ও অন্যান্য হুইপ নিয়োগ হবে এমনটি জানিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংসদ নেতার প্রস্তাব অনুসারে চিফ ও হুইপ পদে নিয়োগ দেয়া হবে। এরপর সরকারি ও বিরোধী দলের দুই প্রধান হুইপের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদের অধিবেশন কক্ষের আসন বণ্টনসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।

সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদে পূর্ণ মন্ত্রী পদমর্যাদার চিফ হুইপ এবং প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার হুইপ পদে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এক্ষেত্রে স্পিকারের মাধ্যমে সংসদ নেতার দেয়া তালিকাই রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেন। পরে সংসদ সচিবালয় থেকে এর প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

আর স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা সরাসরি ভোট দিয়ে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বলেন, সংসদীয় দলের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা হিসেবে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত করেছেন। সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতাই উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপ নির্বাচিত করবেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে নির্বাচন করে ২৮৮ টি আসন পায়। আওয়ামী লীগ একাই জয়ী হয় ২৫৮ টি আসনে। ২২টি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধীদল হয় জাতীয় পার্টি। ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর ৩ জানুয়ারি শপথ নেন তারা।

ওই দিনই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে সংসদ নেতা নির্বাচিত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর গত ৭ জানুয়ারি নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবারের মন্ত্রিসভায় দলের অনেক প্রভাবশালী সিনিয়র নেতার যায়গা না দিয়ে চমক দেন তিনি।

এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভায় নতুনদের জায়গা দিয়ে চমক দিয়েছিলেন। ওই সময় দলের সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পেয়েই খুশী থাকতে হয়। এমনকি আওয়ামী লীগের শরীক দুই দলের শীর্ষ নেতাকেও মন্ত্রিসভায় জায়গা না দিয়ে তখন সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ দেন তিনি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এবারও মন্ত্রিসভায় যায়গা না পাওয়া আওয়ামী লীগের এবং ১৪ দলীয় জোটের প্রভাবশালী নেতারা তাদের ‘শেষ ভরসা’ হিসেবে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদটিকেই মনে করছেন। এ জন্য অনেকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেনদরবারও শুরু করেছেন। তবে ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপ নির্বাচিত হবে, তাই এসব পদে কে আসছেন এ নিয়েই দলের নেতাদের আপাতত আগ্রহ বেশি।

ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা জানান, সংসদের কয়েকটি কমিটির সভাপতি নির্ধারিত থাকেন। পদাধিকার বলে স্পিকার সভাপতি থাকেন সেগুলোতে। আর মন্ত্রণালয় সম্পর্কিতসহ অন্যান্য সংসদীয় কমিটির সভাপতি সংসদ নেতা ঠিক করেন। এক্ষেত্রে কে বা কারা হবেন- তা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ঠিক করবেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ছায়া সরকার হিসেবে পরিচিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্বে কারা আসছে তা নিয়েও চলছে আলোচনা। জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী দশম সংসদে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকারীদের প্রাধান্য দেয়া হবে সংসদীয় কমিটিতে। সরকারের কাজের গতি বাড়াতে এসব মন্ত্রী যেসব মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাদের সেসব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করার সম্ভাবনা বেশি। মন্ত্রিসভার বাইরে থাকা শরিক দলের সদস্যরাও এক বা একাধিক সভাপতি পদ পেতে পারেন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকেও বেশ কয়েকজন সদস্য সভাপতি থাকতে পারেন। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বেশিরভাগ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement