২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিনব প্রতারণা, কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

-

তারা কখনো জিনের বাদশাহ বা কখনো দয়াল বাবা সেজে প্রতারণা করে থাকে। সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। এমনই প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার নাম জুবায়ের আহমেদ সুমন।

গতকাল সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি শাহআলম জানান, প্রতিনিয়ত প্রতারণার ঘটনা ঘটাচ্ছে কথিত জিনের বাদশাহ বা দয়াল বাবারা। প্রতারণার জন্য তারা গণমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। আর এসব বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের বিশ্বাস জন্ম নেয়। আর এ বিশ্বাসকে পুঁজি করেই প্রতারণায় মেতে ওঠে প্রতারক এই চক্র।

ডিআইজি শাহআলম বলেন, কেবল সহজ সরল সাধারণ মানুষই নয়। তাদের প্রতারণার শিকার অনেক শিতি লোকজনও। রাজধানীর এক শিক্ষিত গৃহবধূ প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকার হারিয়েছেন। ওই টাকা তিনি অনেক কষ্টে সংগ্রহ করেছিলেন। প্রেমিকার সাথে মনোমালিন্য দূর করতে ও লটারি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক প্রবাসীর কাছ থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুই ভাগে কাজ করছে। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে টিভি জিন। অন্যটি হচ্ছে মোবাইল জিন। টিভি জিনরা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করে। ওই বিজ্ঞাপনে দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করে সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হন। আর মোবাইল জিন চক্রের সদস্যরা সাধারণ লোকজনকে হঠাৎ ফোন করে জিনের বাদশাহ পরিচয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে। 

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা বিভিন্ন সময়ে জিনের বাদশাহ, দয়াল বাবা সেজে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেবে বলে বিজ্ঞাপন তৈরি করে। বিজ্ঞাপনে লটারি, গুপ্তধন, জটিল রোগ থেকে মুক্তি, পাওনা টাকা আদায়, দাম্পত্য কলহ ও ভালোবাসার মানুষকে বশে আনাসহ সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়। বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় বিভিন্ন হুজুরের ছবি ব্যবহার করা হয়। 

পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, সোহেল মোল্লা নামের এক প্রবাসী এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা হারিয়েছেন। টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে তিনি ভালোবাসার মানুষকে বশে আনতে ‘হুজুরের’ সাথে যোগাযোগ করেন। পরে তাকে লটারি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার, ব্যাংক ও বিভিন্ন মাধ্যমে ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারিত সোহেল মোল্লা গত ২২ জুলাই ভোলার বোরহান উদ্দিন থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে।

গতকাল সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত ইন্দ্রপুরী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামি ও প্রতারক চক্রের মূল হোতা জুবায়ের আহমেদ সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে তার তিন সহযোগী জাফর ইকবাল কাজল, সাগর ও ছমিরকে গ্রেফতার করা হয়। এই তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে মূল হোতা হিসেবে সুমনের নাম আসে। সুমন বোরহান উদ্দিন থানার একটি মামলার পাঁচ বছর সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। একই থানায় তার বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement