২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সোনারগাঁয়ে শিল্প সংস্কৃতির মেলা

সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী শুরু হয়েছে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব -

সোনারগাঁ প্রাচীন বাংলার প্রথম রাজধানী। প্রাচীন শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক দিয়ে সোনারগাঁ খুবই বিখ্যাত। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁ হয়ে উঠেছিল সভ্যতার এক নগরী। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সোনারগাঁয়ের প্রাচীন নাম ছিল সুবর্ণগ্রাম। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল এই সোনারগাঁতেই। ঈশা খাঁর রাজধানী হিসেবেই সোনারগাঁ সবচেয়ে খ্যাতি লাভ করে। পরে আবহমান বাংলার লোক সাংস্কৃতিক ধারাকে বিকশিত করতে ১৯৭৫ সালরে ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় লোকজ ও কারুশিল্প মেলার। সোনারগাঁয়ের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বাংলাদেশ লোককারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে প্রতি বছরের মতো এবারো ১৪ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী শুরু হয়েছে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ ও সংস্কৃতির ব্যবহার্য জিনিসপত্র যুগ যুগ টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে এসব শিল্পের সাথে পরিচয় করানোর জন্য ফাউন্ডেশনের এ মেলা। আমাদের দেশের প্রাচীন গ্রামীণ মেলাগুলোর মধ্যে সোনারগাঁয়ের লোককারুশিল্প মেলা অন্যতম। মঙ্গলবার বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে সোনার তরী মঞ্চে মাসব্যাপী এ মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এ বছর মেলায় বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে হস্ত ও কারুশিল্পীরা অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়াও মেলায় ঐতিহ্য রক্ষায় নানা প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল দিয়ে বিক্রি করছেন শখের সব জিনিসপত্র। এবার মেলায় এসেছে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলার শিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি ও বায়োস্কোপ, চট্টগ্রামের হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের জামদানি, হাতি, ঘোড়া, পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, হাতপাখা, মুন্সীগঞ্জের শীতল পাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা শিল্প, সোনারগাঁয়ের পাটের কারুশিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, মুন্সীগঞ্জের পটচিত্র, ঢাকার কাগজের হস্তশিল্প। প্রতি বছর সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্পের মেলা থেকে শখের সব জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য হাজার হাজার লোকজন ভিড় করেন এই মেলায়। ঢাকার অদূরে হওয়ায় রাজধানী থেকে শৌখিন মানুষেরা মেলা থেকে ঘর সাজানো থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে থাকেন। বিলুপ্তপ্রায় জিনিসপত্রের সাথে পরিচয় ঘটানোর জন্য মেলায় আসেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা গ্রামীণ মানুষের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে এ মেলায় আসেন। মেলার ভেতরেই রয়েছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর।
মেলায় বিভিন্ন কারুশিল্পীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কেবল বিক্রির উদ্দেশ্যেই নয়, মাটির ভালোবাসা ও বাপ-দাদার পেশার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য মেলায় ঘুরে থাকেন তারা। বিক্রির পাশাপাশি প্রতিটি স্টলে ঘুরে শিল্প সম্পর্কে দর্শনার্থীরা এ বিষয়ে জানার আগ্রহ অনেক বলে জানান তারা। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ মেলার আয়োজন করে থাকে। শিল্পীরা আরো বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদেশী সব পণ্য। কিন্তু আমাদের শিল্পকে টিকিয়ে রাখার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে একসময় চিরতরে হারিয়ে যাবে এ শিল্প। রাজশাহীর শখের হাঁড়ির মাটির তৈজসপত্র নিয়ে প্রতিবারের মতো মেলায় এসেছেন সুশান্ত কুমার পাল। তিনি জানান, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে যত মেলা হয় তার মধ্যে সোনারগাঁয়ের মেলার আয়োজন অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে করা হয়ে থাকে। প্রথম দিকে শীতের তীব্রতার কারণে দর্শনার্থী কম হলেও ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে; পাশাপাশি বিক্রিও বাড়ে।
কাঠখোদাই শিল্পী রফিকুল ইসলাম কাঠের তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র নিয়ে মেলায় এসেছেন। কাঠের তৈরি সব ধরনের তৈজসপত্র পাওয়া যায়। স্টলে বসে বসে যন্ত্রপাতি দিয়ে কাঠের ওপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নকশার কাজ দেখার জন্য ভিড় পড়ে যায় স্টলে।
এ ছাড়াও প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় সোনারতরী মঞ্চে নাটক, লোক কাহিনীর যাত্রাপালা, বাউল গান, পালা গান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালনগীতি, মাইজভাণ্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি আর অন্যান্য শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, দোকখেলা, ঘুড়ি উড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনীর আয়োজন থাকে। সোনারগাঁয়ের লোককারু শিল্প মেলা থেকে আপনি ঘুরে আসতে পারেন। এতে নতুন করে পরিচয় হবে আমাদের বাংলার শিল্প ও সংস্কৃৃতির সাথে। মেলা প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল ৯টা রাত ৮টা পর্যন্ত।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা ভাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল