১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শরীফ ভাইকে মনে পড়ে

-

মৃত্যু তো অনিবার্য বিষয়। তার পরও কিছু কিছু মৃত্যু আছে, যা সহজে মেনে নেয়া যায় না। অবিশ্বাস্য মনে হয়। বাস্তবতার কাছে তা হার মানতে চায় না। গত সোমবার সকালে ‘ডা: শরীফ সপরিবারে নিহত’ এমন একটি মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কষ্টে শোকে কোনোভাবেই আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছিলাম না। বারবার মনে হচ্ছিল যেন ভুল শুনেছি, এটা হতে পারে না।
প্রিয় শরীফ ভাই, আপনাকে নিয়ে আমার বিশেষ কোনো স্মৃতি নেই। তবু আপনার এভাবে চলে যাওয়ার সাক্ষী হিসেবে কিছু না লিখার অপরাধবোধ নিজেকে কুঁঁড়ে খাচ্ছে। আপনাকে যা দেখেছি তাতে আপনি একজন ক্ষণজন্মা দানবীর। মানুষের অসহায়ত্বের কথা শুনে কাউকে খালি হাতে ফিরিয়েছেন এমন কোনো নজির হয়তো পাওয়া যাবে না। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে মানুষ আপনাকে ডাক্তার বলত। খুব কম সময়ে সফল ব্যবসায়ী হয়ে আপনি ফরিদপুর জেলার অনেক জায়গায় মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা নির্মাণকাজে সাহায্য করেছেন। জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় বিধবার মেয়ের বিয়ে থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে ছিলেন। ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে আপনি যত তাফসির মাহফিলে অর্থদাতা হিসেবে গেছেন, কোনো ওয়াজেন বক্তাও এত মাহফিলে দাওয়াত পায় না। মৃত্যুর আগের দিনেও আপনি শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।
আজ খুব মনে পড়ছে আপনার প্রিয়কন্যা তাবাসসুমের কথা। সে এখন জান্নাতের পাখি। সেদিন এই নিষ্পাপ মুখখানা ফেসবুক ওয়ালে দেখে বুকটা করে কেঁদে ওঠে। আদরের তাবাসসুম বাবার সাথে কক্সবাজার যাবে বলে কতই না সেজেগুজে বেড়িয়েছিল। প্রিয় বোন মা-বাবার সাথে সমুদ্র অবগাহনের কত স্বপ্নই না সে দেখেছিল। কিন্তু আমরা তো নতুনদের জন্য বাসযোগ্য করিনি, নিরাপদ সড়ক দিতে পারিনি।
প্রিয় শরীফ ভাই, তাবাসসুম মনে হয় আপনার কোলেই ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু ঘাতক বাস সমুদ্রস্নানের স্বপ্নের বদলে পিচঢালা সড়কের ওপর রক্তস্নান দৃশ্য তাকে দেখিয়েছে। এই করুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ও জান্নাতের মেহমান হয়েই থাক। প্রিয় ভাই, আপনার এই করুণ বিদায় কেউ মেনে নিতে পারেনি। জানাজার ময়দানে শত মানুষের কান্না যেন আপনার মা-বাবার শক্তি জুগিয়েছে। হয়তো শোক সইতে না পেরে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে আপনার সহযোদ্ধা সোলেমান মোলøা। শোক সইতে না পেরে অনেকের ‘অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর’ অবস্থা।
জাকির ভাই আমাকে কিছু বলতে গেলেই কেঁদে ফেলেন।
আপনার জন্য সহস্র মানুষ লিখেছে স্মৃতিচারণ। শত বেদনা কবিতার পঙ্ক্তি হয়ে ঝরে গেল। হাজারো মানুষের ভিড়ে এমন সজ্জন পাবো না। হাসিমুখে আর কথা হবে না। তবু কিছু বলার আকুতি থেকেই গেল, হোক তা দুনিয়ার ওপারের জীবনে। আলøাহ আপনাকে কবুল করুক, আমিন।
গত ৬ জানুয়ারি ফরিদপুরের মলিøকপুরে কক্সবাজার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজ পরিবারের চারজনসহ নিহত হন ডা: শরীফুল ইসলাম।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর


আরো সংবাদ



premium cement