২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রজাপতির বর্ণিল মেলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে প্রজাপতির মেলায় প্রজাপতি দেখছেন দর্শনার্থীরা -

প্রজাপতির বর্ণিল ডানায় উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ানোর মতো এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে! প্রকৃতিতে আজকাল এমন দৃশ্য সহসাই চোখে পড়ে না। গ্রামাঞ্চলে ঝোপজঙ্গলে এমন দৃশ্য চোখে পড়লেও ইট পাথরের শহরে প্রজাপতির দেখা পাওয়া কষ্টকর। তাই নতুন প্রজন্মের সাথে প্রজাপতির পরিচয় করিয়ে দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে ২০১০ সন থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে প্রজাপতির মেলা। এ মেলায় প্রজাপতি সম্পর্কে যেকোনো খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন আয়োজকরা; যে কারণে উৎসুক প্রজাপতিপ্রেমীরা প্রতি বছর প্রজাপতি সম্পর্কে জানতে দূর-দূরান্ত থেকে চলে আসে এ মেলায়।
উড়লে আকাশে প্রজাপতি প্রকৃতি পায় নতুন গতিÑ এ স্লোগানে ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে জহির রায়হান হলের সামনে দিনব্যাপী ১০তম প্রজাপতির মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল জব্বার হাওলাদার। উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল জব্বার বলেন, জীববৈচিত্র্যে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সচেতনতা ও প্রজাপতি সংরক্ষণে গণসচেতনা বাড়াতে দিন দিন এ মেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রাণিজগতের মধ্যে প্রজাপতি এক অনন্য সৃষ্টি। প্রজাপতির রঙিন পাখা দিয়ে যখন এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে তখন মানুষের মধ্যেও নানা রঙ ছড়ায়। তাই মানুষের মধ্যে প্রজাপতি নিয়ে কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জহির বায়হান হলের সামনে থেকে অনুষ্ঠানের অতিথি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। মেলায় দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা, কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র, জীবন্ত প্রজাপতির প্রদর্শনী, প্রজাপ্রতির আদলে ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা ও প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন্দ, কিউবেটর ব্যবস্থাপক মাতলুব আক্তার প্রমুখ।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিচিত্র ও মনোমুগ্ধকর প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর দৃশ্য। একসাথে শত শত প্রজাপতির চঞ্চল ওড়াউড়ি। প্রজাপতি যে শুধুই সৌন্দর্য ছড়াই তাই নয়, এরা পরাগায়নের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এ মেলা সব বয়সের মানুষের জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। এ ক্যাম্পাসকে প্রজাপতির আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। প্রকৃতি ভালো থাকলে প্রজাপতি ভালো থাকবে আর প্রজাপতি ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকব।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রায় ৬০০ প্রজাতির প্রজাপ্রতি রয়েছে, আমরা ৩০৫ প্রজাতির প্রজাপতি চিহ্নিত করেছি। পৃথিবীতে ১৬ গোত্রের প্রজাপ্রতি রয়েছে। আমাদের দেশে আছে ১০ গোত্রের, যা নিয়েই আমরা গবেষণা করছি। এসব প্রজাপতি সংরক্ষণে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। তাই এ মেলার আয়োজন। রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার থেকে আসা জামাল আহমেদ নামের এক দর্শনার্থী জানান, প্রতি বছর সময় নিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে এ মেলায় ছুটে আসি। আয়োজকরদের ব্যতিক্রমী আয়োজন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। এ ধরনের মেলা আমাদের দেশে দ্বিতীয়টি আর নেই যে কারণে একটু কষ্ট হলে আসি।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে সাঈদা ইসলাম জানান, প্রজাপতির মেলা থেকে শেখার আছে অনেক কিছু । বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মনের খোরাক জোগায় এ মেলা। প্রজাপতি নিয়ে শিশুদের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এ জন্য এ মেলা অনন্য দৃষ্টান্ত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বছরে অন্তত একবার প্রজাপতির মেলার আয়োজন করতে পারলে অনেকেই প্রজাপতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এ বছর মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে ৮০ থেকে ৮৫ প্রজাতির প্রজাপতি প্রদর্শিত যা দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামের ভেতর ও বাইরে অসংখ্য প্রজাপ্রতির আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রকৃতির এ অপরূপ দৃশ্য দেখতে ক্যাম্পাসে ভিড় করে হাজারো দর্শনার্থী। এ ছাড়া মেলায় অতিথিদের জন্য জালেঘেরা প্রজাপতি প্রদর্শিত হয়। মেলা থেকে প্রজাপতিবিষয়ক বই সংগ্রহ করে অনেকেই। ফুলের ওপর ভর করা এসব প্রজাপতি দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে যায় ক্যাম্পাসে। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ নানা রঙের প্রজাপতি রঙিন পাখা মেলে ওড়াউড়ি করে রঙ ছড়ায় চার পাশে। এসব প্রজাপতির রঙের জাদুতে মোহিত হয় দর্শনার্থীরা। দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর অবস্থিত প্রজাপতির বিভিন্ন পার্ক ঘুরে ঘুরে দেখে। প্রকৃতির সাথে প্রজাপতির যেন নিবিড় সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। প্রজাপতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ মেলার প্রবর্তক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। এ বছর প্রজাপতি গবেষণার বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ বাশারকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ এবং সবুজবাগ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অরুণাভ ব্রুনোকে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ইরান সমর্থিত যোদ্ধা নিহত জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ উত্তর গাজায় আবারো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ ধামরাইয়ে তাপদাহে জনজীবন কাহিল, ডায়রিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশী কেএনএফ সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ৭ স্থিতিশীল সরকার থাকায় দেশে উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল রাজশাহীর পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ শিশুর মৃত্যু দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক দুমকিতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সভাপতির নির্দেশে ক্লাস চালু

সকল