২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুনতাসিরের ক্যালিগ্রাফি

-

ক্যালিগ্রাফি ইংরেজি শব্দ। যার উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ক্যালি (সুন্দর) ও গ্রাফিয়া (লেখা) থেকে এসেছে। যার অর্থ সুন্দর লেখা। এই সুন্দর লেখা যেকোনো ভাষায়ই হতে পারে। শুধু যে আরবিতে হবে তা নয়। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, জাপানিজসহ বিভিন্ন ভাষার হতে পারে। ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি তার ঝোঁক। অসম্ভব সুন্দর হাতের লেখা। ক্যালেন্ডারে ক্যালিগ্রাফি তাকে খুব আকর্ষণ করত। টুকটাক মানুষের নাম লিখে দিতেন। সবাই তার লেখার ভূয়সী প্রশংসা করত। ২০১৭ সালের কথা। তিনি কালিগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেয়ার কথা ভাবলেন। কারণ, তত দিনে তার কালিগ্রাফির চাহিদা তৈরি হয়েছে অনেকখানি। তা ছাড়া এরই মধ্যে বাবা ও বড় বোনকে হারান তিনি। পরিবারের দায়িত্ব তখন তার কাঁধে চলে আসে। এখন তিনি পরিচিত জনপ্রিয় ক্যালিগ্রাফিক শিল্পী। তরুণ এই শিল্পীর নাম মুনতাসির হক মুন। কুরআনে হাফেজ। পড়াশোনা করছেন অর্থনীতি বিষয়ে। বাবা নেই। তিন ভাই আর দুই বোন।
ক্যালিগ্রাফির বিষয়ে মুনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবুও তিনি এত ভালো করলেন কিভাবে? মুন বলেন, ক্যালিগ্রাফি শেখা বা চর্চা সম্পূর্ণ নিজ থেকেই বলা যায়। দিনের পর দিন আমি লেগে থেকেছি। কিভাবে লেখাটা আরও উন্নত করা যায়, সেটা ভেবেছি। শুরুতে মুন ক্যালিগ্রাফার মাহবুব মুর্শিদের একটি ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিকসহ পাঁচটি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। এসব প্রদর্শনীতে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন বলে জানান।
মুনের মতে, ক্যালিগ্রাফিতে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। দেশ এই শিল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্্রা অর্জন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্যালিগ্রাফি বিদেশে রফতানি করারও সুযোগ রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোতে এগুলোর ভালো দাম পাওয়া যায়। তা ছাড়া আমার নিজস্ব কিছু কাজ ও অনেকেই দেশের বাইরে যাওয়ার সময় সাথে নিয়ে যান। ক্যালিগ্রাফিতে আরব বা ইসলামী চিন্তাধারার দেশগুলোই এগিয়ে। সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশ এগিয়ে আছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের মাতৃভাষা আরবি। সেখানকার লোকজন আরবি ক্যালিগ্রাফি খুব পছন্দ করে। তাই ক্যালিগ্রাফির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক ভালো বলে মুন মনে করেন। তার মতে, ফটোশপ ইলাস্ট্রেটরের কাজ ভালো জানলে, আরবি ধারণা থাকলে এটা খুবই ভালো সম্ভাবনা অর্থ উপার্জনের জন্য। পেশা বা ইনকাম সোর্স হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে। আউটসোর্সিং কাজ হিসেবে নেয়া যায়। ক্যালিগ্রাফিতে সাধারণত কুরআনের আয়াত বেশি লেখা হয়। অনেকে অবশ্য নামও লেখান বলে মুন জানান। মুনের একটি ফেসবুক পেজ আছে নামÑ গড়ড়হ ঈধষষরমৎধঢ়যু! যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ সড়ড়হপধষষরমৎধঢ়যু২০১৮/ ফেসবুকে ক্লায়েন্টরা যোগাযোগ করতে পারেন। আঁকার ক্ষেত্রে কম্পোজিশন কেমন হবে বা ডিজাইনটা কেমন হবে তার একটা গ্রাফ আগেই করে নেন তিনি। অনেক সময় ব্যাকগ্রাউন্ড বা কালারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের পছন্দ বিবেচনায় নিতে হয়। ক্যালিগ্রাফি একটি আর্ট বা শিল্প। যেখানে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে হয়। সাথে কালারিং ডিজাইন বা কম্পোজিশনের ব্যাপারগুলো তো আছেই। সার্বিক পরিশ্রমের বিবেচনায় বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির মূল্য খুব একটা ভালো নয়। মুন ৮০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তার কাজের পারিশ্রমিক নিয়েছেন বলে জানান। তার সাথে দু’জন সহকারী কাজ করেন। কুরআনের আয়াত, আয়াতুল কুরসি মানুষ বেশি ক্যালিগ্রাফি করে বলে মুন জানান। তার অন্যতম জনপ্রিয় কাজ হলো কার্জন হল ও সূরা ইয়াসিন, সূরা আর রাহমানের কালারফুল ক্যালিগ্রাফিসহ সূরা আলাক নিয়ে একটি থিমসহ ক্যালিগ্রাফি, আয়তুল কুরসি, সূরা ফাতিহা ক্যালিগ্রাফি ইত্যাদি। তবে সম্প্রতি কার্জন হল ও সূরা ইয়াসিন নিয়ে করা কাজটা সেরা বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া সূরা আর রাহমানের কালারফুল ক্যালিগ্রাফিসহ সূরা আলাক নিয়ে একটা থিমসহ ক্যালিগ্রাফি করেছেন তিনি। এগুলো ছাড়া আয়তুল কুরসি, সূরা ফাতিহা নিয়েও বেশ কিছু জনপ্রিয় কাজ রয়েছে তার। অনলাইনে কাজের অর্ডার নেয়া হয়। অর্ডার দিলে কিছু টাকা অগ্রিম দিতে হয়। এসব কারণে খানিকটা ঝক্কি ঝামেলা তো আছেই। সে রকমই একটা ঘটনা মুনের মুখে জানা গেল। মুন বলেন, একবার একজন আমার থেকে ক্যালিগ্রাফি নিয়েছিলেন অ্যাডভান্স কিছু টাকা দিয়ে। তিনি ক্যালিগ্রাফি নেয়ার পর আমার বাকি পাওনা আর দেননি। চার-পাঁচ মাস ঘুরিয়েছেন। তার ঠিকানায় গিয়েও সুরাহা মেলেনি। দেবেন দিচ্ছেন বলে শেষ দিকে চার-পাঁচ দিন ঘুরিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়েছি।
ঢাকার মধ্যে বা কাছাকাছি হলে কাজের ডেলিভারি মুন নিজেই করেন। নিজের কাজের প্রতি অসম্ভব যতœবান তিনি। নিজে ডেলিভারি করার কারণ হিসেবে বলেন, নিজে পণ্য পৌঁছে দেয়ায় অন্যরকম একটা অনুভূতি লাভ করি। ফিডব্যাকটা সাথে সাথে পাওয়া যায়। নিজেকে ফেরিওয়ালা বলতে আপত্তি নেই।
ক্যালিগ্রাফি শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব বেশি উন্নতি করতে পারেনি। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ এই শিল্প নিয়ে কাজ করছেন। পেশা হিসেবে নিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই হাতেগোনা। শখের বসে অনেকে করে থাকেন। আর ক্যালিগ্রাফিক শিল্পীদের বলার মতো কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি। বেশির ভাগ ক্যালিগ্রাফি যেহেতু আরবিতে হয়। সে কারণে মাদরাসায় ক্যালিগ্রাফির কোর্স চালু করা যেতে পারে। এতে ক্যালিগ্রাফি রফতানির সম্ভাবনা জোরালো হবে বলে মুনতাসির মুন মনে করেন। ক্যালিগ্রাফির প্রসার হলে দেশ লাভবান হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
রিজওয়ানকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্র্যাডম্যান বললেন আফ্রিদি গোবিন্দগঞ্জে ট্রাক্টরচাপায় নারী নিহত অভিযোগ করার পর ইনসুলিন ইঞ্জেকশন কেজরিওয়ালকে! হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা তালায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি পরিবারের মাঝে জামায়াতের সহায়তা প্রদান শেরপুরের মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট আবারো বৃষ্টির শঙ্কা দুবাইয়ে, চিন্তা বাড়াচ্ছে ইউরোপ সিদ্ধিরগঞ্জে চোর আখ্যা দিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা মানিকগঞ্জে অটোরিকশা-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে প্রকৌশলী নিহত ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী ছিলেন সমাজ বিপ্লবী

সকল