২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লাল রঙের ভালোবাসা!

-

ডিসেম্বর মাস। বিজয়ের মাস। শহরের ফুলের দোকানে ঢুকতেই সারি সারি লাল গোলাপ নজরে এলো। ফুলের দাম একটু চড়া। কারণ বিজয়ের মাসে ফুলের কদর আগের চেয়ে বেড়ে যায়। দোকানে কয়েকটা হলুদ গোলাপও দেখতে পেলাম। ভাবলাম লাল গোলাপ তো কমন, তাই হলুদ গোলাপই নিই। ফুল নিয়ে যখন গ্রামে ফিরে এলাম সূর্য ততক্ষণে ডুবুডুবু। অস্তমিত সূর্য পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়াচ্ছিল। আঁধার ঘনিয়ে আসার আগেই ভালো লাগার নাহিদাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে হবে। মেয়েটা বিজয়ের মাসের ছুটিতে আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। বেশিক্ষণ খুঁজতে হলো না। ভাগ্য বোধহয় এই প্রথম আমার দিকে ফিরে মুচকি হাসি দিলো। দু’কদম বাড়াতেই নাহিদা আমার সামনে পড়ে গেল। এদিক-ওদিক চেয়ে গোলাপটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। নাহিদা কিছুক্ষণ বিজ্ঞের মতো হলুদ গোলাপটার দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে প্রশ্ন করে বসল, ‘ফুল কেন?’
আমিও কম যাই না। অনেক কিছু হারানোর পর আমার বুকে এখন সাহস টগবগ করে। কোনো ভণিতা না করে সরাসরি বলে ফেললাম, ‘এই বিজয়ের মাসে আমি তোমাকে জয় করতে চাই!’
অতিরিক্ত আবেগে এ কথা বলে ফেলেছিলাম। আমার জন্য সেটাই কঠিন কিছু হয়ে দাঁড়াল। সে কিছুক্ষণ ভেবে আমাকে বলল, ‘কিন্তু দেশের জন্য বিজয় আনতে গিয়ে যে রক্ত ঝরেছিল সে রক্তের রঙ ছিল লাল! আমাদের জিতে নেয়া পতাকার মাঝের সূর্যটাও লাল! তবে ফুল হলুদ রঙের কেন? লাল ফুল নিয়ে আসেন তারপর চিন্তা করে দেখব!’
তার কথা শুনে আমি বিব্রত হয়ে গেলাম। তবে মনে একটা আশার আলো দেখতে পেলাম। তাই দেরি না করে সাঁঝের বেলায় আবার ছুটলাম শহরে ফুলের দোকানের উদ্দেশে। লাল রঙের গোলাপের জন্য। নাহিদার কথায় যুক্তি ছিল। আমাদের দেশের জন্য ঝরে যাওয়া লাল রক্ত খুবই মূল্যবান ছিল। শহীদের সে পবিত্র রক্তের কাছে আমার ভালোবাসা কিছুই নয়। তবুও নাহিদার দেশপ্রেম দেখে তার প্রতি আমার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যেতে লাগল। দ্রুত সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিচ্ছিলাম। যেতে যেতে ভয়ে ঘামছিলাম দোকান বন্ধ হয়ে গেল না কি না! অবশেষে পেয়েছিলাম লাল গোলাপ। ভালোবাসার লাল রঙের গোলাপ নিয়ে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। আমার লাল রঙের ভালোবাসার বিজয় হয়েছিল।
পূর্ব শিলুয়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement