১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দোষ

চারাগল্প
-

গত মাসে আমাদের পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছেন, তারা বেশ ধনী। ভদ্রলোকের নাম আতাউর রহমান। এক সময় প্রফেসর ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। আতাউর রহমানের স্ত্রী রেহানা রহমান। তিনি একজন চিত্রশিল্পী। দেয়ালজুড়ে যে ছবিগুলো ঝুলছে, সেগুলো রেহানা রহমানের আঁকা জেনে আমি তো অবাক। এত সুন্দর ছবি মানুষের পক্ষে আঁকা কিভাবে সম্ভব! রেহানা রহমান এখন আর ছবি আঁকেন না বলে রঙতুলি আর ক্যানভাসের সাথে দীর্ঘ দিন তার সম্পর্ক নেই।
আতাউর রহমান আর রেহানা রহমানের একমাত্র ছেলে রবিন লন্ডনে তার বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত। প্রতি ডিসেম্বরে দেশে আসে মাসখানেকের জন্য। এসেই নাকি ৬৪ জেলা ভ্রমণে নেমে পড়ে।
আতাউর রহমানের বাসায় আমার অবাধ যাতায়াত দিন দিন বাড়তে থাকে। এই দম্পতিকে আমার যেমন পছন্দ, তাদেরও আমাকে বেশ পছন্দ। যতক্ষণ ওই বাসায় থাকি, রেহানা রহমান ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আমার সাথে দুনিয়ার গল্প শুরু করেন। গল্পজুড়ে থাকে দেশের রাজনীতি। গল্পের একপর্যায়ে চা নিয়ে আসে তাদের কাজের মেয়ে ডালিয়া। অসাধারণ চা বানাতে এই মেয়ের তুলনা হয় না।
এদের ড্রয়িংরুমের শোকেস-ভর্তি দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন শোপিস আমাকে দারুণ আকৃষ্ট করে। রেহানা রহমান বড় বড় মার্কেট ঘুরে এসব শোপিস কিনেন চড়া দামে। শোপিস সংগ্রহ করা নাকি তার শখ!
ওই শোপিসগুলো সত্যিই আমার নজর কাড়তে শুরু করে। ফলে রেহানা রহমানের অগোচরে আমি প্রায়ই কৌশলে তাদের বাসা থেকে দামি শোপিস পকেটে ভরে ফেলি। এক দিন নয়, দুই দিন নয়, বেশ কয়েক দিন চোরের ভূমিকায় আমি রেহানা রহমানের বাসা থেকে দামি দামি শোপিস সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। রেহানা রহমান বুঝতেই পারেননি।

২.
আজ রেহানা রহমান আমাকে তার চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন। গল্প শেষে তিনি কিচেনে গেলেন চা বানাতে। এই সুযোগে আমি একটি শোপিস পকেটে ভরে ফেললাম জলদি। কিছুক্ষণ পর রেহানা রহমান চা নিয়ে এলেন।
Ñকী ব্যাপার, আপনি চা বানালেন। ডালিয়া কোথায়?
Ñওই হারামজাদীকে বিদায় করে দিয়েছি। ও চোর। এখানে চোরের কোনো জায়গা নেই।
Ñচোর?
Ñহ্যাঁ। ওর হাত খারাপ। আমার শখের শোপিস সরিয়ে ফেলে।
Ñমানে?
Ñএই যে দামি দামি শোপিস দেখছো, এসব আমি শখ করে কিনে এনে এখানে সাজিয়ে রাখি। ডালিয়া এগুলো চুরি করে লুকিয়ে ফেলে। জিজ্ঞেস করলে কেঁদে বলেÑ কসম খালা, আমি চুরি করিনি। এখানে কি ভূত এসে এগুলো গায়েব করে, তুমিই বলো বাবা!
Ñইয়ে, আপনি কি শিওর শোপিসগুলো ডালিয়া চুরি করে!
Ñঅবশ্যই। ওর মা প্রায়ই এখানে এলে মায়ের কাছে গোপনে দিয়ে দেয়। এসব কাজের মেয়েদের বিশ্বাস নেই।
কথাগুলো বলেই রেহানা রহমান রাগে ক্ষেপে উঠলেন। তার নাক ঘামছে। টি-টেবিলে রাখা চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উড়ছে। আমার পকেটে গোপনে পড়ে আছে একটু আগে চুরি করা রেহানা রহমানের দামি শোপিস।

৩.
বাসায় এসে আলমারি খুললাম। সেখানে লুকিয়ে রেখেছি রেহানা রহমানের বাসা থেকে আনা এত দিনের সব শোপিস। শোপিসগুলোর দিকে তাকিয়ে ডালিয়ার কথা মনে হতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। চুরি করেছি আমি, অথচ দোষী হয়েছে ডালিয়া। আমি যে বড় অন্যায় করেছি। না, এই শোপিসগুলো যতবার দেখব, ততবার ডালিয়ার কথা মনে হবে আর আমি কষ্ট পাবো।
একটি পলিথিনে মুড়িয়ে শোপিসগুলো নিয়ে এলাম ছাদে। তারপর সব ভেঙে ফেললাম। ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিলাম শোপিসের ভাঙা টুকরো। ছাদের রেলিং ধরে নিচে পড়ে থাকা ভাঙা শোপিসের টুকরোগুলো দেখছি আর মনে মনে বলছিÑ ‘আমাকে ক্ষমা কর ডালিয়া। চুরি করেছি আমি আর চোর হয়েছিস তুই। তোর কোনো দোষ নেই বোন।’
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement