বিলুপ্ত ঐহিত্যবাহী বাহন পালকি
- নিয়ামুর রশিদ শিহাব
- ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
‘পালকি চলে! পালকি চলে! গগন-তলে আগুন জ্বলে। স্তব্ধ গায়ে আদুল গায়ে, যাচ্ছে কারা রৌদ্র সারা!’ কবি সত্যেন্দ্রনাথে লেখা পালকি কবিতা বইয়ের পাতায় আজো থাকলে বাস্তবে নেই এই ঐতিহ্যের বাহনটি। পালকি ছিল এক সময়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন বাহন। মানুষ বহন করার কাজেই এর ব্যবহার হতো। সাধারণত ধনীগোষ্ঠী এবং সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেরা এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করতেন। কিন্তু এখন তা পুরোপুরি বিলুপ্ত।
পালকির ইতিহাসÑ ধারণা করা হচ্ছে প্রাচীনকালে দেব-দেবীকে আরোহণ বা দেব-দেবীর মূর্তি বহনের জন্য পালকিসদৃশ বাহন ব্যবহার করা হতো। অনেক প্রাচীন মন্দিরেও পালকি দিয়ে দেবতা বহনের দৃশ্য ভাস্কর্য আকারে তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুদের রামায়ণেও আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ সালের সময়ের দিকে পালকির উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসন আমলে ইউরোপের উচ্চ শ্রেণীর সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা এই পালকিতে চলাচল করতেন। তবে উপমহাদেশে রেলগাড়ি প্রচলনের পর ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মাঝে পালকির ব্যবহার অনেকটাই কমে আসে।
ইউরোপের পালকিগুলোকে শোবার উপযোগী করে বানানো হতো। কোনো কোনো পালকি খোলা হতো, আবার কোনোটি হতো বন্ধ। মিসরীয় চিত্রকর্মেও পালকির দেখা পাওয়া যায়। পারস্য রাজ্যেও পালকির অস্তিত্ব ছিল। বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা থেকে শুরু করে চতুর্দশ শতকে পর্যটক জন ম্যাগনোলি ভ্রমণের জন্য পালকি ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। সম্রাট আকবরের শাসন আমলে এবং তারও পরবর্তী সময়ে সেনাধ্যক্ষদের যাতায়াতের জন্য প্রধান বাহন হিসেবে পালকিই ব্যবহৃত হতো। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)। বর্তমানে পালকি ব্যবহার একেবারে নেই। বিশেষ করে ১৯৩০-এর পর থেকে শহরাঞ্চলে রিকশার প্রচলন শুরু হলে পালকির ব্যবহার উঠে যায়।
পালকি চাকাবিহীন একটি বাহন। পালকিকে কয়েকজন ঘাড়ে ঝুলিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যারা পালকিকে ঘাড়ে বা কাঁধে করে বহন করতেন তাদের পালকির বেহারা বা কাহার বলে। পালকির ভেতরে আকারভেদে এক বা দুজন থাকত, আর পালকির বেহারা হিসেবে থাকত দুই থেকে আটজন। কাঠ মিস্ত্রিরা সেগুন কাঠ, শিমুল কাঠ, গান কাঠসহ বিভিন্ন প্রকার কাঠ দিয়ে তৈরি করতেন পালকি। পালকির বহন করার দণ্ডটিকে বাঁট বলে। এই বাঁট তৈরি হতো বটগাছের বড় ঝুরি দিয়ে। আগেরকার দিনে বাংলাদেশে তিন রকমের পালকি দেখা যেত। সাধারণ পালকি, আয়না পালকি এবং ময়ূরপঙ্খী পালকি। সাধারণ পালকি দেখতে আয়তাকার ছিল। ঢালু ছাদ এবং চার দিকে কাঠের আবরণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। এর দুই দিকে দুটি দরজাও থাকত। আয়না পালকির বৈশিষ্ট্য হলো এতে আয়না লাগানো থাকত। ভেতরে চেয়ারের মতো দুটি বসার জায়গা এবং একটি টেবিলে রাখা হতো। তবে আয়তনের দিক থেকে বলতে গেলে ময়ূরপঙ্খী পালকি সবচেয়ে বড়। এই পালকিটি ময়ূরের আকৃতিতে তৈরি করা হয়। এর ভেতরে দুটি চেয়ার, একটি টেবিল এবং একটি তাকও থাকত।
কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে পালকির ব্যবহার প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। বর্তমানে পালকিকে আমাদের অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই ধরা হয়। বেহারাদের কাঁধ থেকে পালকির স্থান হয়েছে এখন বিভিন্ন জাদুঘরে। সভ্যতা এবং বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে পালকিকে হয়তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে পালকির কথা ভুলে না যাই সেদিকে আমাদের সুদৃষ্টি রাখা খুব প্রয়োজন।
বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা