১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শরতের বিকেল

চারাগল্প
-

সে দিনও শরৎ ঋতু ছিল। আকাশজুড়ে সাদা মেঘের ভেলা। নদীর তীরে সারি সারি বকের ঝাঁক ছিল। আকাশের বুকে আপন মনে কাক আর চিলেরা ডানা মেলে উড়ে চলছিল দূরের কোথাও কাশের বনে, হিমেল হাওয়া যখন দোলা দিত। দূর থেকে দেখে মনটা উদাসীন হতো! শুভ, ছাকিব, তুহিন, তিন বন্ধুর অনেক দিনের ইচ্ছা নদীর চরে গিয়ে আপন হাতে ছুঁয়ে দিবে যৌবনা কাশফুল। ওদের বাড়ি থেকে একটু দূরে পদ্মা নদী। শরতের এই সময়, নদী যেন তার যৌবন ফিরে পায়। প্রতিদিন কত শত বাড়ি বিলীন হয়ে যায় পদ্মার গর্ভে কেউ রাখে না সে খোঁজ। নদীর মাঝ খানে অনেক দিন আগে চর জেগে উঠছে। শরতের শুভ্র মেঘের সাথে যেন নতুন করে সেজেছে ওই চরটা। ঋতু রানীর অহঙ্কার কাশফুলে ছেয়ে আছে চরের বুক। শুভ্র আকাশ যেন এসে মিশে গেছে ওই চরের সাথে। শরতের আকাশ, আর কাশফুলে যখন হিমেল হাওয়া এসে দোলা দেয়। অন্য রকম একটা ভালো লাগা ঢেউ খেলে যায় মনের ভেতর! শুভ, ছাকিব, তুহিন ঠিক করল কালকে ইশকুল ছুটির পরে। শেষ বিকেল ঘুরে দেখবে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা সেই চরের বুক। যেই ভাবা সেই কাজ! পরের দিন ইশকুল ছুটি শেষে তিন বন্ধু মিলে ঠিক করল নৌকায় চড়ে ঘুরে দেখবে চরের বুক। শরতের আকাশ কখন যে তার রঙ বদলায় কে জানে! তিন বন্ধু যখন নৌকায় উঠে, আকাশে তখন ঝলমলে রোদ ছিল! শান্ত ছিল পদ্মার জল। আহা! নদীর পানি ছুয়ে দিতেই কেমন যেন একটা শিহরণ জাগল ছাকিবের মনে। নৌকাটা একটু ছোট-ই ছিল। শুভ মনের খুশিতে নৌকা বয়ে চলছে। নদীর বুকে উড়ে চলছে ধবল বকের দল। শেষ বিলের সূর্যের কিরণ এসে যখন নদীর জলে পড়ছে। ঢেউয়ের তালে তালে কেমন যেন ঝিকিমিকি করছে! তবে ওদের সেই আনন্দ কান্নায় রূপ নিতে একটুও সময় লাগল না। হঠাৎ পুবের আকাশে ছেয়ে গেল কালো মেঘ। দিক-বিদিক উড়ে চলছে বকের ঝাঁক। শান্ত পদ্মার বুকে হঠাৎ করে শুরু হলো উতাল ঢেউ। ততক্ষণে চরের খুব কাছে চলে এসেছে ওদের নৌকা। কাশের বনে উড়ে চলছে বাবুই পাখির ঝাঁক। ভয়ে একদম চুপসে গেল তিন বন্ধু। হঠাৎ কয়েক ফুট উচ্চতার একটা ঢেউ এসে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যায় ছাকিবদের নৌকা। মুহূর্তের মাঝে, দেখতে দেখতে পানির তলে হারিয়ে যায় তিনটি চাঁদ মুখ। সে দিন ভাগ্যক্রমে শুভ ও তুহিন বেঁচে গেলেও! অনেক খোঁজ করার পরেও, কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি ওদের প্রিয় বন্ধু প্রিয় মুখ ছাকিবকে। সে দিন বন্ধুকে হারানোর পর থেকে আর কখনই কাশফুল ছুঁয়ে দেখে না ওরা। পদ্মার বুকে ঘুরতে যায় না নৌকায় চড়ে। আজো শরতের আকাশটা হঠাৎ করে খুবই মেঘলা আকার ধারণ করছে। শুভ, তুহিন আতকে উঠে! ওরা শুনতে পায় কে যেন পেছন থেকে ওদের নাম ধরে ডাকছে আর বলছে... ওই তোরা বাড়ি চইলা যা। শরতের আকাশ ভালো নয়। বাড়িতে সবাই তোদের কে খুঁজতেছে। তবে কণ্ঠটা যে খুবই পরিচিত কারো, এইটা বুঝতে একটুও ভুল হয়নি শুভ আর তুহিনের। দুর্গাপুর, কুড়িগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement