২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খুশির ঈদ

ঈদ আয়োজন
-


টুটুলের কোরবানি ঈদ একদম ভালো লাগে না, রোজার ঈদে সে অনেক মজা করে। রোজার ঈদে টুটুল নতুন জামা পরে, সেমাই-পায়েস খেয়ে ঘুরে বেড়ায় আর বড়দের থেকে সালামি পায়। সে তুলনায়, কোরবানির ঈদে কোনো মজাই হয় না। তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে কোরবানি দেয়, অনেকে দেয় না; কিন্তু ঈদের দিন সবাই পেটপুরে গরুর গোশত খায়। অন্য দিকে ঈদের দিন তাদের বাসায় মুরগির গোশত রান্না হয়। এ কথা ভাবতেই টুটুলের কান্না পায়।
টুটুলের বন্ধু সজীবরা ঈদে গরু কোরবানি দেয়। গরু কেনার পর সজীবের সাথে গরুর দেখাশোনা নিয়ে টুটুলের একচোট ঝগড়াও হয়। বরাবরের মতো এবারও সজীবের সাথে ঝগড়া করে টুটুল কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে। ঘরে এসেই টুটুল তার মায়ের কাছে একগাদা অভিযোগ দেয়। কেন, তারা সজীবদের মতো কোরবানি দেয় না? টুটুলের মা ছেলের অভিযোগের কোনো উত্তর দিতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাওয়া ছেলের মাথায় হাত দিয়ে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। মধ্যবিত্তদের এ এক জ্বালা, সহজেই কারো কাছে হাত পাততে পারে না। হাত পাতারও বা কি দরকার? মনে মনে ভাবেন রাহেলা বানু, সবাই যদি ফ্রিজে গোশত রাখার উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করত, আত্মীয় ও প্রতিবেশীর হক আদায় করত, তবে তিনি টুটুলকে অন্তত ঈদের দিন পেটপুরে গরুর গোশত খাওয়াতে পারতেন।
রাহেলা বানু হিসাব কষতে বসেন, তার কোন কোন আত্মীয় এবার কোরবানি দিচ্ছে। মনে মনে ভাবেন, তার এসব আত্মীয়ের মধ্যে থেকে যদি কেউ ঈদের দিন তাকে কিছু গোশত দেয়, তবে টুটুলের জন্য ঈদটা আনন্দময় হতো। এসব কথা ভাবতে ভাবতে রাহেলা বানুর চোখ থেকে কখন পানি গড়িয়ে পড়লÑ তা তিনি বুঝতেই পারলেন না। বুঝতে পারলেন তখন, যখন মায়ের তপ্ত পানির স্পর্শে টুটুলের ঘুম ভেঙে গেল।
মাকে কাঁদতে দেখে টুটুল হকচকিয়ে গেল। একটু ভাবতেই মায়ের কাঁদার কারণ সে আবিষ্কার করলÑ মাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে সে বলল ‘কাঁদিস না মা,আমি যখন বড় হমু, বাজার থ্যাইকা তোর ল্যাইগা সবচেয়ে বড় গরুটা কিন্যা আনমু’।
ছেলের কথা শুনে রাহেলা বানু ফিক করে হেসে দিলেন, ছেলের মাথায় হাত দিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হ, এত বড় গরু দিয়া আমি কি করমু’
টুটুল নিজের বুক থাবড়াতে থাবড়াতে বলল ‘কি করবি মানে? ফ্রিজে রাখবি আর খাবি’
রাহেলা বানু ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললেন ‘নারে বাপ,আমরা ফ্রিজে গোশত রাখমু না,আমরা মানুষকে গোশত খাওয়ামু। দেখবি, তোর তখন কোরবানির ঈদই সবচেয়ে বেশি মজা লাগব।’


আরো সংবাদ



premium cement

সকল