কোরবানির স্মৃতি!
ঈদ আয়োজন- ওহাব ওহী
- ০৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। এই খুশির আনন্দ ছেলেবালায় যতটা অনুভব করতাম; মাঝ বয়সে এসে সেই সুখস্মৃতিটুকু চোখ বন্ধ করলে এখনো স্বর্গসুখ অনুভব করি!
রমজামের ঈদ পরবর্তী দুই মাস পরে আসে কোরবানির ঈদ। আমরা ছোটরা অপেক্ষায় থাকতাম কবে কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
তখনকার সময়ে এখনকার মতো সবার অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো ছিল না। সমাজের কয়েকজন মিলে তিন চার ভাগে কোরবানি দেয়া হতো। যেদিন গরু কেনা হতো; আমাদের আনন্দটা থাকত আকাশছোঁয়া! গ্রামশুদ্ধ বলে বেড়াতাম আমাদের গরু কেনা হয়েছে... গরু কেনা হয়েছে! সেই সাথে আমরা পোলাপানরা দল বেঁধে একে অপরের গরু দেখতে যেতাম। তর্ক জুড়ে দিতাম কাদের গরু বেশি মোটা কিংবা কাদেরটা বেশি সুন্দর! কাদের গরুর শিং বেশি চোখা কিংবা কাদের গরুর জেদটা একটু বেশি ইত্যাদি!
ওদিকে ঈদের আগের রাতে সমাজে কয়টা গরু কেনা হলো সেটি লিস্ট করতাম। শেষবারের মতো সবাই মিলে দেখে নিতাম গরুগুলো।
সেই সময় আমাদের সমাজের সব গরু এক জায়গায় কোরবানি দেয়া হতো। দিলু ভাইয়ের বাড়ির দক্ষিণ পাশে অনেক সুন্দর খোলা জায়গা ছিল। সেখানে ছিল বিশাল বড় বড় কয়েকটি পুরনো কামরাঙ্গা গাছ। নামাজ পরবর্তী সময় লোক সমাগমে সেখানে হইহুল্লোড় পড়ে যেত। এই বাঁশ আনরে, এই দড়ি আনরে! ওই তোরা কে কোথায় আছিস? কলাপাতা বিছিয়ে দে...!
পরক্ষণেই দেখতাম মসজিদের হুজুর ইয়া বড় একটি লম্বা চাকু নিয়ে কোরবানির স্থলে আসতেন! আমরা ছোটরা ভয়ে দিলু ভাইয়ের ঘরের বারান্দার উঁচু স্থানে পিলার ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
অবশেষে সমাজশুদ্ধ লোকজন আষ্টেপৃষ্টে ধরে, দড়ি দিয়ে বেঁধে পর্যায়ক্রমে গরুগুলোকে শুওয়াত! হুজুর আল্লাহ আকবার বলে উপর থেকে নিচের দিকে ছুরি চালান করে দিতেন। গপ গপ করে রক্ত বেরুত। সেই ফেনাযুক্ত রক্তের নহর একসময় বৃষ্টির পানির মতো ঢালুর দিকে রওনা দিতো!
এ দিকে চামড়া ছোলার সময় ব্যাপক আনন্দ হতো। আমরা ছোটরা সাহায্য করার জন্য জবাই করা গরুর পা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। পরে গরুর রান আলাদা করে কলাপাতার বিছানায় রাখা হতো। গোশত বানানোর সময় আমাদের ছোটদের চোখ থাকত কোথায় একটু বিশেষ পর্দা পাওয়া যায়! যা দিয়ে পরে আমরা নারিকেলের মালায় বিশেষ কায়দায় ঢোল বানিয়ে রোদে শুঁকিয়ে দিতাম!
এ দিকে দিলু ভাই সেই আশির দশকে কাতার থেকে উপহার পাওয়া তার প্রিয় টেপরেকর্ডারটি ছেড়ে দিতেন। কী চমৎকার সব গান বাজত তখন! শুনতে কি যে ভালো লাগত। গান শুনতে শুনতে চলত গোশত বানানোর প্রতিযোগিতা!
গোশত বানানো শেষে চলত বণ্টনের পালা। সমাজের গোশত আলাদা করে তা এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা হতো। পরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হতোÑ প্রিয় এলাকাবাসী, সমাজের গোশত বণ্টন শেষ! আপনারা যে যার গোশত নিয়ে যান।
আমরা ছোটরা তখন বোল-গামলা নিয়ে দৌড়ে চলে যেতাম সেখানে। আহা! সেই আনন্দ এখনকার ছেলেমেয়েরা আর পাবে কই!
সাভার, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা