২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পথশিশুদেরও আছে অধিকার

-

পথশিশুরা পিছিয়ে পড়াদের দলে, পথশিশুরা বঞ্চিতের দলে। উঁচু জাতের মানুষদের এত সময় নেই পথশিশুদের খোঁজ নেয়ার। ওরা থাকবে নিগৃহীত, ওদের সাথে ভালো ব্যবহার করার কোনো মানে নেই। টোকাই বা দিনমজুর হয়ে জীবন কাটিয়ে দিতেই যেন জন্ম হয়েছে ওদের। জন্মই ওদের আজন্ম পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পথশিশু সম্পর্কে আমাদের মধ্যে এমন ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে ওরা পড়ালেখা করায় আগ্রহী না, ওরা নেশা করবে, ঘুরবে-ফিরবে, যাবতীয় অনিয়ম করবে। নিয়মের বেড়াজালে ওদের কখনো বন্দী করা যাবে না। ছড়িয়ে পড়া এ অপপ্রচারে আমি নিজেও প্রভাবিত ছিলাম। কখনো করুণার দৃষ্টিতেও তাকাতাম না ওদের দিকে। তবে আমার সব ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে পথশিশুদেরই একজন। ওরা শিখতে-পড়তে কতটা আগ্রহী এবং মনোযোগী তা নিজের চোখে না দেখলে হাজারবার কেউ বললেও হয়তো বিশ্বাস করতাম না। পথশিশুদের কারো কারো স্মৃতিশক্তির প্রখরতাও ঈর্ষণীয়। প্রতিদিন বিকালে আমি কিছুটা সময় মহল্লার শিশুদের প্রাথমিক আরবি শিখাই। প্রতিদিনের মতো আরবি পড়িয়ে চলে আসতে উদ্যত হলে রাস্তা আটকে দাঁড়াল এক পথশিশু, জীর্ণশীর্ণ চেহারা, গায়ের কাপড়ও যথেষ্ট ময়লা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম
Ñকিছু বলবে? কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পথশিশুটি বললÑ জি ম্যাডাম, আপনাকে পড়া শোনাইতে চাই।
আমার বিস্ময় যেন মাত্রা ছাড়াল
Ñপড়া শোনাবে মানে? কিসের পড়া?
আপনি আজকে যা পড়াইছেন, বলেই অনর্গল হুবহু আমার পড়ানোর মতো পড়তে লাগল। বিস্ময়ে দ্বিতীয়বার হোঁচট খেলাম, একদম ঠিকঠাক হয়েছে, এমনকি পড়তে আসা বাকি শিশুদের পড়া শোনানোও এতটা নির্ভুল হয়নি। আমি ওর হাত টেনে পাশে বসিয়ে আদুরে কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম
Ñতুমি পড়তে আসো না কেন? তোমার মেধা তো ভালো।
পথশিশুটি মন খারাপ করে বলল
Ñআমার তো টাকা নাই ম্যাডাম, বেতন না দিলে আপনি কি পড়াইবেন?
কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম। জীবনের বাস্তবতায় শিশুর কণ্ঠে কী রূঢ় বাস্তবতার প্রতিধ্বনি। এতটুকু বয়সে ও জেনে গেছে, ওর শ্রেণী আলাদা, ওকে কেউ পড়াবে না।
আমি স্নেহের হাত রাখলাম ওর মাথায়। অভয় দিয়ে বললাম
Ñতোমার বেতন দেয়া লাগবে না, কালকে থেকে তুমিও পড়তে আসবে। বলতেই ওর মুখটা দীপ্তিমান হয়ে উঠল। কথাটা বলে আমিও অন্যরকম একটা প্রশান্তি পেলাম।
এরপর শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে থেমে থাকলাম না।
দায়িত্বশীলদের সাথে আলোচনা করে পথশিশুদের বিনামূল্যে পড়ানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে একটা সময়ও ফিক্সড করে নিলাম। এখন আমার বোধ হচ্ছে পথশিশুরাও আমাদের দেশের নাগরিক। ওদেরও আছে শিক্ষার মতো মৌলিক নাগরিক অধিকার। পথশিশুদের ভালোবাসতে শিখলে পৃথিবীটা সুন্দর আর নির্মল হবে। পথশিশুরা বেড়ে উঠুক শিক্ষিত হয়ে, অন্য শিশুদের মতো। নিশ্চয়ই পথশিশুরাও জাতির ভবিষ্যৎ।

 


আরো সংবাদ



premium cement