২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

প্রশ্রয়

চারাগল্প
-


আপাদমস্তক সুন্দরী হিসেবে যতটা না বড়াই আছে সোহানার, তার চেয়ে দ্বিগুণ বড়াই নিশানের। স্ত্রীর রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে বন্ধুমহলে বরাবরই নিশানের উঁচু গলা। দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে ওদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই মাজেদা বেগম লক্ষ করলেন তার সুন্দরী পুত্রবধূর সবক্ষেত্রে নিজেকে অতিমাত্রায় বুদ্ধিমতী প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা। সংসারের কাজকর্মে তার মন নেই। সারা দিন ফেসবুকে নিয়মহীন সময় দেয়াটা সোহানার বদস্বভাবের একটি। শাশুড়ি সংসারের খাটুনিতে ব্যস্ত থাকল, কি থাকল না, সেদিকে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই সোহানার। হয় রূপচর্চা, নয়তো ফেসবুকÑ এ দুইটিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার তার সমস্ত আয়োজন। তবু মাজেদা বেগম ধৈর্য হারান না। বৌমার এখনো অপরিণত বয়স। আরো ক’টা দিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে, এটা ভেবে মাজেদা বেগম টুঁ শব্দ করেন না। কিন্তু সেদিন যখন পুত্র নিশান মায়ের কাছে এসে বলল, ‘সোহানা একটি টিভি চ্যানেলে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ছবি দিয়েছে। ওরা সোহানাকে সিলেক্ট করেছে। শুক্রবারে অডিশনে নিয়ে যাবো ওকে।’ ছেলের মুখে একথা শুনে মাজেদা বেগম সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘দরকার নেই ওসবের। ঘরের বউ ঘরেই থাকবে।’
সোহানা শাশুড়ির কথাকে পাত্তা দেয় না। সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিডিয়া ভুবনে প্রবেশ করে মডেল কন্যা হওয়ার তীব্র লোভ তার বাড়তে থাকে। দেশবাসী টিভিতে তাকে দেখবে, এই স্বপ্নটুকু দিন দিন চোখে ভর করতে থাকে। নিশানও স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার অঙ্গীকার করে। ফলে সোহানা একজন ভরসা দেয়ার মানুষ হিসেবে স্বামীকেই পাশে পায়। কিন্তু মাজেদা বেগমের একবাক্যÑ ঘরের বউকে তিনি বাইরে ছেড়ে দেবেন না। এই নিয়ে মায়ের সাথে নিশানের মতবিরোধ হয়। নিশান মাকে বোঝায়, ‘সোহানা নায়িকা হতে চায়, তো তোমার অসুবিধে কী? নিষেধ করছ কেন?’ মাজেদা বেগম ছেলের সাথে তর্ক যুদ্ধে হেরে যান। বউকে নায়িকা বানানোর সুপ্ত আশা নিশানেরও।
২.
অডিশনে টিকে যায় সোহানা। মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ঢাকায় যাওয়ার টিকিটও পেয়ে যায়। বউয়ের এমন ফলাফলে নিশানও খুশি। বউ নায়িকা হলে বন্ধুমহলে তার আরেকটু দাপট বাড়বে, এটা ভাবতেই নিশানের আনন্দ হয়।
শেষ পর্যন্ত মাজেদা বেগমের আদেশ অমান্য করে নিশান সোহানাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা দেয় মূল প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে। মাজেদা বেগম ভাবেন, যে ছেলে কখনো মায়ের অবাধ্য হয়নি, সে ছেলে আজ বউয়ের জন্য মায়ের নিষেধাজ্ঞাকে মূল্যায়ন করল না।
সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সোহানার শেষ ফলাফলটা ভালোই। কয়েক হাজার প্রতিযোগিকে টপকে সে উইনার হয়েছে। অনেক পুরস্কার এসেছে ঝুলিতে। সেই সাথে রাতারাতি মডেল কন্যা হওয়ার হাতছানি। পত্রপত্রিকায় ঢালাও করে ছাপা হচ্ছে সোহানার একের পর এক ছবি। এ যেন স্বপ্ন পূরণ হওয়ার অবিশ্বাস্য ভাগ্য। নিশান যে মনেপ্রাণে এটাই চেয়েছে।
৩.
খুব অল্পদিনে মিডিয়ায় দারুণ সাফল্য পায় সোহানা। নিশান স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় স্থায়ী হওয়ার সব আয়োজন করে। মাজেদা বেগমের সব অনুরোধকে পরোয়া না করে একদিন নিশান আর সোহানা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়। সারাদিন কাঁদলেন মাজেদা বেগম।
বুদ্ধিমতী আর সুন্দরী হওয়ার সুবাদে টিভি নাটকে দারুণ চাহিদা বাড়ে সোহানার। একাধিক নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের মডেলও হতে থাকে। ফলে শহরের বড় বড় বিলবোর্ডে সোহানার ছবি সবার চোখে পড়ে। অর্থ-প্রাচুর্য বাড়তে থাকে। ফ্ল্যাট কিনে সোহানা। নিশানকে নিয়ে সেই ফ্ল্যাটে বসত গড়ে। গ্রামের টিনের ঘরে পড়ে থাকেন মাজেদা বেগম। পার হতে থাকে দিনের পর দিন।
৪.
ভোরে দুয়ারে টোকা পড়ে। ঘুম ঘুম চোখে মাজেদা বেগম দুয়ার খুলে দেখেন নিশান দাঁড়িয়ে আছে। ছেলের মুখটা কেমন যেন শুকনো। মাজেদা বেগম বৌমার কথা জানতে চান। নিশান জবাব দিতে পারে না। মাকে সে কিভাবে বলবে সোহানা এখন আর তার জীবনে নেই। নায়িকা হওয়ার পর বড় বড় নির্মাতাদের সাথে তার সখ্য বাড়ে। গতকাল এক নাট্য পরিচালককে বিয়ে করে তালাক দিয়ে নিজের ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিয়েছে নিশানকে। নিশানের জীবনে এখন আর সোহানা নেই। সে এখন সুপার স্টার। তার দৃষ্টি ওপরের দিকে। আর এসবের জন্য নিশান নিজেকে দায়ী ভাবে। স্ত্রীকে যদি শুরু থেকে প্রশ্রয় না দিতো, তবে আজ এ পরিণতি হতো না।

আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement