১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এই বর্ষায়

জীবনের বাঁকে বাঁকে
-

ভোর হতেই ঝুম বৃষ্টি। টিনের চালে রিনিঝিনি ছন্দ। খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম শোয়া থেকে। খুশিতে মনটা ভরে উঠল। অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সেই কবে থেকে তাদের আগমনের পথ চেয়ে আছি! অপেক্ষার পালাবদল হলো আজ। পরম ভালোবাসায় সিক্ত করতে ভালোবাসার ডালি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে তারা। জানালার কপাট খুলতেই একপশলা বৃষ্টি ছুঁয়ে গেল শরীর। ভেজা বৃষ্টির শীতল পরশ। শিরশিরে ঠাণ্ডা। গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠল। প্রিয় বন্ধুর ছোঁয়া পেয়ে মনের ভেতর রোমাঞ্চ পেয়ে বসল। কামনার প্রিয়জনকে আরো কাছে পেতে জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম বাইরে। তারা স্নেহভরে ভালোবাসার মমতায় ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার শূন্যে ভেসে বেড়ানো যুগল হাত। নির্মল ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়ে আমি যেন সুখস্বর্গে ভাসছি! তাদের আগমনে আজ খুশির বান ডেকেছে মনে।
কৃষ্ণাভ আকাশের বাঁধ ভেঙেছে যেন। মন উজাড় করে পৃথিবীকে বিলিয়ে যাচ্ছে অনন্ত বারিধারা। দূর আকাশ থেকে নিরন্তর ধারাবাহিক নিñিদ্র ফুল হয়ে জমিনে পড়ছে বৃষ্টি। পবিত্র জলের অবগাহনে সিক্ত সমান্তরাল জমিন। টাপুরটুপুর ছন্দের দ্যোতনায় নন্দন মুগ্ধতায় ডুবে যাচ্ছি বারবার। উতলা মনে লোভ-লালসা ভর করেছে খুব। মন চাচ্ছে অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যাই। শীতে থরথর করে কাঁপি। কতদিন পর আজ মাটির পৃথিবীতে বৃষ্টি যে এলো!
বৃষ্টির ছাঁট জানালার গ্রিল গলে আছড়ে পড়ছে পাকা ফ্লোরে। বাইরে বাতাসের ঝাপটায় দুলছে গাছের সবুজ পাতা। ধুলোবালি ধুয়ে গিয়ে চকচকে সবুজ রঙ ধারণ করেছে পাতাগুলো। মুক্তার দানার মতো অবিরাম বৃষ্টিজল গড়িয়ে পড়ছে সবুজ পাতা বেয়ে। হাত বাড়িয়ে শুভ্র জল মুঠোয় ভরে আনলাম। এই ঘোর বৃষ্টির মাঝেও অদূরের কদম গাছটা ঝাড়বাতির মতো জ্বলছে! প্রিয়জনের পরশ পেয়ে গাছের কদমগুলোও বেশ উৎফুল্ল।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। দূরে জলে ভরা বিলটা থইথই করছে। তীরের ফলার মতো বৃষ্টির ফোঁটা লাফিয়ে পড়ছে বিলের জলে। পরম মমতায় একে অপরের সাথে মিশে হয়ে যাচ্ছে একাকার। একদল পানকৌড়ি ভেসে বেড়াচ্ছে মনের সুখে। মাঝে মধ্যে ডুব দিয়ে ঠোঁটের ডগায় করে ধরে আনছে ছোট মাছ। পাতিহাঁসগুলো বিলের পাড়ে বড় আমগাছটার নিচে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটা শুভ্র বক মাছের আশায় কচুরি বনে এক পা তুলে বসে আছে। পুরো বিলটা নব যৌবনা আহ্লাদি বালিকার মতো উচ্ছলতায় পরিপূর্ণ। কোত্থেকে চারটে ছেলেমেয়ে এসে লাফিয়ে পড়ল বিলের জলে। কলাগাছ ধরে সাঁতরাতে লাগল। ওদের আনন্দ আর হুড়োহুড়ি দেখে মনটা ফিরে গেল সেই শৈশবে। বর্ষা এলে কোনো একটা দিন মিস হতো না এই বিলে সাঁতার কাটতে। স্কুল থেকে ফিরেই মায়ের শাসনের তোয়াক্কা না করে ফুটবল নিয়ে চলে যেতাম মাঠে। বৃষ্টি নামলে আরো মজা হতো। সবাই মিলে মাতিয়ে রাখতাম বৃষ্টির গ্রামটাকে। খেলা শেষে দল বেঁধে ঝাঁপাঝাঁপি করতাম বিলের স্বচ্ছ জলে। নিচে থাকত বিলের পানি আর ওপর থেকেও পড়ত বৃষ্টির ফোঁটাÑ কী যে ভালোলাগা কাজ করত মনে! কখনো ডিঙি নৌকায় চড়ে চলে যেতাম বহুদূরে শাপলা বনে।
বৃষ্টির সময় আমি আর ছোট আপু ঘরেও খুব মজা করতাম। কাঁথার ভেতর ঢুকে সে কি দুষ্টুমি! টিনের চালে বৃষ্টির নাচন মনের ভেতর আনন্দের ঝঙ্কার তুলত। বারান্দায় দাঁড়িয়ে টিনের ঢেউয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিতাম আলতো করে।
অতীতের কথা মনে করে এখন বড্ড ইচ্ছে করছে শৈশবের মতো এখনো বেরিয়ে পড়ি ফুটবল হাতে। সাঁতার কাটি বিলের অথৈ জলে। কিন্তু লোকলজ্জা কিংবা আগের বন্ধুরা না থাকায় ইচ্ছেটা মুহূর্তে ফিকে হয়ে এলো। এখন তো আর কেউ আমায় দেখে আগের মতো খেলতে আসবে না। তব্ওু বৃষ্টিকে ভালোবাসি সেই আগের মতো করেই।

টঙ্গী, গাজীপুর


আরো সংবাদ



premium cement
শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত চকরিয়ায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি

সকল