২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঈদে বাড়ি ফেরার ভোগান্তি

-

ঈদ মানেই আনন্দ উৎসব। আর আনন্দ প্রিয়জনের সাথে ভাগ করে নিতে লাখো মানুষ ফেরে বাড়িতে। আবার ঈদের পর ফিরতে হয় কর্মস্থলে। কিন্তু আসা-যাওয়ার এ ভোগান্তি না কমে দিন দিন বাড়ছেই। এ সব নিয়ে লিখেছেনÑ শওকত আলী রতন
যেকোনো উৎসব-আনন্দে নাড়ির টানে প্রিয়জনের উদ্দেশে গ্রামে ছুটে যায় লাখো মানুষ। প্রিয়জনের ভালোবাসা কিংবা শেকড়ের টানে আপন নিবাসে যাওয়া একরকম চিরায়ত ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। একদিনে যেমনি করে মানুষ জীবন-জীবিকার টানে আপনজন ছেড়ে মানুষ শহরমুখী হয়ে থাকে, তেমনি কোনো উৎসবে কিংবা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নাড়ির টানে ছুটে যান বাড়ির পানে। দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার সময়ে আপন নিবাসে পৌঁছা না পর্যন্ত এক ধরনের অস্থিরতা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটে। কিন্তু এই পথ সব সময়ই বন্ধুর। এই দীর্র্ঘপথ পাড়ি দিয়ে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছাটা কী সহজ! না, মোটেই না। যাত্রাপথে পথের বাঁকে বাঁকে ওঁৎ পেতে থাকে ভয়ঙ্কর সব অদৃশ্য চেনা-অচেনা ফাঁদ। যে ঘটনার শিকার হয়ে প্রিয়জন থেকে চিরতরে আলাদা করে দেয় প্রিয় মানুষগুলোকে। তখন পরিবারে নেমে আসে অমানিশা অন্ধকার। যে দুঃসহ স্মৃতিকে সাথী করে বয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন, যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়, তবু অহরহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে অগণিত মানুষের। প্রতি বছরের মতো এবারো ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য পান্তে ছুটে চলেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা থেকে অধিকসংখ্যক মানুষ ছুটে যায় নানা প্রান্তে। পরিবার-পরিজনের কাছে ছুটতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। ঈদযাত্রায় সাধারণ যাত্রীরা বাস, লঞ্চ, আর ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন ঘরমুখো লাখো মানুষজন। প্রত্যেকের স্বপ্ন একটাই স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে বাড়ি ফেরা। এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের পথে পথে ভোগান্তি কোনো অংশেই কম ছিল না। যাত্রীদের সীমাহীন কষ্ট আর ভোগান্তির শিকার হয়ে গ্রামে স্বজনদের কাছে ফিরতে হয়েছে। যে কষ্টের ছাপ তাদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে। সরকারের বিভিন্ন অধিদফতরের পক্ষ থেকে দুর্ভোগ কমাতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলে বাস্তবে এর সুফল পাচ্ছে না যাত্রীরা। সড়ক-রেল ও নৌপথে দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। সীমাহীন যানজট, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বাড়তি ভাড়া, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, যানবাহন বিকল হয়ে পড়া, নদীপথে অতিরিক্ত যাত্রী এবং ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চলাচল সব মিলিয়ে ধকল পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরাই সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হয়ে থাকেন। যানবাহনে টিকিট প্রাপ্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্বেই থাকে অসহনীয় কষ্ট। আবার অনেকে টিকিট না পাওয়ায় প্রিয়জনের কাছে যাওয়া হয় না। সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় শুধু দীর্ঘ যানজটের কারণে যানবাহনগুলোর রাজধানী ছাড়তে সময় লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দেশের চারটি মহাসড়কের যানবাহন স্বাভাবিকভাবে যেখানে ছয় থেকে সাত ঘণ্টায় পৌঁছার কথা সেখানে যানজটের কারণে বিভিন্ন রুটে ২০ ঘণ্টার অধিক সময় লেগেছে। বিশেষ করে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় যাত্রীদের কাটাতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন নৌরুটে ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে গেলে সীমাহীন দুর্ভোগের পড়তে হয়েছে। অনেক যাত্রীদের পথেই ঈদ কাটাতে হয়েছে। এবারো ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো অন্তত ৫০ জন যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এতে আরো প্রায় তিন শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। ঈদের আনন্দের পরিবর্তে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে জীবনের জন্য নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। বাস চালকদের বেপরোয়া গতিতে বাস দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ উল্লেখ করা হলেও বাসের গতিকে রোধ করছে না চালকেরা।
এ বছর ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে কমলাপুর রেলস্টেশনে। ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকেই থেকেই যাত্রীদের চাপ দেখা যায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চে। তবে ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকেই যাত্রীরা ঘরমুখো হওয়ায় শুরুর দিকে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার ছিল সব ধরনের যানবাহনে উপচেপড়া ভিড়। ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের জন্য যেমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কাক্সিক্ষত টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। এবার মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট বিক্রির ঘোষণা দিলেও তা ছিল অকার্যকর।
সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে ঈদে ঘরমুখো সাধারণ যাত্রীরা। ঈদ এলেই বাড়তি আয়ের বেপরোয়া হয়ে যায় পরিবহনের মালিক ও চালকেরা। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাস লঞ্চ ও ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে থাকে। যে কারণে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় ঘরমুখো যাত্রীদের। পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। ঈদে যাত্রীদের দুুর্ভোগ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে যাত্রীদের হয়রানি কিংবা দুর্ভোগ অনেকটা লাগব করা সম্ভব এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সাথে সচেতন হতে হবে প্রত্যেকটি নাগরিককে। তাহলেই সহনীয় পর্যায়ে আসবে সড়কের দুর্ভোগ। প্রতি বছর ঈদের আগ মুহূর্তে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে কতটুকু প্রতিফলত হয় তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। যেহেতু ঈদের কয়েক দিনের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়ে ঘরে ফিরে যায়Ñ তাই এ জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেয়া, যার ফলে প্রতিটি মানুষ নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে। আর এতে অনেকাংশে কমবে সড়ক দুর্ঘটনা এমনটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement
আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত

সকল