২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ব্যাঙ্গালুরের লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন

-

আমার বড় দুলাভাই শিহাব উদ্দিন চৌধুরী একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এ বছর তিনি হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্যাঙ্গালুরুর বোমাসান্দ্রায় অবস্থিত নারায়ণ হেলথ সিটিতে গিয়ে চেকআপ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। আমাকে জরুরি তলব করলেন, তার সাথে ব্যাঙ্গালুরু যেতে হবে। আমার ইন্ডিয়ার ভিসা ছিল, তাই যেতে কোনো বাধা নেই। তা ছাড়া ব্যাঙ্গালুরু হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরী আর আমিও হলাম ভ্রমণপিপাসু মানুষ। নির্দিষ্ট দিনে প্লেনে করে ঢাকা থেকে কলকাতা আবার কলকাতা থেকে প্লেনে করেই ব্যাঙ্গালুরু চলে গেলাম। পরের দিন নারায়ণ হেলথ সিটিতে গিয়ে বিখ্যাত হার্টের ডাক্তার দেবী শেঠীর সিরিয়াল নিলাম। তখন জানতে পারলাম, দেবী শেঠীকে দেখাতে কমপক্ষে দু-তিন দিন লাগবে। তখন আমরা দু’জনেই সিদ্ধান্ত নিলাম, অযথা বসে না থেকে ব্যাঙ্গালুরু শহর ঘুরে দেখি। প্রথমেই গেলাম ব্যাঙ্গালুরু শহরের মালাভিতে অবস্থিত বিখ্যাত লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে। সেখানে প্রবেশ করতে মাথাপিছু ২০ রুপি খরচ করতে হবে। আমরা ভেতরে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম সুবিশাল একটি সাইনবোর্ড। সেখানে পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেনের ম্যাপ আঁকা এবং বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে। নির্বিঘেœ ঘুরেফিরে বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখার জন্য মোবাইলে ম্যাপের একটি ছবি তুলে নিলাম। ম্যাপের একটু সামনেই আরেকটি সাইনবোর্ডে আছে এই বোটানিক্যাল গার্ডেনের ইতিহাস। সেখান থেকে জানতে পারলাম, ১৭৫৬ সালে তৎকালীন মহীশূর (বর্তমানে কর্ণাটক) রাজ্যের মহারাজা হায়দার আলী এটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তী সময়ে এর কাজ সমাপ্ত করেন ‘মহীশূরের বাঘ’খ্যাত মহারাজা টিপু সুলতান। ২৪০ একর জায়গার ওপর লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মিত।
আমরা এই বোটানিক্যাল গার্ডেনের যেদিকে তাকাই, সবুজ আর সবুজ। যতই সামনে এগিয়ে যাই, একের পর এক রাস্তা পাওয়া যায়। পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেনে অসংখ্য রাস্তা। কোন রাস্তা ধরে ঘুরব, এই সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে যায়। কিছু দূর যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল আমরা কোনো সবুজ অরণ্যে হারিয়ে গেছি। সবুজের যে কত রঙ হয়, সেটা এখানে এসে বুঝেছি। পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেন জুড়ে হাজার প্রজাতির ফুল, ফল ও কাঠের গাছ আছে। কত প্রজাতির যে ঘাস দেখেছি, সেটা বলতে পারব না। এই বোটানিক্যাল গার্ডেন পাখিদের অভয়ারণ্য হওয়ার কারণে অসংখ্য পাখি দেখতে পেলাম। কিছু পাখি মুক্ত স্বাধীন আর কিছু পাখি বিশালাকার খাঁচার ভেতর বন্দী। মাঝে মধ্যে গাছের ডালের ফাঁকে বানর ও হনুমান দেখতে পেলাম। বোটানিক্যাল গার্ডেনের বিভিন্ন দিকে আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন লেক দেখতে পেলাম। লেকের ওপর বিভিন্ন ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ আছে। এসবের মধ্যে মহীশূরের মহারাজা টিপু সুলতানের সময়কার আভিজাত্য খুঁজে পাওয়া যায়। পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেনজুড়ে আছে শত শত শিল্পকর্ম। প্রতিটি শিল্পকর্ম গাছের ডাল, কাণ্ড, গোড়া বা পুরো গাছ দিয়ে তৈরি করা। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘোরার সময় কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে শিশুরা খেলা করছে, কোনো শিশুকে মা দুগ্ধপান করাচ্ছে কিংবা বিশালাকার কুমির, অজগর, বানর, শিম্পাঞ্জি, উটপাখি, ময়ূরসহ নানা ধরনে শিল্পকর্ম। একদম কাছে গিয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই, এগুলো কাঠের তৈরি। এ ছাড়াও জলজ্যান্ত গাছ ও লতাপাতার সমন্বয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম দেখা যায়।
লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি দৃষ্টিনন্দন গ্লাস হাউজ আছে। সেখানে কত প্রজাতির ফুলগাছ দেখতে পেলাম, সেটা আমার ধারণার বাইরে। তবে অবাক বিস্ময়ে সেখানকার ফুল দেখেছি। অনেক বিরল প্রজাতির ফুল সেখানে সংরক্ষণ করা আছে। যে কেউ এই গ্লাস হাউজ দেখলে বিমোহিত হবে নিশ্চিত। লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে বিশাল এরিয়া নিয়ে বনসাই গার্ডেন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন গাছের বনসাই দেখতে পেলাম। এগুলো সেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। যে কেউ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে এখান থেকে বনসাই সংগ্রহ করতে পারবে। তবে লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে যেটা দেখে আমি সবচেয়ে বেশি অবাক ও বিস্মিত হয়েছি, সেটা হচ্ছে পাথরের পাহাড় (জড়পশ ঐরষষ)। এই পাথরের পাহাড় বলতে গেলে মাঝারি মাপের পাহাড়। আমি অনেক ঘোরাঘুরি করেও পাথরের পাহাড়ে কোথাও ভাঙা বা ফাটল দেখতে পেলাম না। পুরো পাহাড়টা মনে হবে একখণ্ড বিশালাকার পাহাড়সম কালো বা ধূসর পাথর। পাথরের পাহাড়ের চূড়ায় মহাদেবের একটি মন্দির দেখা যাবে। এই পাথরের পাহাড় সম্পর্কে একটি সাইনবোর্ডে কিছু তথ্য দেয়া আছে। সেখানে থেকে জানতে পারলাম, প্রায় তিন মিলিয়ন বছর আগে কোনো এক বিকট ভূকম্পনের ফলে এই পাথরের পাহাড় ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠের ওপরে উঠে আসে। লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হচ্ছে, পুরো এরিয়া একদম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, গাছের প্রতিটি প্রজাতি সম্পর্কে বিশদভাবে বিবরণ দেয়া সাইনবোর্ড পাওয়া যায়। লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে কর্মরত একজন আমাদের বলেছেন, লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনের গাছগুলো দেখে এবং সাইনবোর্ডগুলো পড়ে গাছ ও গাছের প্রজাতি সম্পর্কে জানতে কমপক্ষে এক মাস লাগবে। সেখানে বিভিন্ন দেশের অগণিত পর্যটক ও শিক্ষার্থী দেখতে পাওয়া যায়। লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement
মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সকল