২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শেকড়ের কাছে ফেরা

ঈদ আয়োজন
-

চাকরি, পড়াশোনা, ব্যবসাসহ নানা কাজে আমাদের অনেককেই বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মা-বাবা ভাইবোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আমরা দূরে থাকি। কিন্তু বছরের দু’টি ঈদের সময় সব কিছু থেকে ছুটি নিয়ে নাড়ির টানে আমরা ফিরে আসি আমাদের পরিবারের কাছে। অপেক্ষায় থাকি আমাদের প্রিয় মুখগুলোকে দেখার। আমাদের শৈশব-কৈশোরের কত শত স্মৃতিমাখা ওঠানো ফিরে আসার সুযোগ করে দেয় এই দু’টি ঈদ। আর ঠিক এভাবেই যেন পূর্ণতা পায় আমাদের উৎসব। কিন্তু সব সময়ই কী আমাদের এই উৎসব সুখের হয়?
কয়েক বছর আগের কথা। ঈদের আগের রাত। বড় ভাই ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছেন। ভাবী ভাতিজাকে নিয়ে চলে এসেছেন বেশ কিছু দিন আগেই। রাত জেগে সবাই বড় ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। ফোনে যোগাযোগ হচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর। তখন প্রায় মধ্যরাত, ভাই যখন পৌঁছালেন তখন আমরা বাহিরে বের হলাম। তার পায়ের গোড়ালি পুরো ব্যান্ডেজ করা। এটা দেখে সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসা হলো। জানলে পারলাম, বাস উল্টে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে লাফ দিয়েছিলেন। আর এ জন্যই পা মচকে গেছে। সবাই চিন্তা করব দেখে ফোনে এ কথা তিনি আগে বলেননি। সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ। ঈদের দিন বিকেলে ভাইকে নিয়ে যাওয়া হলো একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। ডাক্তার সব কিছু দেখে শুনে প্লাস্টার করে দিলেন। কিছু দিন বিশ্রামে থাকতে বললেন আর কিছু ওষুধ লিখে দিলেন।
এবার পড়তে হলো বিপত্তিতে। যে ওষুধগুলো লিখে দিয়েছেন তার মধ্যে দুটো ওষুধ এলাকার কোনো ওষুধের দোকানে পাওয়া গেল না। নাটোর শহরের ছোট বড় সব দোকানে খোঁজ করা করা হলো, কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা নিয়ে এর মধ্যেই আমি রাজশাহী শহরে রওনা দিলাম। আমাদের বাড়ি থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ কম। অনেক কষ্টে রাজশাহী শহরে পৌঁছালাম। কিন্তু ভাগ্য হয়তো সহায় ছিল না। শহরের ছোট বড় সব ধরনের ডিসপেনসারি খুঁজলাম কিন্তু পাওয়া গেল না। কি আর করার, এক রাজ্যের মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। যেখানে প্রতি ঈদে সবার সাথে অনেক আনন্দে সময় কাটাই, মজা করি, ঘুরে বেড়াই সেখানে মন খারাপ করে সারা দিন বাড়িতে বসে থাকতে কি ভালো লাগে! পরিবারের একজনের কিছু হলে সে প্রভাব পড়ে সবার উপরেই। এই দুর্ঘটনার কাছে সেবার আমাদের সবার ঈদ আনন্দটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল।
সেবার আমাদের ঈদের আনন্দটা ফিকে হয়ে গিয়েছিল একটি সড়ক দুর্ঘটনার কাছে। নিজে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছিলাম যে, ঈদে বাড়ি ফেরা যেসব যাত্রী সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার হন তাদের পরিবারের ঈদ কেমন কাটে। দুর্ঘটনার কারণে কোনো পরিবারের ঈদের আনন্দটা যেন ম্লান না হয়ে যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই বাড়ি ফেরেন। যা কখনো কাম্য নয়। আমাদের শেকড়ের কাছে ফিরে আসা হোক নিরাপদে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 


আরো সংবাদ



premium cement