২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমার মা

-

মাকে নিয়ে লিখে শেষ করা যায় না। মায়ের অবদান আমার সারা জীবনের সাথে জড়িত। ছোটবেলা থেকে আজ অবধি প্রতিটি পদক্ষেপে মা শক্তি জুগিয়েছেন। যেকোনো কঠিন সময়ে ভেঙে পড়তেন না কিংবা আবেগের কাছে হার মানতেন না। শক্ত হাতে সব কিছু সামলে নিতেন। ন্যায়ের দিকে তিনি অন্যমাত্রার মানুষ। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে কখনোই দেখিনি। কারো অন্যায় হয়েছে, কিন্তু তার মন রক্ষার্থে তারই কাছে মন ভুলানো কথা বলে তার কাছে ভালো সাজা এ রকম কখনো করতেন না। অনেকক্ষণ কারো সাথে আড্ডা, গল্পগুজব করতে দেখিনি, কারো বাসায় অকারণে সময় ব্যয় করা, কাউকে নিয়ে সমালোচনা করা, হাসি-তামাশায় মেতে ওঠা এ রকম তার আচরণে কখনো আবিষ্কার করতে পারিনি। মায়ের এই অসাধারণ গুণগুলো আমাদের ভাইবোনদের মধ্যেও প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা দেয়ার পর বাকি সব কাজেরই জবাবদিহি করতে হতো। অযথা কোথাও সময় ব্যয় করতে দিতেন না। তিনি নিজেই ডেকে নিয়ে আসতেন। এত বেশি যতেœ রাখতেন যে, আমরা কোনো কিছুই লুকিয়ে রাখতাম না। সব কিছুই মায়ের সাথে শেয়ার করতাম। আমরা আট ভাইবোনের সবাই অনেক বড় হয়ে গেছি, মায়েরও অনেক বয়স হয়েছে, তাও সবাই এখনো মায়ের সাথেই সব শেয়ার করি। মা কখনো আবেগের বশে আমাদের ভুল ডিসিশন দেন না, যদি ওই ডিসিশনে আমরা কষ্টও পেয়ে থাকি। বোনদের মধ্যে কখনো মনোমালিন্য হলে মা উভয়কেই বকা দিতেন। কারো সামনে কাউকে ছোট বড় করতেন না। আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে দারুণ এক বন্ডিং তৈরি করে দিয়েছেন। সেজন্যই ভাইবোনদের কারো কিছু হলে অন্যরকম এক টান অনুভব করি। একজন মা হিসেবে সব সন্তানের জন্য সমান দৃষ্টি রেখেছেন, কারো জন্যই অবহেলা নেই, নেই কোনো সমালোচনা। আত্মীয়স্বজনের প্রতি নেই কোনো অনীহা। নানাদের বা দাদাদের কারো প্রতি ভেদাভেদ করতে দেখিনি।
মা কখনোই বিলাসিতা করে চলতেন না। আমাদের যাই থাকুক, তিনি কারো কাছে তার থেকেও কম বলতে পছন্দ করতেন। কখনোই নিজেকে নিয়ে বেশি কিছু বলতেন না। গ্রামে থেকেও তিনি আমাদের ভাইবোনদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন, তবে তা গল্প করে কাউকে বলতে নারাজ, যদি অহঙ্কার হয়ে যায়।
মায়ের চলাফেরা আমাদের মুগ্ধ করে। কোনো খাবার ভালো লাগলেও তা তিনি অতিরিক্ত খান না, যদি কোনো সমস্যা হয়। যথারীতি ওষুধ খান। কখনো মিস হয় না বা কারো সাহায্য নেন না। ডাক্তার কোনো নির্দেশনা দিলে তা খুব সুন্দর করে পালন করেন, কোনো গাফিলতি করেন না। কোনো কিছুতেই নেই বিন্দুমাত্র অলসতা। সময়জ্ঞানও দারুণ।
মাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করি নানার আর বাবার মৃত্যুর পর। আমরা মাকে কখনোই হাউমাউ করে কিংবা বিলাপ করে কাঁদতে দেখিনি, গম্ভীর হয়ে চুপ থাকতে দেখেছি, চোখে পানি টলমল করে আর ফর্সা মুখ গোলাপি হয়ে থাকে। আর দেখেছি নিজের কষ্ট চেপে রেখে আমাদের সান্ত্বনা দিতে, সারাক্ষণ ইবাদত-বন্দেগি করতে। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের এমনভাবে বড় করেছেন যে, কখনোই বাবার অভাব বুঝতে দেননি। কিন্তু নানা আর বাবার জন্য মা অনেক কষ্ট পেতেন। আমাদের বুঝতে না দিলেও আমরা মাঝে মাঝে টের পেতাম, নিঃশব্দ নামাজের রুমে কুরআন পড়ে আর চোখের পানি মুছতে দেখতাম। সব কষ্ট সহ্য করেও ধৈর্য আর সাহসিকতা দিয়ে সংসারকে আগলে রেখেছেন, আবেগের কাছে কখনোই হার মানেননি। আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজনকে সুন্দর বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
পৃথিবীর সব আবেগ, ভালোবাসা মাকে ঘিরেই। মা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে আমাদের জীবনের সাথে। মাকে বড্ড ভালোবাসি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল