স্মৃতির পাতায় নৌকা ভ্রমণ : জীবনের বাঁকে বাঁকে
- জেলী আক্তার
- ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০, আপডেট: ২৫ মে ২০১৯, ২১:৩৭
এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে ভাঙনের সুর উঁকি দিতে শুরু করে, ভাঙন বলতে দূরত্ব এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে বন্ধুত্বের মতো মধুর সম্পর্কের মধ্যে। একেকজন একেক জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন কলেজ, নতুন পরিবেশ আর নতুন মুখের ভিড়ে ভাটা পড়ে যায় পুরনো সম্পর্কগুলো; কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ভাটা পড়ে যাওয়া সম্পর্কে সেইবার যেন আনন্দের জোয়ার আসতে শুরু করল।
প্রায় এক বছর আগের কথা,
পুরনো বন্ধু-বান্ধবীদের ইচ্ছায় সিদ্ধান্ত নেয়া হলো ঈদের পরের দিন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হবে।
জায়গা সিলেক্ট করা নিয়ে জটিল-দ্বিধা কিন্তু বন্ধু-বান্ধবীদের মধ্যে জটিল-দ্বিধাটা বা কতক্ষণই স্থায়ী হতে পারে। সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো নৌকায় ভ্রমণের।
শুরু হয়ে গেল প্রস্তুতি পুনর্মিলনী উপলক্ষে কেনাকাটার ধুম পড়ে গেল।
যেন আনন্দের উপর আনন্দ যোগ দিয়ে আনন্দের সীমাটা বহুগুণ বাড়িয়ে দিলো। সামান্য একটু হিসাব-নিকাশ করে জনপ্রতি খাওয়া-দাওয়া, নৌকা ভাড়া, এবং মজা করার জন্য লটারিÑ এসবের পেছনে খরচ হিসাব করে জনপ্রতি নির্ধারণ করা হলো দুই শ’ টাকা। যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া হলো বন্ধুদের ঘাড়ে। আর আমরা বান্ধবীরা ব্যস্ত সাজগোজ নিয়ে।
বন্ধু রোমান, মাহিন ও রুশো এবং বাকি বন্ধুরা সবাই মিলে দায়িত্বসহকারে টাকা তোলা থেকে শুরু করে ব্যানার বানানো এবং ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া করাসহ সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করল।
কথামতো ঈদের পরের দিন ৯টার দিকে সব বান্ধবী উপস্থিত হওয়ার কথা, বান্ধবী মুনের বাসায়। কিন্তু একটু ব্যতিক্রম হয়ে গেল সকাল ৮টার দিকে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। তবে ১০টার পর বৃষ্টি থেমে গেল, আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। আমি নিশি ও শিফা তিনজন উপস্থিত হলাম মুনের বাসায়। তবে যথাসময়ে উপস্থিত হওয়ার সুবাদে আন্টির হাতের পায়েসও খেলাম। তারপর শুরু হলো ফোন অভিযান। একজন আরেকজনকে ফোন করছে, একজন বলছে এই কোথায় তুই?
-ওপাশ থেকে কেউ বলছে, আর দুই মিনিট, আর পাঁচ মিনিট, এই রাস্তায়, এই রিকশায়Ñ এভাবে সবাই মিলিত হতে ১২টা বেজে গেল। তারপর কলেজ মোড়ে এসে মিলিত হলামÑ কণিকা, খুরশীদ, আশামণি, নিশি, ইতি, মুন্নি, ঐশ্বর্য এবং আরো কয়েকজন বান্ধবীর সাথে। এবার চিকনা-চাকনা বান্ধবীরা এক রিকশায় তিনজন আর একটু সুস্বাস্থ্যের মোটাসোটা বান্ধবীরা জোড়া জোড়ায় রিকশাায় উঠে পড়লাম। যাত্রা শুরু করলাম চিলমারি নৌ-বন্দরের উদ্দেশে। ওই দিকে বন্ধুরা সেই ফাস্ট, ওরা চিলমারি নৌবন্দরে উপস্থিত। ইতোমধ্যে নৌকায় উঠে সেলফি তোলাও শেষ। সবাই মিলে চা খেতে বসলাম। সব চেয়ে মজার ব্যাপার এটাই চা খেতে বসে চায়ের কমতি পড়ে গেলে তারপর সবার কাপ থেকে একটু একটু করে ঢেলে বাকিদের কাপগুলো ভরিয়ে দেয়া হলো। চা খাওয়ার পর রওনা দিলাম। বন্ধু-বান্ধবী মিলে প্রায় ৬০ জন। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দিয়ে চলছে আমাদের নৌকা। হালকা হালকা মেঘ, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির ছলাৎছলাৎ শব্দ মুহূর্তেই মন কোথায় যেন হারিয়ে গেল। এমন মন ভোলানো আবহাওয়া আর নদীর পানির ছলাৎছলাৎ শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। পৌঁছে গেলাম একটা চরে, নামটা নাকি ব্যাঙমারার চর। মাথায় উদ্ভট ভাবনা এসে উঁকি মারল। আসলে এখানে কি ব্যাঙ মারা হতো পেছন থেকে কে যেন বলল নেমে পড়Ñ ভাবনা বাষ্প হয়ে উড়ে গেল। তারপর একে একে সবাই নেমে পড়লাম। তখন বেলা প্রায় ২টা বাজে। বন্ধুরা একটা তাঁবু তৈরি করল। নিচে পাটি বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা করল। তারপর সবাই মিলে মজা করে খেয়ে নিলাম। তবে এর মাঝে শত শতবার ক্যামেরায় বন্দী হয়ে গেল অনেক স্মৃতি। এভাবে কিছুক্ষণ যে যার যার মতো ঘোরাঘুরি করলাম, সেলফি তুললাম। বন্ধুরা ফুটবল খেলল আর লটারি হলো। এখানেও মজার ব্যাপার বন্ধুদের প্রয়োজনীয় জিনিস বান্ধবীরা পেলাম আর বান্ধবীদের লিপস্টিক, নেইল পলিস, স্নো এসব বন্ধুদের ভাগে। ব্যাপারটি মজার ছিল। বেশ আনন্দে কেটে গেল দিনটা। তারপর ৫টার দিক রওনা দিলাম। সাড়ে ৬টার মধ্যে সবাই বাসায় পৌঁছে গেলাম।
সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়লে সেই হৈ-হুল্লোড় করা আনন্দঘন চঞ্চল পরিবেশে ফিরে যেতে বারবার মন চায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় আজ থেকে কয়েক বছর পর হয়তো ফ্রেম বন্দী ছবি থাকবে, আর খুব বেশি মনে পড়লে পাওয়ারি চশমার গ্লাসজুড়ে থাকবে স্বচ্ছ নোনা জল। রসুলপুর, কুড়িগ্রাম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা