১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীতে রকমারি ইফতার

-

সিয়াম সাধনার মাস রমজান। আর পবিত্র রমজান মাসের বড় আকর্ষণ হচ্ছে ইফতার। সারা দিন সিয়াম পালনের পর সবাই সাধ্যমতো উত্তম খাবার দিয়ে ইফতার করে। একসময় সীমিত কিছু খাবার দিয়ে ইফতার করা হলেও সময়ের ব্যবধানে আমাদের দেশে ইফতারে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সব আইটেম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একেক ধরনের খাবারের প্রচলত রয়েছে ইফতারির। রাজধানীর ইফতারের খাবারের আইটেমএগুলো রীতিমতো ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতার বিক্রির প্রচলন অনেক আগে থেকেই। দেশীয় ঐতিহ্যবাহী নানা স্বাদের খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ রাজধানীর এই পুরান ঢাকার চকবাজার। বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায় অন্যতম একটি খাবার। রমজান মাসে ইফতারিতে বিক্রি হয়ে থাকে খাসির গোসতের রানের কাবাবটি। বড় বাপের পোলায় খায়- এই খাবারের আইটেমটি পুরান ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কামাল মাহমুদ নামে একটি ব্যক্তি তিনি প্রথম তৈরি করেছিলেন। যিনি কামেল মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। ৭০-৭৫ বছর আগে তিনিই প্রথম এই খাবারটি তৈরি করেন বলে জানা যায়। পাকিস্তান আমলে এর নাম ছিল সিক চূড়ায় ভর্তা। স্বাধীন বাংলাদেশে এর নাম হয় বড় বাপের পোলায় খায়। চকবাজারের ইফতারের দোকানগুলো গড়ে ওঠে রাস্তার ওপর। মানুষের হই চই বাহারি ইফতারির আয়োজন, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় আর বিকিকিনিতে রোজার প্রথম দিন থেকেই জমে উঠেছে ইফতার বাজার। দুপুরের পর থেকেই শায়েস্তা খানের আমলের শাহী মসজিদের সামনের রাস্তার জাগয়াজুড়ে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা ইফতারির দোকানগুলোতে বাহারি ইফতারের পসরা সাজান দোকানিরা। রোদ বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে আগে থেকেই প্রস্তুতিসহ দোকান তৈরি করে থাকেন এখানকার দোকানিরা। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে চকবাজারের ইফতার বাজার। পুরান ঢাকাবাসীর ইফতারির আয়োজনে আরো রয়েছে সুতি কাবাব, জালি কাবাব, মুঠি জালি কাবার, নারগি চাপ, শাক ফুলুরি, টিকা কাবাব, ডিম চপ, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, দই বড়া, হালিম, নুরানি লাচ্ছি, পনির,পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, পরোটা, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, ঘুগনি, ছোলা বুট, বেগুনি, খেজুর, শাহী জিলাপি ও বোম্বে জিলাপির কদর রয়েছে সমানভাবে। এ ব্যাপারে কথা হয় নূর আলম নামে এক ক্রেতার সাথে। তিনি জানান, পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতারের কদর অনেক আগে থেকেই। তাই সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
অন্য দিকে রকমারি ইফতার এখন আর চকবাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। চকবাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন ইফতার পাওয়া যায় লালবাগ, ওয়ারী, টিকাটুলি, নারিন্দা, ধোলাইখাল, সদরঘাট, নওয়াবপুর, বংশাল, বাবুবাজার, নয়াবাজার, আগা সাদেক রোড এলাকায় বিস্তৃত রয়েছে বাহারি ধরনের ইফতারি। রাজধানীর দ্বিতীয় বৃহত্তর ইফতার বাজার বেইলি রোড। এখানেও এক মাসের জন্য বিক্রি হয় রকমারি ইফতার আইটেম। ৮০ দশক থেকে এখানে ইফতার নিয়ে ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রি শুরু করেন। ঐতিহ্যবাহী ইফতারের জন্য বেইলি রোড প্রসিদ্ধতম একটি স্থান। ক্যাপিটালের মতো আরো বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ইফতার বিক্রি করে থাকে। একেকটি দোকানে অনেক ধরনের পসরা সাজিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এখানে রকমারি ইফতারের মধ্যে রয়েছে শাহী হালিম, খাসির হালিম, মুরগির হালিম, গরুর চপ, গরুর কালো ভুনা, বিফ আচারি, বিফ কড়াই, কার্লি চিকেন, ব্রেন মসল্লা, মুরগির আস্ত রোস্ট, মুরগির জাম্বু রোস্ট, চিকেন ফ্রাই, খাসির কলিজা, সুতি কাবার, বোরহানি, মাঠা, টানা পরোটা, কিমা পরোটা, চিপ রোল, গরুর শিক, চিকেন উইংস, চিকেন টিক্কা, চিকেন সাসলিক, চিংড়ি বল, চিকেন তন্দুরি, চিকেন বুটি কাবাব, চিকেন তাওয়া চাপ, বিফ তাওয়া, রেশমি কাবাব, চিকেন গ্রিল, দই বড়া, দই বুন্দিয়া, জাফরানি জিলাপি, চিকন জিলাপি, ছোলা বুট, ডাবলির ঘুগনি, ডিম চপ, বেগুনি, আলুর চপ আরো অনেক আইটেম
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি করা হয় দেশী বিদেশী ফল, কয়েক ধরনের খেজুর, শশা, ধনিয়াপাতা, বাঙ্গি, তরমুজ, কলা ও শরবত। বিশেষ করে সবাই খেজুর দিয়ে ইফতার করায় রমজান মাসে ব্যাপক পরিমাণ খেজুর বিক্রি হয়ে থাকে। যে কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এক মাসের জন্য খেজুর বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে থাকেন। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলসহ নামীদামি হোটেলগুলোতে রমজান মাসজুড়ে চলে স্পেশাল ইফতার আয়োজন। ঢাকার মধ্যে ঘটা করে ইফতার বিক্রির আয়োজন করা হয় মগবাজার, মিরপুর, নিউমার্কেট, মতিঝিল, পুরানাপল্টনসহ অন্যান্য এলাকায়।


আরো সংবাদ



premium cement