২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আম্মার দেয়া প্রথম স্মার্টফোন

-

আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করি। এক দিন বাজারে এলাকার এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা। তিনি বাইরে চাকরি করতেন। তার হাতে ইয়া বড় একটা স্মার্টফোন দেখলাম। তার ফোনের অ্যাপ্লিকেশন আর বিভিন্ন গেমস দেখে মুহূর্তের মধ্যে স্মার্টফোনের লোভে পড়ে গেলাম। গ্রামাঞ্চলে তখনো সেভাবে স্মার্টফোন আসেনি। এমন একটা ফোন কবে যে আমার হবে! কিন্তু সামনেই তো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এমন সময়ে কোনোভাবেই বাড়িতে ফোনের কথা বলা যাবে না; যা বলার সেটা বলব পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর। পরীক্ষা শেষ করেছি, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা তখনো বাকি। এর মধ্যে আম্মার কাছে বায়না ধরলাম, একটা স্মার্টফোনের জন্য। আম্মা প্রথমে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। কয়েক দিন ধরে এক রাজ্যের রাগ-অভিমান করে থাকার পর অবশেষে আম্মা রাজি হলেন স্মার্টফোন কিনে দিতে। তখন আমার আনন্দ আর দেখে কে!
অবশেষে এলো আমার বহুল প্রতিক্ষিত সেই দিন। শহরে এসে চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে মার্কেটে গেলাম । কিন্তু যে ফোনটা পছন্দ হলো সেটার যা দাম, টাকা এনেছি তার চেয়ে কিছুটা কম। বাড়িতে ফোন দিলাম, আব্বা ফোন রিসিভ করলেন। আমার কথা শুনে তিনি বললেন, যতটুকু টাকা লাগে চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে নিতে। বাড়িতে গেলে আব্বা টাকা দিয়ে দেবেন। কথাটা শোনার পরে আমার চোখে প্রায় জল আসার উপক্রম।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্মার্টফোন কিনলাম। আলতো করে ফোনটা যখন হাতে নিলাম, তখন কী যে আনন্দ লেগেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পর ঢাকা গেলাম একটা কাজে। কিন্তু সেখানে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। আমার স্মার্টফোনটা আর কোনোভাবেই অন হচ্ছে না। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আম্মার কিনে দেয়া প্রথম স্মার্টফোনটা কি আর ব্যবহার করতে পারব না?
ঢাকা থেকে ফিরে এসে গেলাম কাস্টমার কেয়ারে। তারা বললেন, ব্যাটারির সমস্যা। ব্যাটারি পরিবর্তন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ফোনটা আবার প্রাণ ফিরে পেল। বন্ধুরা অনেকেই নিত্যনতুন মডেলের ফোন কিনছে। কিন্তু আমি এই মোবাইলটা এখনো পরিবর্তন করিনি। এ ফোনটা আমার কাছে থাকলে অন্যরকম এক প্রশান্তি অনুভব করি। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালেই আম্মার মুখটা ভেসে ওঠে। মনে হয়, মায়ের স্পর্শ সবসময় সাথে নিয়ে আছি। আম্মার কিনে দেয়া প্রথম স্মার্টফোন। সত্যিই এটা আমার কাছে অনেক বড় একটা উপহার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হতে চলল, এর মধ্যে আম্মার কাছ থেকে যা যা আবদার করেছি, তার সব কিছুই পেয়েছি। মা এর চেয়ে শান্তির শব্দ যেন পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। মা এক অন্য রকম ভালোবাসা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement

সকল