১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেকআপ : চারাগল্প

-

এক ঘণ্টা ধরে বিউটি পার্লারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে এবার সত্যি বিরক্ত লাগছে সাইফুলের। বিরক্ত হয়ে যতবারই কল দিয়েছে সেলিনাকে, সেলিনা ততবারই লাইন কেটে দিচ্ছে। আশ্চর্য, সাজতে এক ঘণ্টা লাগবে কেন! না জানি আজ কোন বনের পরী সেজে আসে সেলিনা। এসব ভাবছে সাইফুল।
আজ পয়লা বৈশাখ। স্বামী সাইফুলের কাছে পান্তা ইলিশ খাওয়ার আবদার ছিল সেলিনার। বউয়ের আবদারকে অবহেলা না করে মেনে নিয়েছে সাইফুল। কথা দিয়েছে জেলা সদরের সবচেয়ে বড় হোটেলে নিয়ে যাবে সেলিনাকে, যেখানে প্রতি বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তা ইলিশের আয়োজন করা হয়। হোটেলের নাম শাজাহান হোটেল।
এখন শাজাহান হোটেলে যাবে সাইফুল আর সেলিনা। বৈশাখের এই দিনে আজ কত রকমের মানুষ আসবে। মেয়েরা আসবে সেজেগুজে, তাই বৈশাখী শাড়ি পরে বিউটি পার্লারে গেছে সেলিনা মনের মতো সাজবে বলে। বউয়ের এ আগ্রহটাকেও মেনে নিয়েছে সাইফুল। কিন্তু কে জানত সাজতে এত সময় ব্যয় হবে।
সেলিনাকে আবার ফোন দিতে যাবে, এমন সময় অচেনা একটি মেয়ে এসে সাইফুলের পাশে দাঁড়ায়। মুখে গর্জিয়াস মেকআপ পরা মেয়েটাকে চিনতে পারছে না সাইফুল।
Ñকে আপনি?
Ñহা হা হা।
Ñহাসছেন কেন?
Ñআমাকে চিনতে পারছ না? আমি তোমার বউ।
Ñহোয়াট?
মুখে এতটাই ভারী মেকআপ নিয়েছে যে, সেলিনার আসল চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। বউয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে সাইফুল বলে, ‘তোমার তো চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। এভাবে ভূত সেজেছ কেন? সুন্দর লাগছে না।’ চট করে সেলিনা বলে, ‘সুন্দর লাগতে হবে না। আমি পান্তা ইলিশের লোভ সামলাতে পারছি না। জলদি চলো।’
সিএনজিতে চেপে বসে দু’জন। তাদের গন্তব্য এখন জেলা সদরের শাজাহান হোটেলে। কালো ধোঁয়া ছেড়ে সিএনজি চলছে। সিএনজি চালকের চেহারা অনেকটা মোমিনের মতো।
মোমিনকে মনে পড়ল সেলিনার। বাবা মোমিনের সাথে সেলিনার বিয়ে ঠিক করেছেন। কিন্তু মোমিনকে বিয়ে করতে কখনো রাজি ছিল না সেলিনা। কারণ সেলিনার হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে তখন কেবল সাইফুলের বাস। সাইফুলকে ছাড়া সে তখন আর কোনো পুরুষকে কল্পনা করতে পারত না।
সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সাইফুলের জন্য ঘর ছাড়ে সেলিনা। বাবা-মা, ছোট দু’টি ভাই রানা ও ফখরুলের প্রতি জন্মান্তরের মায়া মমতাকে বিসর্জন দিয়ে এক ভোরে সাইফুলের কাছে চলে আসে সে। তার পর মনের মানুষকে নিয়ে ঘর বাঁধে।
২.
আজ এই বৈশাখের দিনে শাজাহান হোটেলে পান্তা ইলিশের রমরমা আড্ডা জমে উঠেছে। সাইফুল আর সেলিনা কেবিনে বসে পান্তা ইলিশের অর্ডার দিলো।
কিছুক্ষণ পর মাটির সানকি ভর্তি হরেক রকম ভর্তা আর পান্তা ইলিশ নিয়ে হোটেলের যে কর্মচারীটি এলো, তাকে দেখে চমকে ওঠে সেলিনা। এ কাকে দেখছে সে! স্বয়ং নিজের ছোট ভাই ফখরুলকে।
ভাইয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে সেলিনা। ফখরুল এখানে কি করছে! চাকরি করছে না তো! সেলিনা ধরেই নিয়েছে ফখরুল তাকে দেখে ‘বুবু’ বলে ডাক দেবে। কিন্তু মুখে ভারী মেকআপ থাকার কারণে বোনকে চিনতে পারছে না ফখরুল।
সেলিনা ফখরুলকে প্রশ্ন করে, ‘কেমন আছো ভাই?’ ফখরুল হেসে বলে, ‘ভালো আছি ম্যাডাম। আপনার গলাটা আমার বুবুর মতো। বুবু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।’ ভাইয়ের কথা শুনে বুকটা খাঁ খাঁ করে ওঠে সেলিনার।
Ñতুমি এখানে কী করো ভাই?
Ñকাজ করি। গত মাসে জয়েন করেছি। ভালো বেতন পাই।
অন্য কাস্টমারের ডাকে স্থান ত্যাগ করল ফখরুল। সে জানে না তার বোন আজ এখানে। মুখে ভারী মেকআপ নিয়েছে বলে বোনকে চিনতে পারেনি। কেবিনের পর্দা সরিয়ে ভাইকে দেখছে সেলিনা। ফখরুল অন্য কাস্টমারের খাবারের অর্ডার নিচ্ছে। সাইফুল বলল, ‘খাচ্ছো না কেন? পান্তা ইলিশের জন্য তো অস্থির হলে, খাও।’
সেলিনা পান্তা ইলিশ খাচ্ছে আর ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে বলে মুখের মেকআপ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement