২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেছনের দৃশ্যে নুন : চারাগল্প

-

কই গো ময়না মা? কহন থাইকা ডাকতাছি হুনো না।
Ñক্যান কী কইবেন।
খাওন আছে। খিদের জ্বালায় পেট জ্বলতাছে। ডাক্তার কইছে গ্যাসের সমস্যা।
Ñআহেন পান্তা ভাত আছে খাইয়ে লন।
পান্তা ভাত!! কেবল-ই চৈত (চৈত্র) মাস আইলো আইতে না আইতেই পান্তা ভাত রাহছো?
Ñকি করমু, সক্কাল সক্কাল কামে যাইতে হয়, আপনেরে রাইন্ধা দিবো কেডা; আর এক্কান কথা হইলো সক্কাল সক্কাল খড়ি পামু কই।
ডাক্তার কইছে বাসি খাওন না খাইতে।
কী আর করুম যা আছে দেও, খাইয়া লই যা হয় হইবো।
Ñবহেন দিতাছি।
ময়নার মা ময়না কই গ্যাছে। কথাটা শেষ হইতে না হইতেই ময়না উপস্থিত। ময়নার বাবা জিজ্ঞেস করলÑ
ময়না কই গ্যাছিলি রে মা।
ময়নাÑ
Ñআঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলো ওই তো বড় বাড়ির দিকে।
সকাল সকাল ওই দিক ক্যান রে মা।
ময়নাÑ এমনে গেছি। দেখি ওই বাড়ির একজন সক্কাল হলেই হাঁটাহাঁটি করে, তাই পেছন পেছন গেইছি। আব্বা হুনছো, ওই বাড়িতে রুটি ভাজতেছে আর গোস্ত রান্ধছে। কী ঘেরাণ (ঘ্রাণ) বারইছে। হুনছি গোস্ত ভুনা করছে। খুব স্বাদ হইবো, তাই না আব্বা।
Ñবস রে মা খাইয়া দেখ, আমাগো মাটির সানকিতে পান্তা ভাতের কী স্বাদ।
মেয়েও বসে পড়ল। তিনটে সানকিজুড়ে পান্তা ভাত আর একটা কাঁচা মরিচ কেটে তিন টুকরো করে তিনজনের পাতে।
Ñময়নার বাপ ডাকছে, কই গো নুন কই?
ময়নার মা একটা বয়ামে অল্প একটু পানি এনে সামনে দিলো।
ময়নার বাপÑ এটা কী?
ময়নার মা হতাশার সুরে বললÑ
গত কাইল রাইতে ঝড়ে পানি ভাঙা চালের ভেতর দিয়া পড়তে বয়াম ভইড়া গেছে, আর নুনও গইলা গেছে।
মেয়ের দিকে তকিয়ে বললÑ
ময়না আইজ পান্তা খাইতে খুব স্বাদ হইবো রে, না
ময়নাÑ কেন আব্বা?
Ñওই তো গলা নুনের পান্তা ভাত কী স্বাদ যে হইবো।
ইস বলে মেয়েকে ভুলিয়ে পান্তা খাওয়ানো হলো। আর ময়নার বাবা ভেতর জমাট বাধতে শুরু করল অভাব পূরণের কষ্ট। আসলে বাস্তবতা কখনো কখনো ভীষণ কষ্ট দেয়। ভুনা গোশতের পেছনে গলে যাওয়া নুনের দৃশ্যটা অস্পষ্ট থেকে যায়।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ


আরো সংবাদ



premium cement