২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাতাকার ফেরিওয়ালা! পাঠক সংখ্যা

-

বছর ঘুরেই স্বাধীনতার মাস আসে। আবার চলেও যায়। নগর, শহরের রাস্তাগুলোতে পতাকার ফেরিওয়ালাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আমার মনে হয় এই পতাকার ফেরিওয়ালারাই পতাকাকে বেশি ভালোবাসে বা সম্মান করে। তারা কত সম্মানের সাথে উঁচুতে দেশের পতাকা কাঁধে নিয়ে বয়ে বেড়ায়! এই মাসে পতাকার প্রতি আর দেশের প্রতি আমাদেরও প্রেম বেড়ে যায়। আমাকেও একটা পতাকা কিনতে হবে! আর সবার মতো দেশপ্রেম দেখাতে হবে। বাসা থেকে বেরিয়ে গলির মুখে চায়ের দোকানে বসে রইলাম। হাতের চায়ের কাপ থেকে হালকা ধোঁয়া এলোমেলো হয়ে উড়ে যাচ্ছিল। আমার চোখজোড়া স্থির হয়ে আছে কোনো পতাকার ফেরিওয়ালার খোঁজে। কিছুক্ষণ বাদে মিলেও গেল সে পতাকার ফেরিওয়ালা। একটা পতাকা টেনে নিলাম। ফেরিওয়ালা ২০০ টাকা চাইল।
দর কষাকষিতে বিবেকে বাঁধল আমার। বছরে এই একটা দিনই তো পতাকা কিনি! নিয়ে নিলাম। পতাকার ফেরিওয়ালা মুচকি হাসি দিয়ে প্রস্থান করল। পতাকার ফেরিওয়ালাকে আমার কাছে খুব সুখি মনে হলো।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চলছিল। টুকিটাকি লেখালেখি করি। সে সুবাদে স্বাধীনতা দিবসের একটা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। আমি চুপচাপ বসেই ছিলাম। অনুষ্ঠানের একটা অংশজুড়ে ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রশ্নপর্ব। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলছিল। তখন আমার দু’কান খুবই সজাগ। তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন মন দিয়ে শুনছিলাম।
‘আমরা শুধু দিবস এলেই পতাকার প্রেম দেখাই কেন? দিবস ছাড়া অন্য সময় জাতীয় পতাকার প্রতি আমাদের প্রেম কোথায় যায়’?
‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সেই কোটায় নেয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো কি অবৈধ নয়?’
‘ক্ষমতার পালাবদলের সাথে ইতিহাস বদলে যায় কেন’?
‘আমরা কি আসলেই স্বাধীন হতে পেরেছি?
এমন অনেক প্রশ্নের বোঝা আমি মাথায় চেপে নিয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেছিলাম। রাস্তায় আবারো এক পতাকার ফেরিওয়ালার সাথে দেখা হয়ে গেল। আবারো একটা পতাকা কিনলাম। আমার দেখাদেখিতে আরো অনেকেই পতাকা কিনতে ছুটে এলো। পতাকার ফেরিওয়ালাকে মানুষ ঘিরে ধরল। একসময় মানুষের ভিড়ে আড়াল হয়ে গেল পতাকার ফেরিওয়ালা।
একদিনের জন্য হলেও আমার পতাকার ফেরিওয়ালা হতে ইচ্ছে হলো!
পূর্বশিলুয়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী

 


আরো সংবাদ



premium cement