১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিরে আসা দিনগুলো : চারাগল্প

-

জমির দলিল খুঁজে পাচ্ছেন না জহির সাহেব। মিরপুরে বেশ কিছু দিন আগে একটা জমি কেনেন। হঠাৎ বিশেষ প্রয়োজনে দলিলটা খুব দরকার। জহির সাহেবের বয়স হয়েছে। সব কিছু মনে রাখতে পারেন না। এই যে সকালবেলায়ও পত্রিকা পড়তে গিয়ে চশমা কোথায় রেখেছেন তা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ব্যর্থ হয়ে স্ত্রীর কাছে ধরনা দিলেন। জহির সাহেবের স্ত্রী সালেহা বেগম। তার এই বয়োবৃদ্ধ সময়ে একমাত্র প্রদর্শক তিনিই।
সালেহা বেগমকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ডাকছে জহির সাহেব। সালেহা বেগম রান্নায় ব্যস্ত। মেয়ে, মেয়ের জামাই আসবে তাদের জন্য রান্না করছেন।
Ñ সালেহা,কই তুমি? দলিলটা খুঁজে পাচ্ছি না যে।
Ñ কষ্ট করে একটু খুঁজে দেখো না। আমি রান্না করছি।
Ñ খুঁজছি তো পাচ্ছি না।
Ñ আলমারির ড্রয়ারে দেখো। ওখানে অনেক পুরনো কাগজপত্র আছে, সেখানে দেখো।
জহির সাহেব চাবি দিয়ে আলমারির ড্রয়ার খুললেন। একে একে সব কাগজ দেখতে লাগলেন। খুঁজতে খুঁজতে কাগজপত্র একদম এলোমেলো করে ফেলছেন। যাক, অবশেষে দলিলটা পেলেন। ড্রয়ারের একেবারে নিচে হওয়ায় দলিলটা টান দিলেন তিনি। অমনি অনেক কাগজ নিচে পড়ে গেল। কাগজ উঠাতে গিয়ে জহির সাহেব স্থির হয়ে গেলেন। তার চোখ আটকে গেল এক জায়গায়। সেই স্কুলে পড়াকালীন একটা ছবি পুরনো অ্যালবামে ছিল। দলিল নিতে গিয়ে নিচে পড়ে গেল। জহির সাহেবের এখন দলিল নিয়ে এত আগ্রহ নেই। ফটোটা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন। শরীর এলিয়ে দিয়ে তীক্ষè দৃষ্টিতে ছবিটা দেখছেন। সম্ভবত স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানের ছবি। তার পাশে নিখিল, জুলেখা, রাবেয়া, মাহিন, সদরুলসহ আরো অনেকেই।
জহির সাহেবের ছেলেবেলা খুব ভালো কেটেছে। গ্রামের স্কুলে তিনি পড়তেন। স্কুলের পাশে আমগাছ ছিল। লেইজার পিরিয়ডে সেই আম বন্ধুরা মিলে সাবাড় করা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ ছিল। এ নিয়ে হরলাল স্যারের হাতে কয়েকবার মারও খেতে হয়েছে। হরলাল স্যার খুব কড়া ছিলেন। ভুল পেলেই মারতেন। একটা বেত নিয়ে ক্লাসে ঢুকতেন তিনি। ক্লাসে ঢোকা মানেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসত। তাকে সবাই খুব ভয় পেতেন। তবে পিটি স্যার মহব্বত খুব বন্ধুসুলভ ছিলেন।
ক্লাসে জহির, মাহিন, সদরুলের একটা গ্রুপ ছিল। তারা যেদিকেই যেত একসাথেই যেত। স্যারেরা তাদের নাম দিয়েছিলেন তিন পাণ্ডব। জুলেখার সাথে জহিরের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে পোলাপান খুব ক্ষ্যাপাত। জহিরও খুব গরম হয়ে যেত। জুলেখা মিটিমিটি হাসত। মেট্রিক পরীক্ষার আগে যেদিন সবাই বিদায় নিতে যায় সেদিনের স্মৃতি ভোলার মতো না। সবাই খুব কান্নায় ভেঙে পড়ে। এরপর আস্তে আস্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় সবার সাথে।
ফটোটা দেখতে দেখতে কখন যে জহির সাহেবের চোখে পানি চলে এলো টেরই পাননি। এত ভালোবাসার বন্ধুদের ছেড়ে এত বছর কেটে গেল! জহির সাহেব মোবাইল হাতে নিয়ে মাহিনের মোবাইল নম্বর খুঁজতে লাগলেন। মাহিনকে অনেকবার ফোন দেয়ার পরও সে রিসিভ করল না। কিছুক্ষণ পর মাহিন কল ব্যাক করে।
Ñ মাহিন কেমন আছোস?
Ñ এতদিন পর মনে পড়ল? গ্রাম ভুলে যাওয়ার পর আমাদেরও ভুলে গেলি।
কিছুক্ষণ তাদের মান-অভিমান চলল। মাহিন বলল, আগামী মাসেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রথম পুনর্মিলনী হবে। জহিরকে অবশ্যই থাকতে হবে। জহির সাহেব ভাবলেন, এ তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তিনি যাবেন বলে রাজি হলেন।
জহির সাহেব অনেক দিন পর শার্ট পরেছেন। বেশ কয়েক বছর যাবৎ তিনি পাঞ্জাবিই পরেন। শুধু বন্ধুদের সাথে সেই ছেলেবেলায় ফিরে যেতেই তার শার্ট পরা। স্কুলে এসেই জহির সাহেবের চোখ কপালে উঠে গেল। বন্ধুরা সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। নিখিল, জুলেখা, রাবেয়া, মাহিন সবাই দাঁড়িয়ে আছে। মাহিন কেমন যেন বুড়ো হয়ে গেছে। জুলেখা অনেক মোটা হয়ে গেছে। তবে হাসিটা সেই আগের মতোই। রাবেয়া আমার মতোই চশমা পরে। নিখিল অনেকটা আগের মতোই। সদরুলকে না দেখে মাহিনকে জিজ্ঞেস করলেন,
Ñকিরে সদরুল কই?
Ñ তুই জানোস না?
Ñ না, কী?
Ñ সদরুল গত বছর মারা গেছে।
Ñ মানে?
Ñ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মারা যায়। আমাদের যে অবস্থা তাতে আমরাও তাকে হেল্প করতে পারিনি।
মাহিনের কথা শুনে জহির সাহেব কাঁদতে লাগলেন। টাকা লাগলে আমি দিতাম। কিন্তু টাকার অভাবে আমার বন্ধু মারা যাবে এটা মানতে পারছি না।
মাহিন বললেন, তোর সাথে অনেক দিন যোগাযোগ নেই। তাই আমরাও যোগাযোগের চেষ্টা করিনি। ভেবেছিলাম হয়তো আমাদের ভুলেই গেছোস।
Ñ ঠিক বলছোস, আমারি ভুল ছিল। গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার পর আমি যান্ত্রিক হয়ে গেছি। তোদের সবাইকে ভুলে গেছি। এই পুনর্মিলনী আমাদের একত্র করতে সাহায্য করেছে। না হয় হয়তো আর কোনো দিন তোদের সাথে দেখাই হতো না। তবে শোন তোরা, আমাদের কেউ কোনো অসুবিধায় পড়লে অবশ্যই পরস্পরকে জানাব। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। সদরুলের মতো কাউকে যেন টাকার অভাবে মরতে না হয়।
জহির সাহেবের কথা শুনে সবাই মাথা নাড়লেন। তাদের আড্ডা বাড়তে লাগল। মনে হয় এই আড্ডা আজন্মকাল ধরে চলবে। কত দিন পর একত্রে আবার গল্প হচ্ছে, হাসিঠাট্টা হচ্ছে। কত দিন পর...।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল