২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকের গল্প : জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

এ দেশে খারাপ কাজ করলে অনেকেই পেছনে গালি দেয়। বাধা দেয়ার বা সামনে এসে বুক ফুলিয়ে তার প্রতিবাদ করার সাহস হয় না অনেকের। কিংবা যাদের সেই সাহস আছে, ইচ্ছে করলে বাধা দিতে পারত, তারাই খারাপ কাজগুলোর নেপথ্য কারিগর। তাই এই নষ্ট শহরে ভালো কাজ করা রিস্কি, ভালো কাজ করা লোক সংখ্যালঘু। বরং ভালো কোনো কাজ করতে গেলে নানা জটিলতায় আটকে যেতে হয়। হাজার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, জবাবদিহি করা লাগে। কারণ সবাই জানে, ভালো কাজ করা লোকেরা অসহায় হয়, সহজ সরল হয়।
আর সহজ-সরল না হলে কেউ নিজের খেয়ে সামাজিক কাজ, মানবসেবার কাজ করে? আমি সব স্বেচ্ছাসেবীকে বোকাই বলি। অন্তত এ দেশের প্রেক্ষাপটে, অবৈধভাবে ধান্ধাবাজি করার যুগে যারা বিনে পয়সায় নিজের ঘাটের পয়সা খরচা করে সমাজের, দেশের, পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করে তারা বোকা বৈকি? তেমন এক বোকা মানুষকে আমি চিনি। তিনি আমার সরাসরি স্কুলশিক্ষক ও প্রিয় মানুষ মাহফুজুর রহমান সাগর। রোগাক্লিষ্ট মানুষ! তার কোন ঠেকা পড়েছে, নিজের শিক্ষকতার সামান্য টাকা খরচ করে এই সামাজিক, মানবিক কাজ করার? কী প্রয়োজন এই ছিপছিপে শরীর নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সচেতনতায় দৌড়ঝাঁপ করার?
তবে আমরা যারা এই সামাজিক কাজ করা বোকা। আমরা জানি, একটা ঠেকা আছে। একটা প্রয়োজন আছে। আর সেই ঠেকা বা প্রয়োজনটা বিবেকের। যে নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহি করে না, সে তো মানুষ নয়। বিবেকের তাড়নায় এ কাজগুলো করেন প্রত্যেক সমাজসেবী, স্বেচ্ছাসেবীরা। মাহফুজুর রহমান সাগর স্যারকে আমি তেমনি বিবেকের চেতনায় উজ্জীবিত একজন মানুষ মনে করি। নবদিগন্ত নামক একটা সংগঠন করে তিনি অবিরত সামাজিক ও জনসচেতনতার কাজ করে যাচ্ছেন। অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন হাজার সীমাবদ্ধতা নিয়েও।
এই দেনা-পাওনা, তেলাতেলির শহরে এসব কাজ করায় অনেককে পাশে পাওয়া যায় না। নেতার পেছনেও তো দৌড়ায় যতদিন পদ আছে। তিন দিন আগের অর্থমন্ত্রী পদ গেলে হুইল চেয়ার ধরার কেউ থাকে না, আমরা সেই জাতি। এখানে বিজ্ঞাপনের সুযোগ বুঝে স্পন্সর হয়। মানবিকতার বুলি আউড়িয়ে পণ্য বেচা হয়। কিন্তু মূলত কাজের জায়গায় কেউ এগিয়ে আসে না।
কিন্তু এগিয়ে আসেন সাগর স্যারের মতো কিছু মানুষ। নিজেদের হাজার সীমাবদ্ধতা নিয়ে মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদে ঘুরে বেড়ান দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
নানা সামাজিক কাজ করা মানুষটা তার নিজ শহর ফেনীর দাগনভূঁইয়ার অসহায় ও গরিব মানুষের জন্য একটা চিকিৎসা ক্যাম্প করার চেষ্টা করছেন অনেকদিন। নিজের অর্জিত অর্থসহ নানা জোড়াতালি দিয়েও হয়তো কাজটা সফল করতে পারছেন না। অনেকের কাছে ঘুরেছেন। আশাহত হয়েছেন বারবার। তবে দমে যাননি। খেলাধুলাসহ নানা কাজে স্পন্সর হওয়া লোকেরাও এমন কাজে স্পন্সর হতে চান না। কারণ এখানে শো-অফের স্পেস কম। কিন্তু মানবতার উপকার বেশি।
আমি জানি, কাজ করা লোক দমে যাবেন না। সাগর স্যারের কাজগুলোও সফল হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা সেখানের অংশ হতে না পারার দুর্ভাগ্য নিয়ে বেঁচে থাকব। কারণ আল্লাহ ভালো কাজের জন্য সবাইকে কবুল করেন না। ভালো কাজ করা মানুষগুলো একদিন সব ফেলে সম্মানের উচ্চ আসনে উঠে দাঁড়াবেনই। আমরা সেদিনও হয়তো অনেক নিচে দাঁড়িয়েও নির্লজ্জের মতো বলব, কী দরকার ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর?
আসুন, ভালো কাজ করি, করাই, সহযোগিতা করি। না পারলে যে করছে তাকে উৎসাহীত করি। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী পাশে দাঁড়িয়ে লাইনটা লম্বা করি। তা নাহলে দেখবেন, একদিন সব কিছু নষ্টদের দখলে যাবে। সেদিন এই আমরাই দাঁত কেলিয়ে বলব, ‘দ্যাশটা গোল্লায় গেল!’ অথচ দেশ বা সমাজ বাঁচাতে আমরা কোনো ভূমিকাই রাখিনি! কী অদ্ভূত...
দাগনভূঁঁইয়া, ফেনী

 


আরো সংবাদ



premium cement