২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রহস্যময় পুরাকীর্তি

-

মথুরাপুর দেউল একটি রহস্যময় পুরাকীর্তি। কে কখন এটি নির্মাণ করেছিল, তার সঠিক কোনো তথ্যপ্রমাণ আজো মেলেনি। তবে এখনো এর নির্মাণশৈলী ও শিল্পবৈভব দেখে মুগ্ধ হতে হয়। সুবিশাল বারো কোনাকৃতির এ স্থাপনাটি প্রায় ৮০ ফুট উঁচু। ক্রমে চাপা হতে হতে এর দেয়ালগুলো শীর্ষমূলে মিলেছে। ধারণা করা হয়, সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত হয়েছে।
ফরিদপুর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মধুখালী উপজেলা শহর। এখান থেকে ২ কিলোমিটার উত্তরে মথুরাপুর গ্রাম। গ্রামটির এক বিশেষ পরিচিতি এখন এই দেউলকে ঘিরে। গ্রামের এ অংশটির নাম দেউল মথুরাপুর। দেউলের ঠিক পশ্চিমে বয়ে গেছে চন্দনা নদী। রহস্যঘেরা এই বিজয়স্তম্ভকে ঘিরে লোকমুখে এখনো হাজারো লোককাহিনী।
এর দেয়ালজুড়ে শিলাখণ্ডের ছাপচিত্র। এই শিলাখণ্ডগুলো সুগ্রথিতও বটে। বাইরের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে তীর-ধনুক হাতে হনুমান, পেঁচা ও মস্তকবিহীন মানুষের প্রতিকৃতি। এতে চারটি প্রবেশপথ থাকলেও পশ্চিম ও দক্ষিণেরটা এখন খোলা। এর মূল গঠনে রয়েছে চুন-সুরকির ব্যবহার। এতে নেই কোনো লেখা বা নামফলক। তাই ঐতিহাসিকেরা এটি স্থাপনের সঠিক কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেননি। মথুরাপুর এক সময় প্রাচীন ভূষণা রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। আর ভূষণার রাজা ছিলেন মানসিংহ। মানসিংহ সেই সাথে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতিও বটে। রাজা মানসিংহের সাথে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে মানসিংহ জয়ী হয়ে এটি নির্মাণ করেন। কিন্তু মানসিংহের সাথে প্রতাপাদিত্যের যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে মানসিংহের জয়লাভ ইতিহাসের বিচারে সত্য নয়। ১৬১২ সালে প্রতাপাদিত্যের সাথে সুবেদার ইসলাম খানের ভাই এনায়েত খানের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য পরাজয়বরণ করলে তাকে দিল্লিতে নেয়া হয়, এ অবস্থায় বোঝা যায়, রাজা প্রতাপাদিত্যও মন্দিরটি নির্মাণ করেননি। আবার মানসিংহ এ অঞ্চল ছেড়ে যান ১৬০৬ সালে এবং তিনি মারা যান ১৬০৮ সালে। অতএব দেখা যায়, দু’জনের কেউ এ মন্দিরটি নির্মাণ করেননি।
কথিত আছে, সংগ্রাম সিং নামক বাংলার এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার বিখ্যাত জমিদার সত্যজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিংকে এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তৎকালীন শাসকের ছত্রছায়ায় তিনি বেশ ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। এলাকার রীতি অনুসারে তিনি কাপাস্তি গ্রামের এক বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন এবং মথুরাপুর বসবাস শুরু করেন। তিনিই এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
অন্য এক বর্ণনায়, ১৫৯৫ সালে সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহের ছেলে হিম্মত সিংহ বাংলার বিদ্রোহীদের দমন করে ভূষণা রাজ্য দখল করেন। ভূষণার রাজধানী মধুরাপুরে স্থানান্তরের পর ভূষণা বিজেতা হিম্মত সিংহ ১৫৯৭ সালের দিকে কলেরায় মারা যান। সন্তানের মৃত্যুর পর পিতা মানসিংহ পুত্রের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় ৮০ ফুট উঁচু বিশিষ্ট বিজয়স্তম্ভ তৈরি করেন। অনেকে এটাকে মন্দির বা মঠ হিসেবে উল্লেখ করলেও বিশেষ শ্রেণী ছাড়া কারো এখানে প্রবেশের অনুমতি ছিল কি না সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে।
কালের এই নীরব সাক্ষীটি শত বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। বনজঙ্গলের গুল্মলতার সাথে মিশে যায় চুন-সুরকির এ পুরাকীর্তিটি। বিশেষত দেশভাগের পর এটি সবার নজরে আসে এবং ২০১৪ সালে এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের ‘জাতীয় পুরাকীর্তি স্থান’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
ছবি : লেখক


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল