২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিউটি পার্লার : চারাগল্প

-

রূপচর্চায় অরুণার তুলনা হয় না। প্রতি মাসে একবার তার বিউটি পার্লারে যাওয়া চাই। আয়নার ভেতরে নিজের রূপ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার একটা স্বভাব আছে তার। এই রূপসচেতনতা ভালো লাগে না শাশুড়ি মাজেদা বেগমের। মাজেদা বেগমের ভাষ্যÑ ঘরের বউ ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকবে, এত সাজগোজের কী দরকার! শাশুড়ির এ কথাকে পাত্তা দেয় না অরুণা। শুধু এ কথা কেন, অরুণা তার শাশুড়ির কোনো কথাই গুরুত্ব দেয় না। বিয়ের পর থেকে বউ-শাশুড়ির অনেকটা দা-কুমড়া সম্পর্ক। অরুণার শ্বশুর আবদুল খালেক স্ত্রী আর বৌমার এই বৈরী সম্পর্ক নিরসনের জন্য বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। কোনোভাবেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়নি অরুণাকে। সংসারের দায়দায়িত্ব সব অরুণার হাতে। স্বামী আফসার কাতার থেকে মাস শেষে যে টাকা পাঠায়, সব অরুণা আলমারিতে ভরে তালা মেরে আঁচলে চাবি বেঁধে সংসারের কাজে ডুবে থাকে। ওই আলমারিতে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে অরুণা। বাজার থেকে যে ফলগুলো আনে, সব গোপনে রেখে দেয় আলমারিতে। তারপর শ্বশুর-শাশুড়ির অলক্ষ্যে মজা করে খায়। তবে আজকাল শ্বশুর আবদুল খালেকের ওষুধও আলমারিতে রাখতে বাধ্য হচ্ছে অরুণা। তার ধারণা, শ্বশুর প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধ বেশি খান। ওষুধের দামও অধিক। শ্বশুরের জন্য ওষুধ কিনতে বরাবরই ইতস্তত বোধ করে অরুণা। কিন্তু সেই ওষুধ শ্বশুর পরিমাণে বেশি খাবে, এই নীতি মানা যায় না বলে অরুণা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে নিজেই দুই বেলা করে শ্বশুরকে ওষুধ খাওয়াবে এবং ওষুধের ঝুড়ি থাকবে তার আলমারির ভেতরে। অরুণার এই কর্মে কষ্ট পেয়েছেন মাজেদা বেগম। স্বামী তার ওষুধ বেশি খায়, এই ধারণা অযৌক্তিক। আবদুল খালেকের হার্টের প্রবলেম। সে জন্য স্প্রে ব্যবহার করতে হয়। যখনই হার্টের ব্যথা উঠে, জিহ্বার নিচে স্প্রে দুই চাপ করে দিলে ব্যথা আস্তে কমে আসে।
২.
অরুণা এখন বিউটি পার্লারে। মুখে ফেসিয়াল প্যাক মেখে বসে আছে। এভাবে বসে থাকতে হবে আধা ঘণ্টারও বেশি সময়। অরুণার ফোনে কল আসে শাশুড়ির। রিসিভ করতেই ওপার থেকে মাজেদা বেগমের উদ্বিগ্ন গলাÑ ‘বউ, তুমি দ্রুত আসো। তোমার শ্বশুরের হার্টের ব্যথা উঠেছে। আলমারি থেকে স্প্রেটা বের করতে হবে।’ অরুণা জানায়, ‘আমার আসতে একটু দেরি হবে। আধা ঘণ্টা পর মুখ থেকে প্যাক তোলা হবে। তারপর শুরু হবে চুলের কাজ।’ শাশুড়িকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দেয় অরুণা। মাজেদা বেগম আবার ফোন দেন। অরুণা লাইন কেটে দেয়। মেজাজ খারাপ হয় তার। শ্বশুরের হার্টের ব্যথার জন্য তার রূপচর্চা থেমে থাকবে কেন, ভেবে পায় না অরুণা।
কিছুক্ষণ পর অরুণার ফোনে মাজেদা বেগমের আবার কল আসে। উফ! কী করা যায় এই বুড়িকে নিয়ে! রিসিভ করলেই এখন বলবে দ্রুত বাড়ি আসার জন্য, শ্বশুরের স্প্রে বের করে দেয়ার জন্য। কিন্তু তা সম্ভব নয়। ফোনটা বন্ধ করে দেয় অরুণা। ওই দিকে যা হওয়ার হোক।
পার্লারে রূপচর্চায় তিন ঘণ্টা পার হয়। খরচ এসেছে আড়াই হাজার টাকা। মূল্য পরিশোধ করে পার্লার থেকে বেরিয়ে রিকশায় চেপে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় অরুণা।
বাড়িতে এসে দেখা যায়, উঠোন ভরা মানুষ। ঘর থেকে শোনা যায় মাজেদা বেগমের বিলাপ করা কান্নার গলা। হার্ট অ্যাটাক করে তার স্বামী আবদুল খালেক মারা গেছেন। স্প্রেটা ব্যবহার করতে পারলে হয়তো মানুষটা এ যাত্রায় বেঁচে যেতেন।
অরুণা উঠোনে এসে দাঁড়ায়। এই অঘটন ঘটবে, সে ভাবতে পারেনি। অরুণার দিকে তাকিয়ে আছে প্রতিবেশী কয়েকজন মহিলা, যাদের চোখের ভাষা অরুণাকে বলছেÑ তুমি বউ নামের কলঙ্ক।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।


আরো সংবাদ



premium cement