১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বসন্তে পিঠাপুলি উৎসব

-

বিকেলটা পয়লা ফাল্গুনের। ঋতুরাজ বসন্তের ঝলমলে বিকেলও বটে। শিউলি, পলাশ, ফুলের সাথে কোকিলের কুহুতানে মুখরিত চারদিক। তাই তো বনের ফাগুন আজ মনের দুয়ারে। এই ফাগুনে মন রাঙে না কার? তার সাথে পিঠাপুলির উৎসব।
বসন্তবরণের শুভক্ষণে এই শহুরে জীবনে যোগ হয়েছে আবহমান বাংলার পিঠাপুলি উৎসব। গ্রামীণ জীবনে পিঠাপুলির ঐতিহ্যের কথা আমরা সবাই জানি। নগরায়নের প্রভাবে তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। ইটপাথরের এই শহরে ঢেঁকিছাঁটা চালের কথা ভাবাই যায় না। তবুও শেকড়ের সন্ধানে এগিয়ে চলছে আমাদের প্রজন্ম। আর সেটাই মনে করিয়ে দিলো ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কলেজ ক্যাম্পাসে দুই দিনব্যাপী পিঠাপুলি উৎসবে মেতেছে হাজারো প্রাণ।
এই পয়লা ফাল্গুনী বিকেলে কলেজ ক্যাম্পাসটি সেজেছে বাসন্তী সাজে। তরুণ-তরুণীর মিলনমেলা এখানে। সেই সাথে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে রীতিমতো। মেলা প্রাঙ্গণে পিঠার স্টল বসেছে ২০টার মতো। আর অর্ধশত রকমের রকমারি পিঠার উপস্থিতি। শীতের ভাপা পিঠা থেকে শুরু করে চিতই পিঠা, পোয়া পিঠা, ঝাল পাকান ও গোলাপ পিঠার বাহারি সমাবেশ।
পিঠার মতো স্টলগুলোর বাহারি নাম। যেমনÑ পিঠা পার্বণ, বসন্ত বাহার, নবান্ন পিঠাঘর,পাকের ঘর, কালপুরুষ রোহিনী আরো কত কী? পিঠার স্বাদ ও গন্ধে অভিভভূ সবাই। ত্রিপলই বিভাগের মামুনুর রশীদের ‘নবান্ন পিঠাঘর’টি সুনাম কুড়িয়েছে বেশ। আর ব্যতিক্রমী সাজে ‘নোয়াখাইল্লা হীডা’ স্টল তো আলোচনার শীর্ষে।
নোয়াখালীর প্রায় ছয়-সাতজন ছাত্রের স্টল এটি। কথা হলো ত্রিপলই বিভাগের নোয়াখাইল্লা মুহাইমিনুল মিরাজের সাথে। তারা এখানে নকশি পিঠা, কলাপিঠা, কুলসি পিঠা, জামাই ও শামুক পিঠার আয়োজন করেছে।
গ্রাম-বাংলার প্রায় ৫০ রকমের পিঠা প্রদর্শিত ও বিক্রি হচ্ছে এখানে। নামগুলো মনে রাখা কষ্ট হলেও পিঠার স্বাদ কিন্তু ভোলার নয়। বাসন্তী, ফাল্গুনী, আন্দোসা, নারকেল বরফি, নন্দন, রূপসী, বনফুল, নকশি পিঠা, মনিকা পিঠাঘর, বাহারি ইত্যাদি। দুধচিতই, রসচিতই, পাতাপিঠা, কুলিপিঠা, ফুলপিঠা, খেজুর পিঠা, দুধরুটি, লাভপিঠা, ডিমপিঠা, নারকেল চিড়া, ত্রিভুজ পিঠা, তারাপিঠা, পাটিসাপ্টা, ঝুরিপিঠা, তালপিঠা, চুষিপিঠা, বিস্কুট পিঠা, বরফি পিঠা ইত্যাদি।
১০ টাকা থেকে ৮০-৯০ টাকা মূল্যের পিঠা রয়েছে মেলায়। মিষ্টি পিঠার মধ্য পাকান পিঠার খুব কদর। পাকানপিঠা আবার হরেক রকমের। পাকান, রসপাকান, খড়েপাকান, ফুলপাকান, পাকান, আদিপাকান ইত্যাদি। মেলায় আরো আছে রস কদম্ব, গাজর লাড্ডু, আপেলপিঠা, নাড়ু, জামাই পায়েস, ক্ষীর লুচি, কুলসি পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠার আয়োজন।
মিষ্টির পর ঝাল পিঠার সন্ধানে বেরিয়েছেন রুবেল হোসেন, তুষার খান ও অনিকের সাথে যোগ দিয়েছন অনেকে। ঝাল প্রিয়সীদের জন্য হাঁসের গোশত-সিট রুটি ও ঝাল পাকানসহ স্টলভেদে নানা ঝালপিঠা।
ফাগুনের রঙিন ছোঁয়া শুধু প্রকৃতিতে নয় ছুঁয়ে গেছে মন ও পোশাকেও। পলাশ শিমুলের রঙে আজ মুগ্ধতার অবগাহন। বসন্ত বাতাসে গাইছে কোকিল। আর বাসন্তী সাজে সেজেছে হাজারো প্রাণ। উচ্ছ্বাস আর উদযাপনে মেতেছে জীবন। সবাই গাইছে জীবনের গান। মেলা থেকে ফেরার পূর্ব মুহূর্তেও কানে বাজছিল শাহ্ আবদুল করিমের সেই ‘বসন্ত বাতাসে’ গানটি।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর।


আরো সংবাদ



premium cement