২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টুপিওয়ালা সোয়েটার চারাগল্প

-

শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে চলছে। চার দিকে কুয়াশার চাদরে সব কিছু ঝাপসা। অনুভবের ভেতর হতাশা আর জটিলতার কুয়াশা। তবে এত কিছুর মধ্যেও দীর্ঘশ্বাসে একটু উষ্ণতা, গভীর যন্ত্রণার উষ্ণতা। শৈত্যপ্রবাহ যতই বাড়ে দীর্ঘশ্বাস থেকে ততই উষ্ণতা ভেসে আসে।
গত রাতে ঘুমের ঘোরে পুরনো কম্বলের নিচ থেকে নিলু বলছিলÑ কি সুন্দর সোয়েটার!
আবার সকালে উঠেই আবার বলছেÑ
নিলু : মা এটা কী মাস?
মা : পৌষ মাস? ক্যান রে মা, সকাল সকাল এই কথা?
নিলু : মা এটা কি শীতকাল?
মা : হ রে মা, এটা শীত কাল।
নিলু : তাই এত ঠাণ্ডা? মা জানো একটা পুতুল দেখছি, কোনো কথা বলে না কিন্তু সুন্দর টুপিওয়ালা একটা সুয়েটার গায়ে দিয়ে আছে।
নিলুর মা চুপ করে আছে। শুধু
চুলোয় দেয়া ডেকচির টগবগে শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘরে একমুঠো চাল নেই, শুধু পানি জাল দিচ্ছে নিলুর মা। মেয়েটা খেতে চাইলে এই হচ্ছে, এই হচ্ছে বলে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে।
নিলু : মা ভাতের ফেন কই? এতক্ষণ লাগতাছে ক্যান?
নিলুর মা ভাবছে চালই ধুয়ে দেইনি, ফেন আসবে কৈ থাইকা।
নিলু : মা কথা কওনা ক্যা?
ঠিক সেই সময় রিকশার বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ শুনে নিলুর মা বললÑ
দেখ তোর বাপ আইছে মনে হয়।
নিলু দৌড়ে গেল ব্যাগটা নিয়ে এসে তার মাকে দিলো, কিন্তু নিলুর মা অবাক ব্যাগে তো চাল নেই। সামান্য আটাÑ এ দিকে গরম টগবগে পানি
নিলু রাত থেকে কিছু খায়নি। কিছু করার নেই আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে খেতে হলো, সেটাও তেল ছাড়া। তারপর নিলু বলছে-
বাবা খুব ঠাণ্ডা একটা টুপিওয়ালা তুলতুলে সোয়েটার ওই তো পুতুলের গায়ে দেয়া থাকে, ওই রকম একটা সোয়েটার আনবা।
নিলুর মা : আইচ্ছা আনবো। সেদিন রুটি খেয়ে কাটিয়ে দিলো সবাই।
এভাবেই চলছে কয়েক দিন তুলতুলে টুপিওয়ালা সুয়েটারের বাহানা। তিন দিন পর মধ্য রাতে ঘুম থেকে উঠে বলছে, আব্বা টুপিওয়ালা সোয়েটার আনছো?
নিলুর বাপ মধ্য রাতেও ঘামছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম কেরোসিনের কুপির আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে (ঋৎড়স যধহফ ঃড় সড়ঁঃয) দিন আনে দিন খায়। রিকশা চালিয়ে কোনোরকম পেটের ভাত জোগাড় হয়, কিন্তু মেয়ে নিলুর ঠাণ্ডা নিবারণের সেই টুপিওয়ালা সোয়েটার কেনার সামর্থ্যহীনতার কথা চিন্তা করতেই বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালে জমেছে।
নিলু : আব্বা ঠাণ্ডার দিনে ঘামতাছো?
সুয়েটারের টাহা নাই, তাই না আব্বা?
নিলুর বাপ চুপ করে আছে, নিলুর মাও কথা বলছে না।
হঠাৎ করে নিলু বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আব্বা আমার টুপিওয়ালা সোয়েটার লাগব না। গায়ের পুরনো, পাতলা, ছেঁড়া সোয়েটার দেখিয়ে এই তো আমার সোয়েটার আছে এটাই চলবে।
ছোট্ট মেয়ে অভাব বুঝতে শিখে গেছে। এই ভেবে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল সবাই, আর তার সাথে ঘুমিয়ে গেল টুপিওয়ালা সুয়েটারের গল্প।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ।

 


আরো সংবাদ



premium cement