২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক বিকেলে বইমেলায় : চারাগল্প

-

এক্সকিউজ মি!
সবেমাত্র বইমেলার মূলগেটে প্রবেশ করেছি। অমনি কানে এলো কথাটা। ঝট করে মুখ তুললাম। দেখি সামনে এক সুন্দরী ললনা দাঁড়িয়ে আছে। পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি। মুখটা হাসিতে ভরা। বললাম, আমাকে বলছেন?
জি।
বলুন।
প্লিজ! একটা অটোগ্রাফ। বলেই মেয়েটা আমার দিকে ঝট করে একটি বই এগিয়ে দিলেন।
দেখি আমারই লেখা উপন্যাস সেটা। মেঘ দুপুরের গল্প। ফিক করে হেসে দিলাম। অবশ্যই। অটোগ্রাফ দিয়ে বললাম, এই নিন।
তখন বিকেল। ফালগুন আসেনি এখনো। তবে আসি আসি করছে। চারদিকে হু হু বাতাস বইছে। ধুলোবালি উড়ছে। গাছের শুকনো পাতা মর্মর শব্দে ঝরে পড়ছে। এক ঝটকা বাতাস এসে মেয়েটির চুলে লাগল। বাতাসে তার চুল উড়ছে। কিছু চুল উড়ে এসে মুখের ওপর পড়ল। ডান হাত দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিতে দিতে বলল, লেখক, আমি আপনার বড় ফ্যান।
তাই নাকি?
হুমম। প্রতি বছর বইমেলায় আপনার যত বই বের হয়। আমি সংগ্রহ করি। পড়ি।
বাহ ! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। বলেই সামনে পা বাড়ালাম। যেতে হবে বই স্টলে। সেখানে কিছু পাঠক আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সেলসম্যান কল করেছিল। তারাও আমার অটোগ্রাফ চায়।
শুনুন!
পেছন থেকে আবার ডাকল মেয়েটি।
মুখ ঘুরিয়ে বললাম, কিছু বলবেন?
জি।
বলুন।
আপনার ক’মিনিট সময় হবে?
কেন বলুন তো?
আপনার সাথে বসে এক কাপ কফি খেতে চাই।
আমি কী বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একটু থমকে গেলাম। চুপ থাকলাম।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটি বলল, লেখক, উপন্যাসে আপনার কফি খাওয়ার ভঙ্গিমা দেখেই কিন্তু আমি আপনার কফির প্রেমে পড়ে গেছি। তাই আজ আপনার সাথে বসে এককাপ কফি না খেয়ে যাচ্ছি না। বলতে পারেন এটা আমার বহুদিনের শখ। আপনার উপন্যাস পড়ার পর থেকেই।
আমি হেসে দিলাম। আর না করতে পারলাম না। রাজি হয়ে গেলাম।
দু’জন বসলাম কফিশপে। মুখোমুখি। মুখোমুখি বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছি। সত্যিই মেয়েটির কফিতে চুমুক দেয়ার ভঙ্গিমার প্রশংসা করতে হয়। চুমুকের ভঙ্গিমা একেবারে অন্যরকম। নান্দনিক। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি তার কফি খাওয়া। দেখছি তার ঠোঁট। ঠোঁট দুটি কিভাবে একের পর এক ছুঁয়ে যাচ্ছে কফির মগ। কফি। কফির তলদেশ। বাইরে তখনো মাতাল হাওয়া বইছে। ঝরে পড়া পাতার মর্মর শব্দ কানে আসছে। কফির চুমুকের শব্দ কানে আসছে। আমিও মাতাল হয়ে যাচ্ছি। গন্ধে। পাগলের মতো কী যেন খুঁজছি। হ্যাঁ হ্যাঁ খুঁজে পাচ্ছি। খুঁজে পাচ্ছি নতুন কোনো উপন্যাসের থিম। কানে ক্রমেই বাড়ছে কফির চুমুকের শব্দ আর ঝরে পড়া শুকনো পাতার মর্মর শব্দ। আর মেয়েটির কাচভাঙা রিনঝিনি হাসির শব্দ।
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর


আরো সংবাদ



premium cement