২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শৈশবের হাতঘড়ি : বনের বাঁকে বাঁকে

-

ক্লাস ফোরে পড়ি তখন আমি। বয়স আনুমানিক পাঁচ-ছয় হবে। আমাদের ক্লাসে নাহিদ নামে একটি ছেলে ছিল। সে একদিন হঠাৎ হাতে ঘড়ি লাগিয়ে ক্লাসে আসে। আমরা সবাই অবাক হয়ে যাই। কারণ, তখনকার সময় হাতঘড়ি থাকা মানে বিশাল ব্যাপার। পুরো ক্লাসে ছাত্রদের মধ্যে শুধু নাহিদের হাতেই ছিল ঘড়ি। একদিন মাঠে দাঁড়িয়ে গল্প করছি সহপাঠীদের সাথে। হঠাৎ নাহিদকে জিজ্ঞেস করলাম ক’টা বাজে রে? নাহিদ তার হাতকে নাক বরাবর উঁচু করে ঘড়ির ওপর কিছুক্ষণ তীক্ষè দৃষ্টি দিয়ে উত্তর দিলোÑ ‘সাড়ে এগারোটা’। সে কি সত্য বলছে, না মিথ্যে বলছে তা জানার কোনো জো ছিল না। কারণ, আমি ঘড়ি চিনি না। ঠিক তখন মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন রমজান স্যার। দৌড়ে গেলাম স্যারের কাছে। ক’টা বাজে জানতে চাইলাম। স্যার বললÑ সাড়ে ন’টা। দ্রুত নাহিদের কাছে এলাম। নাহিদকে বললাম তোর ঘড়ি নষ্ট! কেন? জানতে চাইলো নাহিদ। বললাম, আমি এই মাত্র স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম ক’টা বাজে? স্যার বললÑ সাড়ে ন’টা। আর তুই বলছিস আরো দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে! নাহিদ অল্প হেসে উত্তর করলÑ বেটা! আমার ঘড়ির দাম বেশি, তাই আমারটায় বাজে বেশি। স্যারের ঘড়ির দাম আমার থেকে কম। কথাগুলো এখন মনে হলে বড্ড হাসি পায়। অথচ তখন সেটাই বিশ্বাস করে ছিলাম। সে দিন বাড়ি গিয়ে খুব জোর দিয়ে আম্মুকে ঘড়ি কিনে দিতে বললাম। আম্মুর কোনো আশ্বাস না পেয়ে কান্নাজুড়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর ঘড়ি হাতে আম্মু আমার কাছে এলো। ডান হাতটা আম্মুর হাতে তুলে দিলাম। পরম যতেœ আম্মু ঘড়িটা লাগিয়ে দিলো। আম্মুকে বললাম এটা তো পাতার ঘড়ি আর কম দামি। নাহিদের থেকে কম বাজবে। হ্যাঁ ঘড়িটা ছিল নারকেল পাতা দিয়ে তৈরি করা। আম্মু প্রশ্ন করলেনÑ পৃথিবীতে তোমার কাছে সবচেয়ে দামি কে? বললাম আমার আম্মু। আম্মু বলল, পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মানুষটা যদি তোমাকে কিছু দেয় সেটা কি সবচেয়ে দামি না? সে দিন আম্মুকে বুকে জড়িয়ে শুধু কেঁদে ছিলাম। তার পরের দিন আম্মুর বানানো ঘড়ি হাতে পরে আমিও স্কুলে গিয়েছিলাম। নাহিদকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ক’টা বাজে। নাহিদ বলল, এগারোটা। সেও আমাকে জিজ্ঞেস করল তোর ঘড়িতে ক’টা বাজে? সে দিন আমি বলেছিলাম, আমার ঘড়িতে দশ লাখটা বাজে। কারণ এ ঘড়ি আমাকে পৃথিবীর সবচে দামি মানুষ দিয়েছে, তাই আমার ঘড়ি সবার থেকে বেশি বাজবে।
ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ


আরো সংবাদ



premium cement