২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জানি না এখন কী করব : চারাগল্প

-

এত সহজে একটা সরকারি চাকরি পেয়ে যাবো, তা কখনো ভাবিনি। তাই খুশির খবরটা দিতেও কাউকে বাদ রাখিনি। এই আনন্দের সংবাদটা করিম স্যারকে নিজে গিয়েই দিতে হবে। নইলে তিনি মনে কষ্ট পাবেন। আমার জন্য তিনি অনেক কিছুই করেছেন। তাই যেতে হলো হাসানপুরে, আমার প্রথম কলেজে। ওই এলাকায় আমরা কয়েক বছর ছিলাম। সেখান থেকে আসার পর মাত্র একবার গিয়েছিলাম আর যাওয়া হয়নি। স্যারের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ শেষ করে আবার ফিরে আসছি। তখনো গাড়িতে উঠিনি। হঠাৎ একটা লোককে দেখে আমি থমকে দাঁড়ালাম। এ যে আমার মনির আঙ্কেল। দ্রুত এগিয়ে গেলাম।
আঙ্কেল আপনি এখানে!
রনি তুমি!
তিনিও আমাকে দেখে অবাক হলেন।
আমরা তো এখানেই থাকি। এত বছর হয়ে গেল তুমি একদিনও আমাদের বাসায় এলে না যে। প্রায় সময় সাজু তোমার কথা বলে।
আসলে...এরপর তার সাথে আরো কিছু কথা হলো। পরে ঠিকানাটা নিয়ে চলে এলাম। পুরনো দিনের কথাগুলো আজ আবার মনে পড়ল।
সাজুদের সাথে আমার পরিচয় ওকে পড়াতে গিয়েই। সাজু তখন ক্লাস ফাইভে পড়ত। তাকে পড়ানোর জন্য প্রত্যেক দিনই তাদের বাসায় যেতাম। ওর আব্বু-আম্মুর সাথে প্রথম দিন পরিচয় হয়ে যায়। কিন্তু তার একটা বড় বোনও ছিল। সে আমার সামনে আসত না। পর্দার ফাঁক দিয়ে প্রায় তাকে দেখতাম। অসাধারণ রূপসী ছিল। সাজু থেকে জানলাম তার নাম বীণা।
একদিন আন্টি মনে হয় কোথাও গিয়েছিল। সেদিন বীণাই আমার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো। তাকে দেখে তো আমি চমকে উঠলাম। সে এসে, ট্রেটা রেখে আবার চলে গেল। লজ্জায় একটুও চোখ তুলে তাকাল না। এ সুযোগে তাকে আরো ভালো করে দেখলাম। সত্যিই অসম্ভব রূপবতী একটি মেয়ে।
ধীরে ধীরে আমার প্রতি তার লজ্জাটা চলে গিয়েছিল। আমার সামনে সে আরো অনেকবার এসেছে। একসময় চোখে চোখ রেখে কথা বলতেও শিখেছে। প্রথমে সাজুর পড়া নিয়েই আমাদের মধ্যে কথা হতো। পরে আরো বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতাম। তাকে দেখতে, তার সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগত। এক সময় তার প্রতি আমার আকর্ষণ বেড়ে যায়। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। কিন্তু কখনো মনের কথাটি তাকে বলার সাহস হয়নি। তার চোখের চাহনি দেখেও বুঝতে পারিনি আমাকে নিয়ে সে ভাবে কি না। এভাবে দিন এগোতে লাগল। একদিন হঠাৎ আমার পরিবার চলে গেল আরেক জায়গায়। তারপর থেকে বীণার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। ওদের সাথে যোগাযোগের যে নম্বরটা ছিল তাও হারিয়ে গেল। ভাবলাম একদিন তাদের বাসায় যাব। কিন্তু ঝামেলার কারণে অনেক দিন যেতে পারিনি। পরে সুযোগ করে তাদের বাসার ঠিকানায় রওনা হলাম। সেখানে গিয়ে দেখি বাসা পরিবর্তন করে তারা অন্য কোথাও চলে গেছে। আর তাদের খোঁজ পাইনি। অনেকদিন বীণার জন্য মনটা খারাপ ছিল।
আজ বীণাদের বাসায় আবার যাচ্ছি। নতুন পাঞ্জাবিটা পড়ে সামান্য সাজগোজ করে রওনা হলাম। মনে মনে ভাবছি এতদিনে বীণা কেমন হয়েছে। নিশ্চই আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। আচ্ছা, সে আমাকে দেখে কী ভাববে, কী বলবে। না, হয়তো এমন কিছুই হবে না। যদি তার বিয়ে হয়ে যায়! বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড়ে উঠল। তারপরও একটা আশা নিয়ে পথে চললাম।
তাদের বাড়িতে যাওয়ার পর সবার সাথে দেখা হলো। কিন্তু বীণাকে তো দেখছি না। একবার ভাবলাম সাজুকে জিজ্ঞেস করি। কী মনে করে, তাকে আর বললাম না। অন্তরের আশাটা ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। বীণাকে বুঝি আবারো হারিয়ে ফেললাম।
নাস্তা করতে করতে আঙ্কেলের সাথে কথা হচ্ছিল।
এখন বড় পেরেশানির মধ্যে আছি।
কি হয়েছে আঙ্কেল?
আমাদের বীণাকে তো তুমি চেন। বীণার কথা শুনতেই মুখটা উপরের দিকে তুললাম।
প্রায় আট মাস আগে তাকে বিয়ে দিয়েছিলাম। কথাটি জানামাত্রই আমার অন্তরটা কেঁপে উঠল। তিনি ধীরে বলতে লাগলেন।
অনেক ভালো জায়গায় বিয়েটা হয়। কিন্তু আমাদের ভাগ্য খারাপ ছিল। বিয়ের এক মাসের মাথায় ওর স্বামী রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। মেয়েটা আমার মনে বড় আঘাত পেয়েছে।
এখনো তার পুরো জীবনটাই বাকি। বিয়ে তো আবার দিতেই হবে। এ জন্য আমরা পাত্রও দেখছি।
কথাগুলো শুনে আমি বিমূঢ় হয়ে গেলাম। আনন্দ-বেদনা চাঞ্চল্য সব একসাথে অনুভূত হলো। ভেবে পেলাম না কী করব। আমি যেন গোলক ধাঁধায় আটকে গেলাম। জীবনটা এত প্যাঁচাল কেন।
ফুলগাজী, ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement