২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সফল উদ্যোক্তা

পুরস্কার হাতে মো: মনসুর আলম মুন্না (ডানে) -


তরুণরা দেশের সম্পদ, এটি সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষিত তরুণ যখন চাকরি নামে সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে গিয়ে একটা সময় নিজেকে বেকার তালিকায় নাম লেখায়, তখন তারা সম্পদে রূপান্তর না হয়ে দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই সঙ্কটময় সময় অকুতোভয় এক তরুণ চাকরির পেছনে না ছুটে চাকরি দেয়ার পণ করে বসে। বলছিলাম দূরদর্শী তরুণ উদ্যোক্তা ও নির্মাণ ব্যবসায়ী হেক্সাগন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: মনসুর আলম মুন্নার কথা। ২৮ বছর বয়সে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। প্রচারবিমুখ মেধাবী এ তরুণ উদ্যোক্তাকে নিয়ে
লিখেছেন রিফাত কান্তি সেন

বাবার চাকরির সুবাদে মনসুর আলম মুন্নার বেড়ে ওঠা কক্সবাজারের উখিয়ায়। বাল্যকালের পুরোটা সময় কেটেছে উখিয়ায়, প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়িও সেখানে। ২০০৩-এর শেষ নাগাদ জন্মভূমি চাঁদপুরে প্রত্যাবর্তন। ভর্তি হলেন ফরক্কাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৭ সালে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুনোর পর ভর্তি হন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। মাধ্যমিক পড়াকালীন নিজে সৃজনশীল কিছু করার তাড়না অনুভব করেন। উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হিসেবে নিজে কিছু করার নানা ধারণা মাথায় জেঁকে বসে। মাধ্যমিক পরীক্ষার বিরতিতে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন পোলট্রি ফার্ম, তবে সেটা বেশি দিন না করে ঢাকায় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন।
উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা মাথায় এলো কী করে?
২০০৭ সালে মাধ্যমিকের শেষান্তে পোলট্রি ফার্মের মাধ্যমে উদ্যোগের শুরু। অনভিজ্ঞতার দরুন বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। এরপর নিজেকে তৈরি করা। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং সুযোগের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। ২০১৪ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার তাকে একটা চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্টের দায়িত্ব দেন। তিনি চেয়েছিলেন এ প্রজেক্টটা মুন্নাই দেখুক। তার নিজের লোক দিয়ে যেন সম্পন্ন করেন তিনি। সেই সাথে আরো বলেন, এ প্রজেক্ট করতে গেলে লোকসান হবে এবং সেই লোকসানের টাকা তিনি দিয়ে দেবেন। তখন তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে লোকবল সংগ্রহ করে নিজ দায়িত্বে কঠোর তত্ত্বাবধানে প্রতিশ্রুত তারিখের আগে সম্পন্ন করেন এবং লোকসানি প্রজেক্টকে কিছু দিনের ব্যবধানে লাভজনক প্রজেক্টে রূপান্তর করেন। তখন নিজের আত্মবিশ্বাসটা আরো দৃঢ় হয়। যেহেতু তিনি একটা লোকসানি প্রজেক্টকে কঠোর পরিশ্রম, দক্ষতা ও মেধা দিয়ে লাভজনক প্রজেক্টে রূপান্তর করতে পেরেছেন, সেহেতু ভেবেছেন তিনি পারবেন উদ্যোক্তা হতে। তখন থেকেই তিনি ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন।
সারা বিশে^ নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চাই
মনসুর আলম মুন্না বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে বেশ কিছু প্রজেক্টের একযোগে কাজ চলছে। সে প্রজেক্টগুলো প্রতিশ্রুতি অনুসারে হস্তান্তর করার লক্ষ্যে কাজ করছি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টটি চলমান।’
তিনি আরো বলেন, ‘সবসময় শুনি ভারতীয় নানা প্রতিষ্ঠান ও ভারতীয়রা আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক ও অন্যান্য পদে কাজ করছে। ভারতের মতো বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান শক্তির দেশে বিভিন্ন ধরনের এক হাজার ৪২৪টি ভবনের প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি রুপি মূল্যমানের একটা প্রজেক্ট বাংলাদেশের একটা প্রতিষ্ঠান করছে তা দেশ ও আমাদের কোম্পানির জন্য গর্বের। আমি ও আমাদের কোম্পানি এ প্রজেক্টে আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি ও মেধা দিয়ে গুণগত মান ও সুনাম অক্ষুণœ রেখে সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চাই
১৬ কোটি মানুষের দেশে মানুষের নানা রকম চাহিদা। এ চাহিদা মেটাতে পারলে দেশের অনেক বড় একটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব; দেশের সব জনগণের অভ্যন্তরীণ নানা চাহিদা মেটাতে। নানা রকম ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন। নিজস্ব উদ্যোক্তা ছাড়া এ চাহিদার জোগান দেয়া সম্ভব নয়। বেকারত্ব বাংলাদেশের অনেক বড় সমস্যা। উদ্যোক্তা তৈরি করা ছাড়া এ বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। উদ্যোক্তারা বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে নতুন ও সহজ সমাধানে পারদর্শী। উদ্যোক্তারাই পারবে এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করে আগামীর অর্থনৈতিক ভিত গড়ে দিতে। বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে চাইলে উদ্যোক্তা তৈরির বিকল্প নেই। আগামীর বাংলাদেশ তরুণ উদ্যোক্তাদের ওপর নির্ভরশীল। তাই দেশ ও জাতির উন্নয়নে তার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই
মনসুর আলম মুন্না সব সময়ই আশাবাদী স্বপ্নবাজ, তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে আমরণ কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাসী। বর্তমানে তার নানা প্রতিষ্ঠানে ১২০ জন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা, পাশাপাশি অসংখ্য শ্রমিক কাজ করছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, ২০২২ সাল নাগাদ তিন হাজার প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও ২০ হাজার শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থানের।
যেসব প্রজেক্ট ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত
বর্তমানে তিনি নির্মাণ ব্যবসায় ছাড়াও অনেক কোম্পানিতে যুক্ত আছেন। বাগেরহাটে ৯ একর জমির ওপর সমন্বিত খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে অর্গানিক প্রক্রিয়ায় শাকসবজি চাষ করা হচ্ছে; পাশাপাশি ডিম ও গোশত উৎপাদনের লক্ষ্যে এক লাখ হাঁস পালন করা হচ্ছে। দুগ্ধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য ও গোশত উৎপাদনের জন্য এক হাজার উন্নতমানের গরু পালন করা হচ্ছে। তা ছাড়া চেয়ারম্যান হিসেবে যুক্ত আছেন, ডি স্মার্ট-অনলাইন নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, ডি স্মার্ট টেক্সটাইলস লিমিটেড (টেক্সটাইলস প্রোডাক্ট বায়িং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি), ডি-ইভেন্টস (ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি), গ্র্যাপভিউ (অ্যানিমেশন, অগমেন্টেড অ্যান্ড ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সার্ভিস প্রোভাইডার), দ্য বেঙ্গল টেলিগ্রাফ (অনলাইন নিউজ পোর্টাল), প্যারাসেল সফটওয়্যারস (সফটওয়্যার সল্যুশন কোম্পানি)। তা ছাড়া বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য রিসাইক্লিনিং প্ল্যান্ট, বর্জ্যভিত্তিক গ্যাস উৎপাদনের সাথে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা, ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের কাজ চলছে।
এ ছাড়াও তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশর ‘প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বিভাগের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্বরত।
অর্জন
বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক ও চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেবো কর্তৃক ২০১৭ সালে তারই একটি উদ্যোগ সেরা উদ্যোগ হিসেবে পুরস্কৃত হয় এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থপনা নিয়ে গবেষণাপত্র গৃহীত হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement