২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জ্যোৎস্না রাতে তার সাথে প্রমাদ বকাবকি : চারাগল্প

-

আমি পূর্বাকাশের উদীয়মান লাল টকটকে সূর্যটা দেখিনি। আমি পশ্চিমাকাশের গোধূলি লগ্নের মায়াবী সৌন্দর্য দেখিনি। দেখিনি দক্ষিণা বাতাসে শত শত কাশফুলের নৃত্যাভিনয়। দেখিনি উত্তরে বয়ে চলা নদীর মৃদু স্রোতধারার অপার মহিমা। অন্ধকারে যে প্রদীপ তুমি আমার হাতে দিয়েছ, সে প্রদীপের মৃদু আলোয় আমি কেবল দেখেছি তোমার কপালের সেই লাল টিপের সম্মোহন। তোমার দু’ঠোঁটে লেপ্টে থাকা মোলায়েম হাসির ঝিলিক। দুই গালের ওপর ভেসে ওঠা টোলের আহ্বান। তাই তো আমি দেখতে চাইনি নাটোরের বনলতা সেনের চুলের ঝলকানি; কিংবা যাচাই করতে চাইনি লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদের ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু। এভাবেই রুবির প্রশংসা করছিল রাসেল। এতক্ষণ রাসেলের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুনছিল রুবি। এবার সে চোখ খুলল। রাসেলের চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসল। রাসেলের গাল টেনে বলল, হয়েছে; আর প্রশংসা করতে হবে না।
Ñসত্যি কথা বলতে কি, তোমার মতো একজন নারী আমি বলব মহিয়সী নারী আমার পাশে না থাকলে, তোমার অনুপ্রেরণা না পেলে, আমি এতদূর আসার ধৈর্য ও শক্তি হয়তো বা পেতাম না। রাসেলের ঠোঁটে হাতের আঙুল চাপা দিলো রুবি। বলল, এমন করে বলো না। তোমাকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্যই যে আমার জন্ম।
রাসেল রুবির বিয়ের বছর এখনো পূর্ণ হয়নি। ছয় মাস হলো এ ছাদওয়ালা একতলা বাসায় তারা উঠেছে। সাধারণত তারা রাতে ছাদে উঠে না। আজই প্রথম জ্যোৎস্না রাতে তারা ছাদে উঠেছে। সন্ধ্যা হয়েছে ঘণ্টাখানেক আগে। রাতের আকাশ খুব পরিষ্কার। চরিদিকে তারা আর মধ্যমণি চাঁদের আলোয় পৃথিবী যেন অবগাহন করছে। রুবি আবার বলল, ও হ্যাঁ, জানো? আজ কিন্তু তোমার চাকরির বছর পূর্ণ হয়েছে।
Ñতাই নাকি? একটু চঞ্চল হয়ে উঠে রাসেল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার কপালে একটি ভাঁজ পড়ে। মিনমিন করে বলতে থাকে, রুবি, চাকরি পাওয়ার আগের সময়ের কথা মনে পড়লে আমি এখনো আঁতকে উঠি।
Ñকেন কেন?
কারণ, তখনকার প্রতিটা নিঃশ^াস ছিল আমার জন্য কঠিন যন্ত্রণার। একদিকে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দিতে জুতার তলা ক্ষয়। অন্য দিকে চাকরির ব্যাংক ড্রাফট কিনতে কিনতে একেবারে ফতুর অবস্থা। তখন তোমার গাঁটের পয়সা খরচ করে আমাকে বই কিনে দিয়েছ; এমন কি আমার মাসের খরচটা পর্যন্ত তুমি ম্যানেজ করেছ। আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। সে সময় তোমার অনুপ্রেরণাই ছিল আমার একমাত্র চালিকাশক্তি। একসময় আমার মনে হয়েছিল অভাবের তাড়নায় তোমাকে হারাতে বসেছি বুঝি।
Ñআমার কিন্তু মোটেও তেমন মনে হয়নি। কারণ আমি তোমার চাকরিকে ভালো বাসিনি। আমি ভালোবেসেছিলাম তোমার চেতনা আর আদর্শকে। তুমি সে দিন চাইলে তোমার হাত ধরে আমি চলে আসতাম। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম, তোমার বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য অন্তত তোমার একটা চাকরি হোক।
Ñজানো রুবি, তোমার বাবা সর্বশেষ যেদিন আমাকে তোমাদের বাসায় ডেকে নিয়েছিলেন, সে দিন কী বলেছিলেন?
Ñকী বলেছিলেন?
Ñতিনি অত্যন্ত নরম স্বরে বলেছিলেন, দেখো বাবা, আমার একমাত্র মেয়ে তোমাকে ভালোবেসেছে। তোমাদের ভালোবাসাকে আমি অবহেলা করতে পারি না, বরং শ্রদ্ধাই করি। ভালোবাসা খারাপ নয়। আমরাও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছি। কিন্তু বাবা, তোমার পরিবারের অবস্থা তেমন সচ্ছল না। তোমার চাকরি হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিতে পারি না। আমি কেন, কোনো বাবার পক্ষেই এটা সম্ভব নয়। এ দিকে মেয়েরও বয়স বাড়ছে, সেই সাথে আমাদের চিন্তাও। আমি তোমাকে ছয় মাস সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে চাকরির কোনো ব্যবস্থা করতে না পারলে আমার মেয়ের আশা তুমি ছেড়ে দিও। জানো, সে দিন রাতে আমার দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ভয়ানক বেদনাবিদুর একটা রাত আমি কাটিয়েছিলাম। সারারাত ছাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, পৃথিবী এত নিষ্ঠুর কেন? মা বলেছিলেন, তার এক দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই নাকি সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা। তিনি নাকি আমার চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবেন, বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ চান। একবার ভেবেছিলাম ভিটেমাটি বিক্রি করে কথিত ওই মামাকে ঘুষ দিয়ে একটা চাকরি নিয়ে নিই। কিন্তু পারিনি। বিবেক আমাকে বাধা দিচ্ছিল। এত ভালো রেজাল্ট করেও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাকে চাকরি নিতে হবে? বলতে বলতে রাসেলের দু’চোখের কোণে পানি এসে যায়।
ওড়না দিয়ে আলতো করে রাসেলের চোখ মুছে রুবি। বলে, আমার একটা কথা রাখবে? এ দেশ ভালোবেসে যেহেতু তোমাকে একটি সম্মানজনক চাকরি দিয়েছে। তোমাকে সম্মানের আসনে আসীন করেছে। সুতরাং সবসময় চেষ্টা করবে নিজে ঘুষ, দুর্নীতি থেকে বিরত থাকতে; অন্যকে ঘুষ, দুর্নীতি থেকে দূরে রাখতে। কখনো অন্যায়ের আশ্রয় নেবে না। কারণ আমরা আমাদের অনাগত শিশুর জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই।
Ñঅবশ্যই। রুবি, এ দেশ আমায় ভালোবাসার পরশ। এ দেশ আমার মায়ের মমতা। আমার মাকে যেমন আমি কলঙ্কিত করতে পারি না, তেমনি এ দেশকে আমি কলঙ্কিত করতে পারি না। রাসেল রুবির থুতনিতে ধরে বলল, এই রুবি, এবার একটু হাসো তো। কতক্ষণ তোমার এই চাঁদ মুখের হাসি দেখি না।
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

 


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল