২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কমছে অতিথি পাখির সংখ্যা

-

অতিথি পাখির মেলাখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জলাশয় পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে শীতের শুরু থেকেই। গাছপালায় ঢাকা সবুজ এ ক্যাম্পাসের বুকে আছে বেশ কয়েকটি জলাশয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এ জলাশয়গুলোকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিচ্ছে শীতের অতিথি পাখিরা। তাই অতিথি পাখি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেন একে অপরের পরিপূরক। প্রতিবছর ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে আসে অসংখ্য অতিথি পাখি। তবে দিন দিন পাখির আগমনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গবেষকেরা মনে করছেন, পাখিদের বিরক্ত করায় অতিষ্ঠ হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছে পাখিরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাখিদের বিরক্ত না করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলো মানছে না কেউ। লেকের পাশের রাস্তা দিয়ে চলছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য উচ্চশব্দে মাইকিং, শোভাযাত্রার বাদ্য-বাজনা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বহিরাগতদের গাড়ি, মোটরসাইকেলের হর্নের বিকট শব্দ। এমনকি লেকের পাড়ে গাড়ি রেখে উচ্চশব্দে গান শুনতেও দেখা যায় দর্শনার্থীদের। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্টসংলগ্ন লেকটি পাখিশূন্য হয়ে পড়ছে।
মানিকগঞ্জের নিলুয়ার বিল। বিলটির অবস্থান মানিকগঞ্জের দুই উপজেলা ঘিওর এবং দৌলতপুরের ঠিক মধ্যখানে। পাশ দিয়েই চলে গেছে আরিচা-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক। সরেজমিন গত শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শান্ত জলের বুকে কচুরিপানার সবুজ গালিচার মাঝে ঝাক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল। উড়ে চলা পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত চারপাশ। মানিকগঞ্জের এই নিলুয়ার বিল প্রতিবছর শীত মওসুমে হয়ে উঠে যেন পাখির আবাসস্থল। এবারও এ বিলে বাসা বেঁধেছে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখিসহ হাজারো অতিথি পাখি। কিন্তু পরিমাণে গত বছরের প্রায় অর্ধেক।
পাখি ও পরিবেশবিষয়ক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় আমাদের দেশে অতিথি পাখির সংখ্যা কমেছে শতকরা ৪০ ভাগ। এর কারণ হিসেবে অনেকেই জানান, মানবসৃষ্ট নানা কারণে কমে যাচ্ছে অতিথিদের সংখ্যা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সদস্য মো: মিজানুর রহমান জানান, অতিথি পাখি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো, জনসচেতনতার অভাব এবং শিকারিরাও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবহিত নয়। পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন নেত্রী লক্ষ্মী চ্যাটার্জী বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকার, হত্যা, আটক ও ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ। যার শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা। আর আমরা নিজ অবস্থান থেকেই পারি এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার। একটু সচেতনতাই পারে আমাদের দেশটাকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত করে রাখতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জরিপ বলছে, ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখি আসে। এ সময় ৯০ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা যায়। এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৫ প্রজাতিতে। যার মধ্যে ১২৬টি প্রজাতি দেশীয় এবং ৬৯টি অতিথি পাখি। এবার জাবির এ আঙ্গিনায় পাখির সমাগম ঘটেছে খুবই কম। পাখি গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘অতিথি পাখিরা এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ মনে করে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতার মাধ্যমে পাখিদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ বসবাসের উপযোগী হওয়ায় সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পাখিরা দল বেঁধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। সাধারণত মানুষের পদচারণা, গাড়ির হর্ন এবং শোরগোলসহ নানাবিধ কারণে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন তুলি জানান, ক্যাম্পাসের জলাশয় পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে শীতের শুরু থেকেই। কিন্তু এ বছর পাখির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কমে যাচ্ছে অতিথি পাখি
শীতের মওসুমের শুরু থেকে হিমালয় এবং সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে অতিথি পাখিরা আমাদের দেশের জলধারাতে আসতে শুরু করেছে। ছয়-সাত বছর আগেও এখানে নানা প্রজাতির প্রচুর পাখি আসত, এখন তা অনেক কমে গেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে। হিমালয়, সাইবেরিয়া, নেপাল, জিনজিয়াং এবং মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু প্রজাতির পাখির জন্য শীত মওসুমেও এসব এলাকা বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে।
তবে পাখি বিশেষজ্ঞ আব্দুস হান্নান দিনার বলেন, জলাভূমি কমে যাওয়ায় এবং জলাশয় থেকে অনেক প্রজাতির মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হওয়ায় অতিথি পাখি আগমনের সংখ্যা কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য বাস্তুসংস্থান এবং পরিবেশের ওপর হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।
উপকারী অতিথি পাখি : শীতের অতিথি পাখিগুলো আমাদের দেশে এসে সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত করার পাশাপাশি আমাদের যথেষ্ট উপকার করে। তাই অতিথি পাখিগুলোকে অতিথির মর্যাদা দেয়া উচিত। প্রকৃতির ক্ষতিকর পোকা মাকড়, কীটপতঙ্গ, ইঁদুর খেয়ে ওরা ফসলের ও জলজ প্রাণীর সুরক্ষা করে। কিছু পাখি প্রাণী ও উদ্ভিদের বংশ বিস্তারে সাহায্য করে। গাছের ডালে আশ্রয় নেয়া পাখিগুলো গাছের ফাঁকে থাকা পোকামাকড় ধরে খায়। ফলে গাছপালা পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা পায়।
সুরক্ষিত হোক অতিথি পাখির বিচরণক্ষেত্র : পাখি প্রকৃতির অলঙ্কার। এ অলঙ্কার ধ্বংস করা মানে পরিবেশ ধ্বংস করা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশ ধীরে ধীরে অতিথি পাখির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু আইন দিয়েই পাখি শিকার বন্ধ করা যাবে না, যদি না সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করে গড়ে তোলা না যায়। আমাদের চিত্ত আনন্দের উপাদান এ পাখিরা কিন্তু জীবন ও জীবিকার আশায় হাজারো পথ পাড়ি দিয়ে দিনের পর রাত উড়ে উড়ে আসে আমাদের দেশে। আর এত পথ পাড়ি দিয়েও শেষ রক্ষা হয় না। আমাদের বেআইনি ক্ষুদ্র আনন্দের শিকার হয়ে ওদের প্রাণ দিতে হয়। পাখি শিকার বন্ধ করে আমরা কি এই অতিথিদের প্রতি আরো সদয় ও ভালোবাসার পরিচয় দিতে পারি না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান

সকল