বিড়ম্বনা : চারাগল্প
- আতাউল হক মাসুম
- ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
রাকিবকে এ ধরনের উদ্ভট পরিস্থিতিতে পরতে হবে তা সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। তার ক্লাস সেভেন পড়ুয়া স্টুডেন্ট তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাব দেয়ার ধরনও রীতিমতো অবাক করেছে তাকে। আমরা ভাবী সব কিছু আবিষ্কার হয়তো হয়ে গেছে, আসলে তা সত্য নয়। দিন যত এগুবে প্রয়োজনের তাগিদে মানুষের কৌশলের উৎকর্ষতাও তত সাধিত হবে। ক্লাস সেভেনের মেয়ে জিনিয়া রাকিবের হাতে চারভাজ করা একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল, স্যার আমি একটা রচনা লিখেছি, কেমন হয়েছে পড়ে জানাবেন। রাতে হঠাৎ কাগজটার কথা মনে পড়তেই রাকিব তা খুলে দেখে জিনিয়া ছন্দ-কবিতার সমন্বয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। একদম অপ্রস্তুত হয়ে গেল রাকিব। ক্লাস এইটে পড়তে রাকিব ওদের ক্লাসের নীরা নামের একটা মেয়েকে পছন্দ করত। মামাত ভাইয়ের সহযোগিতায় একটা প্রেমপত্র লিখে মেয়েটিকে দিলে সে সরাসরি হেড স্যারকে বলে দেয়। তারপর রাকিবের যা হাল হয়েছিল! মনের অজান্তেই হেসে ওঠে সে।
জিনিয়াকে কি বলে বোঝাবে সব আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল রাকিব। এ বয়সে এমন পাগলামি অনেকেই করে। তবে এ ঘোরটা আসে যত দ্রুত, তেমনি চলে যায়ও দ্রুতই। ঘোর কেটে যাওয়ার পর মেয়েরা হয়তো নিজেই লজ্জিত হয়। অনার্সে পড়তে বেশ কিছু প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে রাকিব। সে ছেলে মানুষ। প্রেমের চিঠি পড়তে তার ভালোই লাগে। কিন্তু টিউশনি করে পড়ার খরচ জোগাতে হয় তাকে, তাই এগুলো প্রশ্রয় দেয়ার প্রশ্নই আসে না। রাকিব বলল, জিনিয়া তোমার এখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সময়। এ সময় কোনো ভুল করলে সারাজীবন আফসোস করতে হবে। তুমি একমনে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হও। আমার চেয়ে হাজারগুণ যোগ্য ছেলে আমিই তোমার জন্য এনে দেবো। আর এরপর যদি তোমার পড়তে অসুবিধা হয় তবে আমি কাল থেকে আসব না। জিনিয়ার চোখে জল দেখে রাকিব কী করবে ভেবে পেল না। এ বয়সের মেয়েরা বড্ড জেদি হয়ে থাকে। একটুতেই আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসতে পারে। রাকিব জিনিয়ার হাতের ওপর হাত রেখে মমতা নিয়ে বলল, জিনিয়া আমি তোমাকে আমার বোনের মতোই ভালোবাসি। আমার ছোট বোনের বয়স প্রায় তোমার সমান। ও আমাকে খুব ভালোবাসে। ভয়ও পায়। বলে হাসতে লাগল রাকিব। আর বিপত্তিটা ঘটল তখনই। ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসে জিনিয়ার আম্মু দেখল রাকিব জিনিয়ার হাত ধরে হাসছে। তার মাথা গরম হয়ে গেল। পাজি, ছোটলোক মুখে যা আসে তাই বলে রাকিবকে ভর্ৎসনা করতে লাগলেন তিনি। জিনিয়া কিছু বলতে গিয়েও মায়ের অগ্নিমূর্তি দেখে দমে গেল। রাকিব কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে গেল।
রাকিব আর ওমুখো হয়নি কোনোদিন। সে ইচ্ছা করলে সে দিন সত্য কথা বলতে পারত। তাতে হয়তো টিউশনি টিকত, কিন্তু জিনিয়াকে লজ্জিত হতে হতো। রাকিব কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছিল জিনিয়ার সাথে যেন কখনো দেখা না হয়। কেননা, আমাদের দেশের মেয়েরা উপকারীর প্রতি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে, সেখানে তো মেয়েটা রীতিমতো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তার চেয়ে বরং সময়ের সাথে সাথে এমনিতেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু জিনিয়ার মা যে তাকে ভুল বুঝেছে, তার কী হবে? কি আর হবে, থাক না কিছু ভুল না ভাঙাই!
বছর তিনেক পরের কথা। রাকিবের সরকারি হাইস্কুলে চাকরি হয়েছে। প্রথম নিয়োগ ছিল নেত্রকোনা গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে। এক বছর পর নানা ঝক্কিঝামেলার পর সে পাবনাতে বদলি হয়ে এসেছে। এসেই বিভিন্ন দায়িত্বের চাপে পড়েছে রাকিব। তা ছাড়া এই শহরের ছেলে বলে তার কাছে হেড স্যারের প্রত্যাশাও বেশি। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলছে। ডিউটি দিতে এসে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে রাকিব। জিনিয়া পরীক্ষা দিতে এসেছে। সেও এসএসসি দেবে এবার। কী আজব! মেয়েটার কথা সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল। জিনিয়াও তাকে দেখে বাকরুদ্ধ, কিছুই বলতে পারছিল না সে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাকিব কাছে গিয়ে কুশল জানতে চাইল। জিনিয়ার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের সেই উচ্ছলতা নেই। স্যার তার সাথে কথা বলায় তার বান্ধবীরা রীতিমতো বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। জিনিয়া শুধু বলল, আপনি আমাদের বাসায় আসবেন প্লিজ। আম্মু অসুস্থ। আপনাকে দেখলে খুব খুশি হবে। সে দিন আপনি চলে যাওয়ার পর আমি আম্মুকে সব
বলে দিয়েছিলাম। তারপর আম্মু আপনাকে অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। আপনি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন। জিনিয়ার চোখে অশ্রু চিকচিক করছিল? কিন্তু তা আনন্দ না বেদনার, কে জানে!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা