২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘুরে এলাম মালয়েশিয়া

-

প্রাচ্যের যে দেশটি এক অদ্ভুত মায়ামন্ত্রে পাশ্চাত্যের আধুনিকতার সাথে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে, তার নাম মালয়েশিয়া। জাপান ট্যুর শেষে দুই দিনের জন্য গেলাম মালয়েশিয়া। এই প্রথমবার মালয়েশিয়া ভ্রমণে এলাম। তাই এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি অনুভব করলাম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া যেন রূপকথার রাজ্য। বড় বড় ইমারত, ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট, নীল সমুদ্র, মেঘে ঢাকা পাহাড়ের যুগলবন্দীতে মালয়েশিয়া এক কথায় অসামান্য। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর এসে পৌঁছলাম। একদিকে বড় বড় হোল্ডিং কাচের ইমারত, অন্যদিকে সবুজ বন ও বাগানে সাজানো শহর কুয়ালালামপুর। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা সিটি ট্যুরে বেরিয়ে পড়লাম।
এ শহরের বৈশিষ্ট্য এর স্থাপত্য শিল্প। বিশেষ করে ইনডিপেনডেন্স স্কোয়ারে অবস্থিত সুলতান আবদুল সামাদ বিল্ডিং। ভিক্টোরিয়ান এবং মুরিশ কারুকাজের মিশেল এতে লক্ষণীয়। এরপর একে একে ঘুরে দেখলাম মেনারা অলিম্পিয়া, ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি। ন্যাশনাল মনুমেন্ট ও পুত্রাজয়াব্রিজ। আর্ট গ্যালারি ও ন্যাশনাল মনুমেন্ট দেখে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে ধারণা পেলাম। কুয়ালালামপুরের স্মৃতি ধরে রাখতে আমার ক্যামেরায় বেশ কিছু ছবি তুলে নিলাম। যা কিছুই দেখছিÑ পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে সাজানো-গোছানো। রাস্তায় নেই কোনো যানজট ও শব্দদূষণ। সরকার ও জনগণ সবাই তাদের ঐতিহাসিক স্থাপনা, আধুনিক স্থাপনা, পার্ক, ব্রিজ সব কিছুর প্রতি বেশ যতœশীল ও আন্তরিক। আর এ জন্যই তো মালয়েশিয়া পর্যটন শিল্পে প্রতি বছর প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। আর পর্যটকদের ভিড় সারা বছর এখানে লেগেই থাকে। এবার দুপুরের খাবার পালা। মালয়েশিয়ায় নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। মালয় থেকে শুরু করে ক্যানটনিজ, পেকিং, তাইওয়ানিজ, জাপানিজ, থাই, কোরিয়ান খাবার পাওয়া যায় প্রায় সব রেস্তোরাঁতে। ভারতীয় এবং ইন্দোনেশিয়ান খাবার সারা মালয়েশিয়াজুড়ে খুব জনপ্রিয়। আমরা একটি সুন্দর সাজানো রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম, মালয়েশিয়ান ও ভারতীয় খাবারের আইটেম দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে প্রথমে গেলাম মালয়েশিয়ার রয়্যাল প্যালেসে। প্যালেসটি যেন মালয়েশিয়ার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আভিজাত্য ও সভ্যতার নিদর্শন। এরপর একে একে দেখলাম শ্রী মহামারিয়াম্মাম টেম্পল, সেন্ট মেরিজ ক্যাথিড্রাল। সন্ধ্যা নেমে এলো। আর সন্ধ্যাবেলা কুয়ালালামপুরে আলো ঝলমল করে ওঠে। রাতের বেলায় হেঁটে কুয়ালালামপুর ঘোরার অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। বিভিন্ন রাস্তায় অনেক ছোট্ট স্টল, আর আছে নানা ধরনের বার আর কফি শপ। কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখলাম রাতের কুয়ালালামপুরের অন্যরকম সৌন্দর্য। কুয়ালালামপুরে রয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতর স্কাইস্ক্রেপার পেট্রোনাস টাওয়ার। রাতের বেলায় ১২০ তলার এ টাওয়ারের সৌন্দর্য আলাদা। হোটেলে ফেরার আগে কিছু কেনাকাটা করে নিলাম। কেনাকাটার জন্য কুয়ালালামপুর সব থেকে ভালো জায়গা। এখানে আছে সব বিলাসবহুল শপিং সেন্টার ও প্যাভিলিয়ন কমপ্লেক্স। পরের দিন সকালে আমরা রওনা করলাম কুয়ালালামপুর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টেম্পলার পার্কে। আমরা একটি গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ যাত্রাবিরতি করলাম। ঘুরে দেখলাম আরেকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘বাটুকেভস দেবতা সুব্রা মনিয়াম বা মুরুগুয়ার এক বিশাল সোনার মূর্তি।
আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে। ঝির ঝির হালকা ঠাণ্ডা বাতাস, আকাশের কোমল নীলরঙ, সাদা মেঘেঢাকা পাহাড়, সবুজ আর সূর্যের সোনালি আলো পরিচ্ছন্ন কংক্রিটের রাস্তায় আছড়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে নির্মল প্রকৃতির এ দৃশ্য বড়ই মনোরম। টেম্পলার পার্কে পৌঁছে গেলাম। নাম না জানা নানারকম উঁচু গাছ, পামট্রি আর অসংখ্য প্রজাতির বিচিত্র বর্ণের ফুলের সমাহার নিয়ে প্রকৃতি যেন পসরা সাজিয়েছে এখানে। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পায়ে চলার পথ। পাখির কাকলি, অসংখ্য নাম না জানা ফুল গাছের মধ্য দিয়ে হাঁটতেই চোখে পড়ে যাবে জলপ্রপাত এবং উপহ্রদ।
পেরেস্থিয়ানে বেসার এবং পেরেস্থিয়ান কেসিলÑ মালয়েশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর দুই দ্বীপ এখানে অবস্থিত। এখানে স্কুবা ডাইভিংয়ের ব্যবস্থা আছে। ছবির মতো সুন্দর। কোনো শিল্পী যেন তার আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রকৃতির ক্যানভাসে এঁকেছে তার মনের মতো ছবি। পেনাঙ্গতে পৌঁছে রাতটা আমরা একটি রিসোর্টে থাকলাম। রিসোর্টটি সত্যিই চমৎকার। নির্মল প্রকৃতির মধ্যে, অকৃত্রিম শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ, কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাওয়ার হাতছানি। ভোরের সূর্যোদয় দেখা এখানে এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। এমন সানরাইজ ও সানসেট দেখার সুন্দর জায়গা খুব কমই মেলে। সকালে নাশতা সেরে আবার আমরা কুয়ালালামপুরে রওনা করলাম। এবার নিজের দেশে ফেরার সময় হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক-আধুনিক স্থাপনা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, অ্যাডভেঞ্চার, ফুড ও শপিং সবমিলিয়ে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে ভরিয়ে দিলো মালয়েশিয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল