২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফুলে ফুলে মধু

-

মানিকগঞ্জের ঘিওরে সর্বত্রই সরিষা ফুলের হলুদ বরণে সেজেছে ফসলের মাঠ। দিগন্তজোড়া মাঠের যত দূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ রঙের মাখামাখি। শীতের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে হলুদে আর মৌচাষিরা ব্যস্ত মধু সংগ্রহে। ঘিওর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে মওসুমি মৌচাষিদের তৎপরতা। বর্তমানে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ আমাদের দেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।
ঘিওর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন সরিষা মাঠে অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৩৫-৪০ টন মধু সংগ্রহ হবে, এমন আশাবাদ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। মানিকগঞ্জের কৃষকরা বুঝে গেছেন, মৌমাছি মধু সংগ্রহ করলে পরাগায়নের মাধ্যমে ফসল ভালো হয়। তাই মওসুমি মৌচাষিরা আসায় জেলায় সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাবে প্রায় ১৫ শতাংশ।
জীবন ও জীবিকার তাগিদে মৌচাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে এবং উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে জাতীয় উন্নয়নে রাখছে বিশেষ ভূমিকা। খুলনা, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী থেকে প্রায় শতাধিক খামারি এসেছেন মানিকগঞ্জে। তারা মানিকগঞ্জ সদর, ঘিওর, সাটুরিয়া, দৌলতপুর, হরিরামপুর, শিবালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মধু সংগ্রহের কাজ করছেন।
খুলনার মৌচাষি খালেক মৃধা বলেন, ‘প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে আমাদের মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এটি চলবে মার্চ পর্যন্ত। জেলায় প্রায় শতাধিক খামারি মধু সংগ্রহের কাজ করেন। এ বছর মধু সংগ্রহের কাজে আমরা ৩৫০টি বাক্স ব্যবহার করছি।’
সাতক্ষীরার কলারোয়ার মৌচাষি বিল্লাল মিয়া জানান, ‘১৫ বছর ধরে সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের কাজ করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মধু সংগ্রহে যে মৌমাছি ব্যবহার করা হয়, এরা আমাদের দেশী মৌমাছি নয়। এফিসমেলিফ্রা জাতের অস্ট্রেলিয়ান মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। মৌমাছিগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আনা হয়।’
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই সরষে ক্ষেতে মধু সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে বসেছেন জামালপুর জেলার মো: রাজন ও শফিকুল ইসলাম। তারা জানান, মধু সংগ্রহ করে তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার কাহিনী। তাদের বাক্সের সংখ্যা এক শ’র কাছাকাছি। প্রতি মণ মধু ৮-১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন ঢাকার যাত্রাবাড়ি ও আশুলিয়ার এক পাইকারের কাছে। নারায়ণগঞ্জের কুমুলী ইউনিয়নের মৌচাষি দলের প্রধান মো: সেলিম জানান, উন্নত প্রশিক্ষণ আর সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মধু সংগ্রহের কাজে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
মৌ-শ্রমিক মো: বাদল হোসেন জানান, মধু সংগ্রহে সুপার চেম্বার, বুরট, নিউক্লিয়াস নামের বাক্স ব্যবহার করা হয়। বাক্সগুলো সরিষা খেতের কাছে রাখলে মৌমাছিরা মধু এনে বাক্সে জমা করে। প্রতিটি বাক্স থেকে তিন-চার কেজি মধু পাওয়া যায়। সপ্তাহে একদিন মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতি কেজি মধু পাইকারি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিটি খামারে তিন থেকে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকেরা মাসিক পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন পান।
মানিকগঞ্জ থেকে এই শীতে প্রায় কয়েক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট মৌচাষিরা। সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের কাজ আরো বৃহৎ পরিসরে করতে পারলে এটি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মৌচাষিরা মনে করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: আলীমুজ্জামান মিয়া বলেন, মানিকগঞ্জে এবার ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৮ হাজার টন। সরকার বারি-১৪ জাতের বীজ সরবরাহ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। জেলায় ৩৫ টন মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মৌচাষিদের আশা, ফলন প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা? কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের ২৫ দিন পর উদ্ধার যুবকের লাশ উদ্ধার ভুয়া সনদ সিন্ডিকেট : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ ঢাকার পয়োবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি

সকল