১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গোলাপ গ্রাম

-

সাভারের বেরুলিয়া ইউনিয়ন এমনিতেই সৌন্দর্যে টইটম্বুর। বিস্তীর্ণ জলরাশি আর শীতের শিশিরের সাথে মিশে আছে নানা জাতের গোলাপ ফুলের সৌন্দর্যও। গোলাপ চাষের েেত্র এ জায়গাটি বিখ্যাত। এমন একটা বাড়ি হয়তো পাওয়া যাবে না, যাদের একটা হলেও গোলাপ বাগান নেই। পিচঢালা সরু রাস্তার দু’পাশে বাতাসের তালে নেচে ওঠা গোলাপ বাগান অপূর্ব দেখায়। ঘরে বসে জানালা দিয়েও উপভোগ করা যায় সে সৌন্দর্য। যেন স্বপ্নে দেখা স্বর্গের কোনো নিকুঞ্জ। যোজন যোজন গোলাপের সৌন্দর্য দেখে মনটা মুহূর্তেই হারিয়ে যায় মুগ্ধতার আবেশে। ফুলের গায়ে জমে থাকা বর্ষার পানি বা শীতের শিশির কণা আলোড়িত করে দর্শকহৃদয়।
গোলাপচাষি নুরুদ্দীনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। ভালো ফলন আর যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গ্রামটিতে। সাভার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, সামাইর, সাদাল্লাপুর ও শ্যামপুর এলাকায়। প্রায় দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ করে আসছেন।
সাভারের মাটি ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। সাধারণত মিলন, মেরেন্ডি, লিঙ্কন ও সাদা জাতের গোলাপের উৎপাদন অনেক ভালো হলেও লাভজনক হওয়ায় মেরেন্ডি জাতের গোলাপই চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। গোলাপ সারা বছর চাষ হলেও ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভালো ফলন হয়।
আর্থিক লাভের কথা জানাতে গিয়ে নুরুদ্দিন বলেন, ‘গোলাপচাষ একটি নিশ্চিত লাভের ব্যবসা। এতে ঝুঁঁকি থাকে খুব কম। কারণ, একবার চারা রোপণ করলে ২৫ বছর নিশ্চিন্তে ফলন পাওয়া যায়। একদিন বাজারে গোলাপের দাম কম পেলেও পরে তা পুষিয়ে নেয়া যায়; যা অন্য কোনো সবজি চাষে এমন সুবিধা পান না কৃষকেরা। এ ছাড়া বিক্রি করতেও কোনো ঝামেলা নেই। বাড়ির কাছে ফুলের বাজারগুলোতে পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। ফুলের দাম সবচেয়ে বেশি থাকে ভ্যালেন্টাইন ডে’তে। এ সময় বান্ডিলপ্রতি বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। এরপর পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন, বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বান্ডিল বিক্রি হয়। তবে অফ সিজনে বান্ডিল বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এ জন্য অনেক কৃষক বিভিন্ন দিবসকে টার্গেট করে ফুলের চাষ বেশি করেন।
গাছ ঝোপালো হয়ে গেলে ছেঁটে দেয়া হয়। এতে ফুলের ফলন বেড়ে যায় দ্বিগুণ। দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল কাটা, ফুল বাছাই, ফুল ভেজানো, ফুল বাঁধাÑ সব কাজ সন্ধ্যার আগেই শেষ করেন। সন্ধ্যার পর আর ভোরে জমে মোস্তাপাড়া, আকরাইন ও শ্যামপুর ফুলবাজার। বিরুলিয়া ফুলচাষি সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির জানান, প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজারগুলোতে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরো ভূমিকা রাখে, তা হলে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হবে বাজারগুলোতে। গোলাপের গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভিড় জমান গ্রামের গোলাপবাগান দেখতে।


আরো সংবাদ



premium cement