২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শহীদ সমাধিস্থল কোল্লাপাথর

-

গত ঈদুল আজহার ছুটিতে আমরা কয়েকজন ঘুরতে গিয়েছিলাম একটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাধীন পেট্রোবাংলার নিকটবর্তী ভারতীয় সীমান্তে সবুজে সমারোহে পরিবেষ্টিত কয়েকজন বীরপ্রতীক, বীরউত্তম, বীরবিক্রমসহ ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল কোল্লাপাথরে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কসবা, সালদা নদীসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের এখানে দাফন করা হয়েছে।
৫০ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে একটি উঁচু স্থানে সারিবদ্ধভাবে দাফন করা হয়েছে। চারদিকে গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ এবং ইটের ছোট ছোট ওয়ালের সাথে গ্রিলের বাউন্ডারি করা। সামনে দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য উন্মুুক্ত একটি সিঁড়ি করা গেট। গেটটি সবসময় খোলা থাকে এবং প্রবেশের জন্য কোনো মূল্যের প্রয়োজন হয় না। যখন যার ইচ্ছা হয়, তখন সে সারিবদ্ধ শহীদদের সমাধিস্থলে উঠতে পারে এবং মনের মতো করে ঘুরেফিরে প্রতিটি শহীদ সমাধির নেমপ্লেটে নামঠিকানা পড়তে পারে ও কে কোন অঞ্চলের ছিলেন তা জানতে পারে। তবে ওই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার কোনো উপকরণ বা কোনো পরিপূর্ণ ইতিহাস সংরক্ষণ নেই। সমাধিস্থলের উঠার গেটের সামনে একটি বড় আকারের সাইনবোর্ডে শহীদদের নামের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা দেয়া রয়েছে। সাইনবোর্ডের দক্ষিণ পাশ থেকে সারিবদ্ধভাবে শহীদদের দাফন করা হয়েছে। সমাধিস্থলের সামনে রয়েছে সুন্দর একটি মাঠÑ যেখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থীরা তাদের ব্যবহৃত যানবাহন রাখেন। এখানে যানবাহন রাখলে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মতো কোনো ফি বা ভাড়া দিতে হয় না। যে যার ইচ্ছামতো গাড়ি পার্কিং করছে। মাঠের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরপাড়ে সুন্দর একটি শান বাঁধানো ঘাট আছে। এই ঘাটের সিঁড়িতে বসে ক্লান্ত দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নেয় এবং হাত-মুখ পরিষ্কার করে। কেউ কেউ আবার প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে ছবি তুলে স্মৃতির পাতায় জমিয়ে রাখার জন্য। মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে
কোল্লাপাথরের প্রতিষ্ঠাতা ও সংরক্ষণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ করিমের বসতবাড়ি। মাঠের পূর্বপাশে জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঁধাই করা কিছু ছবি। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজের পাশে রয়েছে মুসলমানদের নামাজের জন্য সুন্দর একটি মসজিদ এবং উত্তর পাশে রয়েছে দোকানপাট। দোকানপাট পার হলেই বিশাল বনভূমি। সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দাঁড়িয়ে আছে। সারিবদ্ধ গাছের বাগানের মধ্যে উঁচু-নিচু টিলা ও ছোট পাহাড় বেয়ে সামান্য একটু উত্তর দিকে অগ্রসর হলে বাংলা-ভারতের সীমানা নির্ধারণী পিলার। সব মিলিয়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো কোল্লাপাথর।
সরকার উদ্যোগ নিলে কোল্লাপাথর হতে পারে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পর্যটনকেন্দ্র। এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘর স্থাপন করে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা যায় ও নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে গবেষণা করে তাদের দেশপ্রেমের পরিচয় পাবে এবং তারা নিজেরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।
মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিয়ে কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থলকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করলে এবং বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে যথাযথভাবে প্রচার করলে শুধু দেশে নয়; আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করতে পারবে। বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল পরিদর্শনে আসবে এবং দেশমাতৃকা রক্ষার জন্য জীবন দানকারীদের নিয়ে গবেষণা করবে। এতে কোল্লাপাথর হতে পারে বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র।
তাই দ্রুত কোল্লাপাথরের শহীদ সমাধিস্থল এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সংরক্ষণের দায়দায়িত্ব সরকার নিলে এবং ওই স্থানটিকে নিয়ন্ত্রণ করলে শহীদ সমাধি স্থানটি দীর্ঘ দিন ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থলের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ করিম। তিনি বলেন, বর্তমানে দর্শনার্থীরা যার যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে আসা-যাওয়া করে। অনেক সময় দুষ্ট প্রকৃতির কিছু লোক এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং শহীদ সমাধিস্থলসহ অন্যান্য স্থাপনার ক্ষতিসাধন করে। এতে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না এবং তিনি নিজেও কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না। তাই সরকারের কাছে আবেদন, সরকার যেন কোল্লাপাথরের দায়দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিকে হেফাজত করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবদুল করিম তার নিজের পারিবারিক জায়গায় এবং পারিবারিক কবরস্থানে ৫০ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করে শহীদ সমাধিস্থলে রূপান্তর করে যুদ্ধকালীন সময় থেকে শুরু করে আজ অবধি সংরক্ষণ করে আসছেন।
বুড়িচং, কুমিল্লা


আরো সংবাদ



premium cement

সকল