২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আহ! শীতের পিঠা

-

মনা ছোট বাবুর তো পরীক্ষা শেষ, আসবি নাকি তোরা বেড়াতে, কাল। ওমেরারা কিন্তু এসেছে, থাকবে দু-তিন দিন।
মা সেই ছোটবেলা থেকেই মনা বলে ডাকে আসমাকে। বেড়াতে যাবে আরো কিছু দিন পর। কিন্তু ওমেরা আসার কথা শুনে নিজেরও ইচ্ছে করছে আর ছোট মেয়ে প্রিয়ন্তি তো শুনলে এক্ষনি যেতে চাইবে। মায়ের সাথে বাকি কথা বলছে আর ভাবছে কী করবে। ‘আচ্ছা মা, ভেবে আমি জানাচ্ছি’ বলেই মোবাইল রাখে। ওমেরা তাদের রাজকুমারী, সাত বছর পর ছোট ভাই অনয় আর সুম্মির কোল আলো করেছে ওমেরা। প্রিয়ন্তিকে ওমেরা যাওয়ার কথাটা বলতেই সে সোফায় বসা থেকে লাফিয়ে ওঠে।
...মা চলো, আমরা আজই যাই, এক্ষনি যাই।
৩০ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয় আসমা, প্রিয়ন্তি আর অবন্তি। শ্রাবন্তি আর প্রিতমকে কল করে জানিয়ে দেয়, ওরা দুই দিনের জন্য মায়ের বাসায় যাচ্ছে।
যে কথা সেই কাজ। ঘণ্টাখানেকের মাথায় মায়ের বাসায় আসমা দুই মেয়েকে নিয়ে। সারা দিন হইচই-আনন্দ। পরিবারের সবাই এক হলে ঘরে বানানো খাবার যেমন আনন্দের, তেমনি বাইরের খাবার। হেমন্তের এই অল্প শীতে নতুন ধানের পিঠা, আহা! জিবে আসে পানি। শহরে তো সারা বছরই পিঠা পাওয়া যায়। কিন্তু এ সময়ের পিঠার স্বাদ একেবারেই আলাদা।
সন্ধ্যার পরপরই আসমা আর সুম্মি বের হয়, উদ্দেশ্য পিঠা খাওয়া। রাস্তার পাশে অনেক পিঠার দোকান, বেশির ভাগ হলো চিতই পিঠার, কিন্তু ওরা খুঁজছে ভাপা পিঠা। এক পথচারী মহিলা ওদের ভাপা পিঠার দোকান দেখিয়ে দেয়। ওরা সেখানেই যায়। জায়গাটা সাভার রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড থেকে জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটি যাওয়ার পথে। ছোট্ট একটা ছাউনি মাথার ওপর, চার পাশে চারটি মোটা বাঁশের খুঁটি। ভেতরে মাটির চুলার আগুন দেখা যায়। কাছে গিয়ে পিঠার কথা জিজ্ঞেস করে। তারা চিতই আর ভাপা পিঠা বানাচ্ছে।
খাবেন, না নিয়ে যাবেন।
খাবো, নিয়েও যাবো।
বসেন।
ছাউনির পাশে দু’টি কাঠের বেঞ্চি, আর দু’টি প্লাস্টিকের চেয়ার। দুই চেয়ারে দু’জন পিঠাভক্ত বসে খাচ্ছেন। দুই বেঞ্চিতে দুইজন। আসমা দু’জনকে এক বেঞ্চিতে বসতে বলে নিজেরা এই বেঞ্চিতে বসে। তিনটি মাটির চুলা, দু’টিতে চিতই পিঠা, একটিতে ভাপা পিঠা। ভাপা পিঠা মাটির ছোট পাত্রে ভরে দিচ্ছে ৪০-৪২ বছর বয়সী এক পুরুষ, চিতই পিঠা খোলায় দিচ্ছে ২৫-২৬ বছর বয়সী এক যুবক। সবাইকে পিঠা দিচ্ছে ২০-২২ বছর বয়সী একটি মেয়ে। এই ফাঁকে কলসি ভরে পানি দিয়ে যায় ৩৫ বছর বয়সী এক মহিলা। ভাপা পিঠার চুলা একটা হলেও একসাথে চারটি পিঠা দেয়া যায়। পিঠায় ভাপ দেয়ার খাঁজ এমনই। ১০টা ভাপা আর ১০টা চিতই প্যাকেট করার কথা বলা হয়। সুম্মি আর আসমা বসে খাবে বলে কিছু পিঠার কথা বলে। পিঠা তৈরি হচ্ছে, প্যাকেট ভরছে, খাওয়াও চলছে। আজ চাঁদনী রাত। সন্ধ্যার চাঁদ আকাশে। মাত্র দুই দিন পরই পূর্ণিমা। অসাধারণ এক দৃশ্য। মনে হচ্ছে, সেই গ্রামেই আছে ওরা। পাশে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সুম্মি কিছু ছবি তুলে নিজের টাইমলাইনে পোস্ট দেয়। ছবি দেখে কেউ বুঝবে না এটা শহরের। একেবারেই মাটির চুলার আগুন। আসমা কথা বলে ওদের সাথে। ওদের সম্পর্ক কী, কিভাবে পিঠা তৈরি করে এসব।
পিঠা খেয়ে বাকি পিঠা নিয়ে বাসায় আসে আসমা আর সুম্মি। সবাই মিলে গরম গরম পিঠা খায় আর গ্রামের সেই স্মৃতিমাখা শৈশবে সবাই হারায়। প্রিয়ন্তি আর অবন্তি গ্রাম দেখেছে, তবে হেমন্তের এই দিনে নতুন ধানের আগমন, ধান মাড়াই ও নতুন ধানের পিঠার স্বাদ পায়নি। শহরের এই পিঠার মাঝে ওরা গ্রামকে খুঁজে নেয়। বলে এসেছে, কাল আবার আসবে পিঠা নিতে।


আরো সংবাদ



premium cement