২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক মুঠো জীবন : জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

নোয়াখালীর গ্রাম। বাড়ির নাম ডাক্তার বাড়ি। একলা নিরিবিলি বাড়িতে ঢুকলে প্রথমেই বাড়ির বিশালতা দেখে যে কারোই চোখও বিস্ফারিত হয়ে ওঠে। ১৯৮৬ সালে এ বাড়িতে আমার জন্ম। আব্বা বিদেশ থেকে তার প্রথম ছেলের নাম পাঠালেন চিঠিতে করে। নাম রাখা হলো আমার। ডর-ভয়ের কারণে আব্বার সাথে আমার জন্মান্তরের এক অদৃশ্য দূরত্ব। তবুও তিনি আমার নাম ধরে ডাকলে ওই ডাকটি আমার কাছে পৃথিবীর মধুরতর ডাক মনে হয়। আহা তৃপ্তি। এত তৃপ্তির মূল্য কত, কে জানে!
ধুলাচ্ছন্ন আমাদের টগবগে উঠোন। চৈত্রের দিন শেষে উঠোনে শুকনো পাতা জমে। রাতে চান্নির আলো পড়ে। তখন উঠোনটাকে উঠোন মনে হয় না, মনে হয় কবিতার এক সাজানো শহর।
এ বাড়ির প্রথম সন্তান আমি। দোলনায় দোল খাওয়া সেই দুষ্ট বালক, যে একসময় বারান্দার জানালা দিয়ে গেটের দিকে ভীতু চোখে তাকিয়ে থাকত গৃহশিক্ষকের আগমনের পথপানে। নিথর দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে ঝাঁপ দিত বাড়ির পেছনের লম্বা পুকুরে। সেকি ডুব আর ডুব।
বাড়িতে একদা টিয়া পুষতাম। ছোট্ট খাঁচায় বন্দী টিয়া। টিয়ারা নাকি কথা বলে! টিয়াকে আমি কথা শেখাতাম। টিয়া কথা বলত না। একদিন সকালে দেখি টিয়া খাঁচায় মরে পড়ে আছে। বুকটা ব্যথায় ভেঙে গেল। মৃত্যু কত সহজ-সরল। আমিও নাকি সহজ-সরল। লোকে বলে। জটিলতার এই পৃথিবীতে আমাকে সহজ-সরল ভাবার কী এমন অর্থ হয় বুঝি না। বুঝতে ইচ্ছা করে আজকাল।
এই বাড়িতে এখনো হাঁস-মুরগি পালা হয়। ভোরে আমার মায়ের পোষা রাতা মোরগ ডাকে। রোজ ভোরে আব্বা দা-কোদাল নিয়ে তার সবজি বাগানে যান মাটি কোপাতে।
একটুখানি হাওয়া এলে পুকুরপাড়ের নারকেলের পাতা সরসর করে। মান্দার গাছে উড়ে এসে দোয়েল পাখি বসে। কল চাপলে গলগল করে পানি পড়ে। গেলাসে করে সে পানি খেলে পরাণটা শীতল হয়ে যায়।
দুপুরবেলা বাড়িতে গাছের ছায়া পড়ে। হায়, রসইঘরে ঢেঁকিটা এখন আর নেই। কাঠের মইটি একদিন ঠাস করে ভেঙে গেল। আব্বা নতুন লোহার মই কিনেছেন। এই তো কয়েকদিন আগে। দামও নাকি ম্যালা ছিল।
গরম দুপুরে সিলিংফ্যান ছেড়ে দিয়ে হাওয়া খাই। মা কাচের বাটিতে করে নাশতা জাতীয় কোনো খাবার সামনে আনলে সেটা মুখে দেয়ার আগে মোবাইলে ছবি তুলে রাখি। ডিফ ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম খাই। ভোরে মসজিদ থেকে আজানের সুর বাজলে ঘুম ছেড়ে অজু করে আব্বার সাথে নামাজে যাই।
এই বাড়িতে নিরালা গভীর রাতে উত্তর পাশের রুমটিতে আমি অনেক বছর ধরে পুরনো নিয়মে খাতায় নতুন নতুন গল্প লিখি। গল্প লিখতে লিখতে রাত বাড়লে চোখে ঘুম নামে। মোবাইলে চার্জ থাকুক আর না থাকুক, বিছানায় গা হেলানোর আগে মাইক্রোওভেনের ওপরের ইলেকট্রিক বোর্ডের সুইচে মোবাইল চার্জ দিয়ে রাখি। সকালে দেখি চার্জ ১০০ পার্সেন্ট। পরিপূর্ণ চার্জ দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠে, ফেসবুক চালাতে পারব বলে।
এই তো আমার একখণ্ড যাপিত জীবন। বড়ই সুন্দর ঝুরঝুরে নির্ভেজাল সে জীবন। এই জীবনের মালিক হয়ে ভাবিÑ আমি ধন্য। আলহামদুলিল্লাহ।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।


আরো সংবাদ



premium cement
পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় নদীতে ৪ মোটরসাইকেল ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল