২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ি

-

‘ও কি গাড়িয়াল ভাই, কত রবো আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে...’গ্রাম-বাংলা সেই চিরচেনা গান এখন আর শোনা যায় না। গ্রাম-বাংলার আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে চলা ঐতিহ্যবাহী সেই গরুর গাড়ি আর দেখা যায় না। কালের বির্বতনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি বহন করে!
অনুমান করা যাচ্ছে, খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১৫০০ সালের আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন জনপ্রিয় উপন্যাসেও দক্ষিণ আফ্রিকার যাতায়াত ও মাল বহনের উপায় হিসেবে গরুর গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘এইচ রাইডার হ্যাগার্ড’-এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কিং সলোমনস মাইনস’ নামক উপন্যাসেও গরুর গাড়ি সম্বন্ধে বর্ণনা রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাতে রাতে বিশ্রাম নেয়ার সময় বা বিপদে পড়লে তারা প্রায় গরুর গাড়িগুলোকে গোল করে সাজিয়ে এক ধরনের দুর্গ গড়ে তুলে তার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করত। চেঙ্গিস খানের নাতি বাতু খানের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে যে মোঙ্গল আক্রমণ চলে সেখানে তার প্রতিরোধে স্থানীয় অধিবাসীদের দিয়ে গরুর গাড়ির ব্যবহার করা হয়েছিল।
সরেজমিন গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরেও গরুর গাড়ির সন্ধান মেলেনি। তখন গ্রামের এক বয়োজ্যেষ্ঠ লোক থেকে জানা গেল, আগের দিনে গ্রামে চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত।
গ্রাম-বাংলায় গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না। এ ছাড়া মালামাল পরিবহনের একমাত্র বাহন ছিল এটি। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্র আবিষ্কারের কারণে নানা গাড়ির ভিড়ে গরুর গাড়ির প্রচলন নেই।
এ ব্যাপারে এক শিক্ষক জানান, রিকশা বা ঠেলাগাড়ির মতো গরুর গাড়িও ছিল একটি পরিবেশবান্ধব যান। এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ছাড়া চলা বাহন, নেই কোনো শব্দদূষণও। গরুর গাড়ি ধীর গতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে না। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে। গরুর গাড়ি সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু বইয়ে পাবে, কিন্তু বাস্তবে আর দেখা যাবে না।
গলাচিপা, পটুয়াখালী।


আরো সংবাদ



premium cement