২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একখণ্ড জমি ও জলিল স্যার

চারাগল্প
-

হিমেল না?
জি।
আমাকে চিনতে পারছ ?
আমি হতভম্ব। লোকটির আপাদমস্তক তাকালাম। রোগা শরীর। পরনে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি। চোখে কালো ফ্রেমের ভারী চশমা। মুখে সাদা দাড়ি। মাথায় উষ্কুখুষ্কু এলোমেলো চুল। দেখেই বোঝা যায় চুলে কত দিন বারবারের হাতের আদর পড়েনি। বগলের নিচে ছোট একটি পুঁটলি। চিনতে পারলাম না। বললাম, সরি।
লোকটা ডান হাত দিয়ে চোখের চশমাটা খুললেন। তার পর পাঞ্জাবির কণা দিয়ে চোখের পানি মুছলেন। আবারো বললেন, চিনতে পারছ না?
আমি এবার তীক্ষè দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকালাম। তাকিয়েই চমকে উঠলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, জলিল স্যার, না?
লোকটি এবার ছোট শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বললেন, হ্যাঁ হিমেল। আমি তোমার জলিল স্যার।
আমি স্যারকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। ঠিক কী ভাষায় সান্ত্বনা দেবো, ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। কারণ স্যারকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই।
জলিল স্যার।
তিনি ছিলেন আমার প্রিয় স্যারদের একজন। হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি আমাকে গণিত আর ইংরেজি পড়াতেন। আমাকে খুব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। লেখাপড়ায় উৎসাহ দিতেন।
পাঁচ শতক জমি নিয়ে স্যারের চাচাতো ভাইদের সাথে স্যারদের একটু লাগাবাজা ছিল। তখন ছিল বর্ষাকাল। জমিনে ধান লাগানোর মওসুম। স্যারের ছোট ভাই বিতর্কিত সেই পাঁচ শতক জমিনে ধান লাগিয়ে দিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন তার চাচাতো ভাইয়েরা। তারা জমিনে গিয়ে ধানের চারা তুলে ফেললেন। শুরু হলো দু’পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি, ধস্তাধস্তি, মারামারি। তার পর আকস্মিক স্যারের ছোট ভাইয়ের কোঁদালের একটা কোপ লেগে গেল তার চাচাতো ভাইয়ের গলায়। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন। সেই মামলায় স্যারদের পরিবারের সবাই মার্ডার মামলার আসামি হলেন। মামলা চালাতে গিয়ে স্যাররা তাদের সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করলেন। ভিটেমাটি বিক্রি করলেন। তবুও শেষ রক্ষা পেলেন না। স্যার ও তার ছোট ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলো।
আমি অফিস থেকে বের হয়ে বাস ধরব বলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। তখনই স্যারের সাথে দেখা। স্যার রোগার মতো হেঁটে হেঁটে আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি হিমেল না?
জি।
আমি স্যারকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভাবতে লাগলাম, হায় রে লোভ! পাঁচ শতক জমির জন্য আজ কী পরিণতিই না হলো স্যারের জীবনে! পাঁচ শতক জমির জন্য পাঁচ বিঘা জমি গেল, বাড়ি গেল, জীবনটা ধ্বংস হলো। ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তেই বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘশ্বাস!
আস্তে করে বললাম, স্যার, জেল থেকে কবে বের হয়েছেন?
স্যার বললেন, আজই।
এখন কোথায় যাবেন?
জানি না।
আমার সাথে বাসায় চলুন।
তুমি এখন কী করো, হিমেল?
ব্যাংকে চাকরি করি।
খুব খুশি হলাম। তুমি বাসায় যাও।
আপনি?
আমার কথা ভেবো না। থাকার মতো ঠিক কোথাও না কোথাও একটু জায়গা পেয়ে যাবÑ বলেই স্যার পুঁটলিটা বগলের নিচে ঢুকিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে দিলেন।
আমি ফ্যাল ফ্যাল চোখে স্যারের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’ রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায় ইরান নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরাইলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ

সকল