২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রকৃতিঘেরা বোটানিক্যাল গার্ডেন

-

সবুজ প্রকৃতি কিংবা গভীর অরণ্য অথবা পাখি ডাকা ছায়াঘেরা নির্মল পরিবেশ বলতে যা বুঝায়, তার সব কিছুই রয়েছে রাজধানী ঢাকার মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। কোথাও ঘন বন-জঙ্গল কোথাও গভীর অরণ্যে, আবার কোথাও গ্রামীণ জীবনের মনোমুগ্ধকর আবেশে একটু হলেও স্বস্তি এনে দেয়। মিরপর বোটানিক্যাল গার্ডেন যেটি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান নামেও পরিচিত। রাজধানী ঢাকার মিরপুরে চিড়িয়াখানার পাশেই অবস্থিত নয়নাভিরাম উদ্যানটি ১৯৬১ সালে ২০৮ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রকৃতিপ্রেমীদের আস্থার ঠিকানা এ উদ্যান। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী-বিদেশী উদ্ভিদ সংরক্ষণ, শিক্ষার্থী ও গবেষণাকারীদের জন্য কাজের সৃষ্টি এবং দর্শনার্থীদের বিরল সংগ্রহ, বৈচিত্র্য ও শোভাবর্ধনই যার মূল উদ্দেশ্য। উদ্যানের উদ্ভিদ বাগানগুলো ৫৭টি সেকশন সংবলিত।
তথ্য মতে, প্রতি বছর এই উদ্যানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বৃক্ষপ্রেমী ও গাছ বিশেষজ্ঞসহ প্রায় ২২ লাখ মানুষ পরিদর্শন করে থাকে। এটিই দেশের বৃহত্তম উদ্ভিদ উদ্যান। এই উদ্যানের উল্লেখযোগ্য বাগানগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, পাইন, ফল বাগান, বাঁশ বাগান, পাম, ঔষধি, বেত, মুর্তা, শাল ও জবা বাগান। এ ছাড়া পদ্মা পুকুর, শাপলা পুকুর, ক্যাকটাস হাউজ, অর্কিড হাউজ, ইন্ডোর গাছের জন্য নেট হাউজ, কৃত্রিম লেক, অচিন বৃক্ষ ও শক্তিসাগর প্রভৃতি রয়েছে। সব ঋতুতেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রকৃতি মানুষকে কাছে টানে। সবুজ পল্লবে, কৃষ্ণচূড়া, হিজল-জারুলে যেন চারদিকে শুধু সুন্দরের পসরা সাজিয়েছে নির্মল প্রকৃতি। চোখে পড়বে কৃত্রিম লেকে সাদা ও লাল শাপলার মায়াবী প্রতিযোগিতা। উদ্যানের প্রবেশের সময় চোখে পড়বে ফুল বাগানে নানা প্রজাতির ফুল, যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
বর্তমানে ১৩৪ উদ্ভিদ পরিবারভুক্ত এক হাজার ১০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে এ উদ্যানে। এগুলোর মধ্যে ৩০৬ প্রজাতির ৩৩ হাজার ৪১৩টি বৃক্ষ, ২০১ প্রজাতির ১৩ হাজার ৯২টি গুল্ম, ৪৪১ প্রজাতির ২০ হাজার ৭৪৬ বিরুৎ ও ৬২ প্রজাতির এক হাজার ১৯০টি লতাজাতীয় গাছ আছে। বৃক্ষ শনাক্ত করার জন্য প্রতিটি গাছের গায়ে নামফলক লাগানো রয়েছে, যাতে সহজেই দর্শনার্থীরা ফলক দেখে বৃক্ষের সাথে পরিচিত হতে পারেন। দেশী-বিদেশী অনেক গাছের নাম জানা যাবে এ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে। জানা যাবে গাছের বৈজ্ঞানিক নামও।
প্রধান ফটক থেকে একটু সামনের দিকে দেখা যায় সারি সারি দেবদারু আর ঝাউবন। আর অস্ট্রেলিয়ার সিলভার ওক, জাকারান্ডা ও ট্যাবে বুইয়া, জাপানের কর্পূর, মালয়েশিয়ার ওয়েল পাম, থাইল্যান্ডের রামবুতাম। চৌরাস্তা থেকে উত্তরের রাস্তা ধরে এগোলে আছে কর্পূর, আগর, ম্যাগনোলিয়া, শ্বেত চন্দন, গিলরিসিডিয়া, ফার্ন কড়ই, তুন, কেশিয়া নড়ুসা, ট্যাবেবুইয়া ও চেরি প্রভৃতি গাছ। এখানে ক্যাকটাসের এক বিশাল সংগ্রহ চোখে পড়বে। আরো দেখা যায় ওল্ডম্যান, ফিশহুক ক্যাকটাস, ম্যামিলারিয়া, ক্ষেপালিয়া, মেলো ক্যাকটাস, গোল্ডেন ব্যারেল, সিরিয়াম হেক্সোজেনাস, র্যাটস টেইল, আপাংসিয়া সিডাম, হাওয়ার্থিয়া, পিকটোরিয়া রাখা হয়েছে স্বচ্ছ কাচঘরে। উদ্যানের গোলাপ বাগানের ভেতর শান বাঁধানো জলাধারে আছে ব্রাজিলের জলজ উদ্ভিদ আমাজন লিলি। অফিস আঙিনা ঘেঁষে আছে নেট হাউজ ও নার্সারি। উদ্যানের অফিস এলাকার পশ্চিম পাশে অর্কিড হাউজ। সাথেই রয়েছে অ্যামহাসটিয়া অ্যাভোকাডো, বেগুনি এলামান্ডা, থাইল্যান্ডের গন্ধরাজ। গর্জন বাগানের উত্তর পাশে ভেষজ উদ্ভিদ বাগান। কালো মেঘ, তুলসী, আতমোরা, শতমূলী, পুনর্নভা, থানকুনি, কুমারি লতা, বাসক, বচসহ আছে হরেক ভেষজ উদ্ভিদের সংগ্রহ। বোটানিক্যাল গার্ডেনের মাঝ বরাবর রয়েছে একটি বিশাল বাঁশ বাগান। এখানে রয়েছে দেশী-বিদেশী ২২ প্রজাতির বাঁশ ও ঘন বেত গাছ। বাঁশ বাগানে একটু দাঁড়িয়ে অনেকেই গ্রামীণ আবহ খুঁজে পাবেন। মন-প্রাণ শীতল হবে বাঁশ বাগানের স্নিগ্ধ হাওয়ায়। কোনো কোনো জায়গায় ঘন জঙ্গল আর উঁচু উঁচু গাছের কারণে সূর্যের আলো দেখা যায় না। এমন দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে পৃথিবীর কোনো বিখ্যাত ম্যানগ্রোব এলাকায় অবস্থান করছেন। বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৃত্রিম লেকে রয়েছে শাপলা পুকুর। বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা বোটানিক্যাল গার্ডেনের শোভা যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি দর্শনার্থীদের জন্য এ যেন হারিয়ে ফেলা গ্রামীণ জীবন। এখানে রয়েছে একটি সুবিশাল গোলাপ বাগান। এখানে রয়েছে প্রায় ২০০ প্রজাতির গোলাপ। গোলাপের সৌরভ ও সৌন্দর্য আপনার সৌন্দর্যপিপাসু মনকে ভরিয়ে রাখবে। পাশেই রয়েছে সুবিশাল বিনোদন কেন্দ্র। ছেলেমেয়েদের উদ্ভিদ চেনানোর পাশাপাশি প্রকৃতির ভেতরে একটু পরিচিত বিনোদনও দিতে পারবেন। রয়েছে উঁচু-নিচু রাস্তা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনাথী আসেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। কেউ সহপাঠী আবার কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আসেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য পূর্বানুমতি নেয়া লাগে।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেন একদিকে যেমন একটি নির্মল বিনোদন কেন্দ্র, অন্য দিকে ছোটদের বিভিন্ন গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এখানে যেতে পারেন। বর্তমানে গ্রামেও সব গাছের দেখা মেলা ভার। এখানে যেহেতু গাছ সংরক্ষণ করা হয়, তাই সব ধরনের গাছের দেখা মেলে। আর এসব গাছের সাথে পরিচিত হলে ছেলেমেয়েদের প্রকৃতি বিষয়ক জ্ঞানের পরিধি বেড়ে যাবে। এ ছাড়াও এখানে দেখা মিলবে একেবারে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা নানা ধরনের পাখপাখালি ও জীবজন্তুর। বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক মোল্যা রেজাউল করিম জানান, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটি আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই উদ্যানের সমৃদ্ধির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এসে বুঝতে পারেন শহরের বুকে এ ধরনের উদ্যান পরিবেশের জন্য কতটা নিরাপদ। ঢাকার ভেতরে যে গভীর অরণ্য রয়েছে, তা দেশবাসীকে জানতে হবে; জানাতে হবে। বোটানিক্যাল গার্ডেন সপ্তাহে সাত দিনই খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা। ১০ বছরের নিচের শিশুদের প্রবেশমূল্য ১০ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement
রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি!

সকল