২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সাজ্জাদের কথা : জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

গঙ্গারামপুর বাজারের মিডিয়া গলিতে সেলিম ভাইয়ের অফিস। প্রথমে মানুষ ঠাট্টাবিদ্রƒপ করে বললেও পরে সত্যি সত্যিই মিডিয়া গলির নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেলিম ভাই ডিফেন্স মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার। তার দোকানে বসে আছি। বাজার ভর্তি মানুষ। কেউ যাচ্ছে কেউ আসছে। দেখি একটি মানুষ হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। গালে তার একটা বড়সড় ব্যাগ। দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখেছে। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম হয়তো বাজারে সাহায্য সহযোগিতা চাইতে এসেছে। যেমনটা আসে সবাই। কিন্তু দেখলাম নাহ, আসলে তেমনটা নয়। আমি পেছন পেছন হাঁটলাম খানেকটা, বিষয়টা বোঝার জন্য। এবার জোরে হেঁটে সামনে গিয়ে ছবি তুললাম। আমার ছবি তোলা দেখে উনি হাঁটা থামিয়ে বসে পড়লেন। পরনে তার হাফপ্যান্ট আর গায়ে একটা শর্ট টি-শার্ট। গালের থেকে ব্যাগটা নামিয়ে কোলের ওপর রেখে আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন, সত্যি একদম নিষ্পাপ চাহনি খুঁজে পেলাম। কথা বললাম। ভাইজান আপনার নাম কি? মো: সাজ্জাদ হোসেন। বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে বললেন, ডাঙ্গা, সিংড়া। শুনেই আমার চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। কেননা ডাঙ্গা সিংড়া গঙ্গারামপুর বাজার থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার তো হবেই। বললাম, অত দূর থেকে এই বাজারে এলেন কী করে। গাড়িতে এসেছি কিছুটা আর বাকি পথ এভাবেই হেঁটে। সংসারে সদস্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই সাজ্জাদ বলেন, চার ভাই। আমি সবার ছোট। আব্বা আগে ভ্যান চালাত কিন্তু এখন চালায় না। বয়স হয়ে গেছে তো তাই আর পেরে ওঠে না। অন্য ভাইয়েরা মাঠে কাজ করে। বললাম, অন্য ভাই আপনার মতো হয়েছে কিনা? না আর কেউই এমন বা এমন কোনো সমস্যার শিকার নয়। এ রকম শুধু আমিই, বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো তার। বললাম, ভাই বিয়ে করেছেন? মাথা নেড়ে বললেন হ্যাঁ করেছি। এক ছেলে। সে কি সুস্থ নাকি... বলা শেষ না করতেই তিনি বলেন, না ছেলে আমার মতো ল্যাংড়ালুড়া হয়নি আল্লাহর রহমতে।
আমি বললাম, তা সাজ্জাদ ভাই, ব্যাগে কী আপনার? একটা শিশুসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, মাছ। মা গুঁড়ো মাছ খেতে চেয়েছেন। প্রথমে পলিতার বাজারের উদ্দেশ্যে এসেছিলাম পেলাম না। সবাই বলল, গঙ্গারামপুর গেলে পাওয়া যাবে। তাই চলে এলাম। সাজ্জাত অনেক কিছু শিখিয়ে গেল আমাকে আপনাকে সবাইকে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। হাঁটু আর হাতের তালুতে ভর দিয়ে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরে মায়ের জন্য মাছ কিনতে আসতে পারে আর আমরা সুস্থ সবলেরা মা সামান্য কিছু করতে বললেই চোখ বাঁকা করে এড়িয়ে যাই। আমি বললাম, ঠিক আছে ভাই। বেশি সময় থাকার দরকার নেই। মাছ পচে যাবে। যান বাড়ি যান। ব্যাগটা দাঁতে কামড়িয়ে আবার হামাগুড়ি দেয়া শুরু করলেন। আমি তাকিয়ে রইলাম যতদূর দেখা যায়। মাকে যারা এমনটা ভালোবাসে। হ্যাঁ, সাজ্জাদের মতো মাকে ভালোবাসা মানুষদের দেখে শেখার আছে অনেক কিছু।
শালিখা, মাগুরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’

সকল