১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৃদ্ধাশ্রম : চারাগল্প

-

প্রিয় দীদা,
জানি তুমি ভালো নেই। তোমার মন এখনো তোমার বাড়িতে পড়ে আছে। তুমি এখনো চিন্তিত! তোমার সন্তানেরা কেমন আছে? কে কি করছে? তোমার নাতিপুতিরা কেমন আছে? যে বড্ড গরম পড়েছে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েনি তো! আমি জানি তুমি সব সময় তোমার সন্তানদের নিয়েই ভাবো। তারা আজ বিলাসবহুল বাড়িতে আছে নিজ নিজ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। তোমার মনে আছে? তুমি এক সময় গল্প করেছিলে; বিরাট বড় দালান তোমার বড় ছেলের। ছোট ছেলে বড় অফিসার! মেজোটাও খুব নামীদামি ব্যবসায়ী। সবারই নিজস্ব বাড়ি আছে, গাড়ি আছে! অথচ ওই বিরাট বিরাট কংক্রিটের বাড়িতে তোমাকে রাখার জায়গা তারা করতে পারেনি! তুমি আমার নিজের দাদী না হলেও আমি কিন্তু তোমাকে নিজের দাদীর মতোই ভালোবাসতাম। মা বলতেন, আমার ছোট বেলায় তোর দাদী মারা গেছেন। তবে তোকে খুবই ভালোবাসতেন। গোসল করিয়ে দিতেন, কাপড় পরিয়ে দিতেন। তোকে সব সময় নিজের চোখের কাছে রাখতেন। আমি ভাবি, আমার দাদী বেঁচে থাকলে তাকে কখনো বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে দিতাম না। যেভাবে তোমাকে তোমার সন্তানেরা রেখে গেছে। কিন্তু বড্ড আশ্চর্য হই তাদের প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র নালিশ নেই! একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সুবাদে তোমার সাথে দেখা হয় আমার। জানিনা কেন তোমাকে দেখেই আমার নিজের দাদীর কথা মনে পড়ে ছিল। তার পর থেকে আমি যখনই সময় পেতাম, তোমার সাথে দেখা করার জন্য বৃদ্ধাশ্রমে যেতাম। মা দিবসের কথা তোমার মনে আছে দীদা? তুমি আমার দাদীর মতো তাই আমি তোমায় দীদা বলেই ডাকতাম। মা দিবসে তোমার স্বনামধন্য সন্তানেরা তোমায় দেখতে এসেছিল। তুমি তাদের কাছে একটুও নালিশ করোনি! অশ্রু লুকিয়ে বলেছ ‘বেশ ভালো আছি’! আমি কিন্তু তোমায় প্রশ্ন করেছিলাম, তুমি কেন এই আশ্রমে একা থাকো? ধনী সন্তানদের বাসায় কেন যাও না? আমার মনে আছে তুমি বলেছিলে; আমি সাথে থাকলে আমার সন্তানদের পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তারা সুখে থাক। একজন মা তো এটিই চায় নিজের সন্তান সুখে-শান্তিতে থাকুক। খুব অদ্ভূত এই মায়ের মন। নিজে কষ্ট করবে, অথচ সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। আর এই সন্তান বড় হয়ে ভুলে যায় নিজের বাবা-মাকেই। তোমার লাশ দেখতে আজ সবাই এসেছে। তাদের চোখে মায়াকান্নার স্পষ্ট ছাপ! আজ কয়েক মিনিট তারা মায়াকান্নায় চোখ ভেজাবে; কিন্তু পরে ঠিকই ভুলে যাবে তাদের অবলা মাকে! তোমার মৃত্যু তাদের জন্য একটি সুখবর এনেছে বটে! বৃদ্ধাশ্রমের অতিরিক্ত খরচটা অন্তত আর দেয়া লাগবে না তাদের। প্রার্থনা রইল, দীদা ভালো থেকো তুমি ওপারে।
প্রভাতফেরি ফাউন্ডেশন


আরো সংবাদ



premium cement