২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বন্ধু : জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

ঢাকা থেকে ফিরছি। আন্তঃনগর সুন্দরবন ট্রেন। ঢাকা শহরের জ্যাম শুরু হওয়ার আগেই রনি ভাইয়ের বাসা থেকে বের হয়ে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। সিট নম্বর মিলিয়ে জানালার পাশে সিট পড়েছে। তিন আসনবিশিষ্ট সিট। বাকি দুইজন কেমন হবে সেটি ভাবলাম একটুখানি। যদি ভালো হয় তা হলে গল্প আর আড্ডায় ভ্রমণটা দারুণ হবে।
আপাতত পাশের আসন দুটো ফাঁকা। ট্রেন চলেছে গন্তব্যস্থল কুষ্টিয়ার দিকে। ক্রমেই ঢাকা শহরের মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে চলেছে। বিমানবন্দর কিংবা জয়দেবপুর স্টেশন অতিক্রম করলেও আসন দুটো পূরণ হলো না। অবশেষে টাঙ্গাইল স্টেশন এসে কাক্সিক্ষত পাশের দুইজন যাত্রী পাওয়া গেল। ব্যাগে থাকা আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাস পড়ছি। যাত্রী দুইজন যথারীতি সিটে বসল। একজন মধ্যবয়সী মহিলা, অন্যজন ১৫-১৬ বছরের মেয়ে। সম্পর্কে তারা হয়তো মা ও মেয়ে হবে। মেয়েটি আমার পাশের সিটে বসেছে।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আমাকে বলল, জানালার পাশে বসতে দেবেন? কেন, আমি বললাম। না মানে আমার জানালার পাশে বসতে খুব মন চাচ্ছে। কিছু না বলে চুপ থাকলাম। একটু পর আবার মেয়েটি বলল, ‘আচ্ছা আপনার বন্ধু আছে? ক’টা বন্ধু আছে? আপনি আমার বন্ধু হবেন?’
মেয়েটির আচরণ আর কথাই বেশ বিরক্ত ও সন্দেহ লাগছে। ঢাকা শহরে হাজারো মহিলা প্রতারকচক্র আছে তাদের কেউ হবে না তো! গায়ে পড়ে আলাপ করতে চায়, ব্যাপারটা ধীরে ধীরে সুবিধাজনক মনে হলো না যখন মেয়েটি অনেকটা জোর করেই আমার হাতে দুটো চকবার গুঁজে দিলো। পাশে বসা ভদ্রমহিলা কোনো কথা বলছেন না মাঝে মধ্যে আমার দিকে থাকাচ্ছেন। আমার সন্দেহের তীরটা আরো তীক্ষè হচ্ছে। ট্রেন চলেছে তার আপন গতিতে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশে ট্রেনের বিরতিতে বাইরে থেকে ঘুরে এসে দেখি মেয়েটি আমার সিটে বসে আছে। কিছু বলতে পারলাম না। আবার কথা বলতে শুরু করল, ‘কদিন পর আমার জন্মদিন। আমার সব বন্ধুরা আসবে। আপনিও আসবেন কিন্তু। আচ্ছা, আপনি না বলে তুমি করে বলতে পারি। কারণ আমরা এখন দুইজন বন্ধু।’ কথাগুলো শুনে মেজাজটা বেশ বিগড়ে যাওয়ার উপক্রম। ট্রেন চাটমোহর পার হয়ে এসেছে।
মেয়েটি জানালা দিয়ে মুখ বের করে বিড়বিড় করে কী যেন বলছে। আর এতক্ষণ পর ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন, কিছু একটা বলতে চাই আপনাকে।
তারপর ভদ্রমহিলা বললেন, একটু পরেই আমরা নেমে যাব।
বেশ কিছু দিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে বাস অ্যাক্সিডেন্টে ওর চোখের সামনে ওর দুইজন বান্ধবী মারা গেছে। সেই নার্সারি থেকে ওরা তিনজন একসাথে বেড়ে উঠেছে, পড়েছেও একই স্কুলে। চোখের সামনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণে মেয়েটি আমার এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝে মধ্যে রাতে চিৎকার করে উঠে। ওর আচরণে কিছু মনে করবেন না। একমাত্র মেয়েটিকে নিয়ে বেশ কষ্টে আছি। টাঙ্গাইল থেকে এখন প্রায় সপ্তাহে ডাক্তার দেখাতে আসি। পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে নেমে গেল মেয়েটি ও তার মা। জানালা দিয়ে আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, ডান হাতের মুঠোয় মেয়েটির দেয়া চকবার দু’টি অজান্তে রয়ে গেল।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ


আরো সংবাদ



premium cement